নাসির গ্রুপের অর্থ পাচারের তদন্তে গাফিলতিতে হাইকোর্টের ক্ষোভ
১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০১:৩৭
ঢাকা: নাসির গ্রুপের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার সংক্রান্ত মামলার তদন্ত চার বছর ধরে ফেলে রাখার ঘটনার উষ্মা প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। আগামী চার মাসের মধ্যে এ বিষয়ে তদন্ত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
একইসঙ্গে বিএফআইইউ কেন এত দিনেও তদন্ত শেষ করেনি, সে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করতে বলেছেন। ওই কমিটিকে আগামী ৪০ দিনের মধ্যে তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা আদালতকে অবহিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি আদালত একটি রুলও জারি করেছেন। মামলার আসামিদের কেন খালাস দেওয়া হবে না— রুলে সেটি জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিবকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া এ মামলায় আসামিদেরকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন হাইকোর্ট।
রোববার (৩১ জানুয়ারি) এ সংক্রান্ত মামলার শুনানি শেষে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালতে বিএফআইউ’র পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তানভীর পারভেজ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সারওয়ার হোসেন বাপ্পি। আর নাসির গ্রুপের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মাহবুবুর রহমান কিশোর।
আদেশের বিষয়টি সারাবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পি। তিনি বলেন, আগামী চার মাসের মধ্যে বিএফআইইউকে এ বিষয়ে তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করতে বলেছেন। বিএফআইইউ কেন চার বছরেও তদন্ত করতে পারেনি— সেটি জানার পাশাপাশি দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সেটিও আদালতকে জানাতে বলা হয়েছে।
শুনানিতে আদালত বলেন, ‘অধিকতর তদন্তের জন্য বিএফআইইউকে হাইকোর্ট চার বছর আগে নির্দেশ দিয়েছিলে। কিন্তু এতদিনেও কোনো অগ্রগতি নেই। শুধু চিঠি চালাচালির বিষয়টি দেখতে পাচ্ছি। উচ্চ আদালতের আদেশ প্রতিপালন না করার দায় কার? তদন্ত করে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
নাসির গ্রুপের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার মামলার তদন্ত করতে আরও যে চার মাস সময় আদালত বেঁধে দিয়েছেন, এই সময়ের জন্য মামলার আসামি নাসির গ্রুপের চেয়ারম্যান নাসিরউদ্দিন বিশ্বাসসহ সংশ্লিষ্টদের ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে হাজিরা মওকুফ করেছে হাইকোর্ট।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, প্রায় ৫৬ কোটি টাকা অর্থ পাচারের অভিযোগে ২০১৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি গুলশান থানায় নাসির গ্রুপের চেয়ারম্যান নাসিরউদ্দিন বিশ্বাস ও মো. আলফাজ উদ্দিনসহ (জিএম, আমদানি) ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন না নিয়ে দেশের প্রচলিত আইন ও বিধি লঙ্ঘন করে নাসির গ্রুপের বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কাঁচামাল ও পণ্য আমদানির নামে আন্ডার ইনভয়েসিং করে ৫৬ কোটি ৩১ লাখ ৯ হাজার ৮২ টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। এজাহারে ২০০৯ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত অপরাধ সংঘটনের সময়কাল উল্লেখ করা হয়।
তদন্ত শেষে ২০১৬ সালের ১৩ মার্চ ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা। এতে মামলার আসামিদের অব্যাহতি দেওয়া হয়। কিন্তু ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ ওই চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ না করে মামলাটি অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন। বিশেষ জজ আদালতের এই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করেন নাসির গ্রুপের চেয়ারম্যান।
পরে ২০১৭ সালে বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্ত্তীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ সংক্রান্ত রুল নিষ্পত্তি করে এই অর্থ পাচারের মামলাটি তদন্তের জন্য বিএফআইইউকে নির্দেশ দেন। ওই নির্দেশের পর পেরিয়ে গেছে চার বছর। কিন্তু বিএফআইইউ তদন্ত সম্পন্ন না করায় পুরো মামলা বাতিল চেয়ে গত নভেম্বর মাসে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৬১(ক) ধারায় হাইকোর্টে আবেদন করেন নাসিরউদ্দিনসহ অন্য আসামিরা।
এরপরই আবেদনটি শুনানির জন্য আসে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চে। হাইকোর্ট মামলার অধিকতর তদন্তের অগ্রগতি জানতে চায় বিএফআইউউর কাছে। কিন্ত বিএফআইইউর পক্ষ থেকে মামলার তদন্তের অগ্রগতি বিষয়ে কোনো তথ্য হাইকোর্টকে জানাতে পারেনি।
রোববার আদেশ দেওয়ার আগে এ বিষয়ে বিএফআইউর আইনজীবী তানভীর পারভেজের উদ্দেশে উষ্মা প্রকাশ করে হাইকোর্ট বলেন, ‘বিএফআইইউ কেন উচ্চ আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করল না, এই দায়িত্বহীনতার কী হবে? সর্বশেষ কী অবস্থা, সেটাও তো জানাতে পারলেন না আপনারা!’
নাসিরউদ্দিনের আইনজীবী মাহবুবুর রহমান কিশোর বলেন, উচ্চ আদালতের আদেশের পর চার বছর পেরিয়ে গেলেও বিএফআইইউ তদন্ত শেষ করতে পারেনি। কিন্তু আমাদের নিম্ন আদালতে হাজিরা দিতে হয়। এটা হয়রানি ছাড়া আর কিছুই নয়।
সারাবাংলা/কেআইএফ/টিআর
অর্থ পাচারের মামলা তদন্তে গাফিলতি তদন্তের নির্দেশ নাসির গ্রুপ বিএফআইইউ হাইকোর্টের ক্ষোভ