‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দুর্নীতির ডিপো’— সংসদে সমালোচনা
১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৬:০২
ঢাকা: স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি নিয়ে সংসদে সমালোচনা করেছেন বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যরা। তারা বলেছেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দুর্নীতির ডিপোতে পরিণত হয়েছে। মন্ত্রী আসছে, মন্ত্রী যাচ্ছে কিন্তু দুর্নীতির সিন্ডিকেট বহাল তবিয়তেই থাকছে।’
সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকালে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে একাদশ সংসদের একাদশ অধিবেশনে স্বাস্থ্যখাতের ‘দুর্নীতি’ নিয়ে সমালোচনা করেন বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যরা। ‘শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বিলে’র ওপর আনা সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে এই সমালোচনা শুরু হয়।
বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কি দুর্নীতির ডিপোতে পরিণত হয়নি? স্বাস্থ্য অধিদফতরে ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত মেডিকেল পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে? সেই সময় মন্ত্রী-সচিব বলেছে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয় নাই। এখন সিআইডি বলছে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?’
সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়-মেডিকেল কলেজ স্থাপন করে কি লাভ হবে? যদি তার সুফল সাধারণ মানুষ না পায়। মন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেছেন, যখন করোনা এসেছে, তখন ব্যবস্থা আর অব্যবস্থাপনা কি এসব সম্পর্কে বিশ্ববাসীর কোনো ধারণাই ছিল না। আমিও একমত। এই সম্পর্কে বিশ্ববাসীর কোনো ধারণা ছিল না। কিন্তু ধারণা না থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের মন্ত্রীরা বলেছেন যে, ‘করোনার চেয়ে আমরা অনেক বেশি শক্তিশালী। বিশ্বের যে কোনো দেশের চেয়ে করোনা মোকাবিলায় আমরা অনেক বেশি সক্ষম’। তারা বলেছেন, ‘করোনা সর্দি-কাশির চেয়ে বেশি গুরুতর কোনো অসুস্থতা নয়।’ এসব তারা না জেনেই বলেছিল। আমাদের হাসপাতালে বেড সংখ্যা কত, আমাদের মাস্ক-পিপিই আছে কি না? আমাদের সেন্ট্রাল অক্সিজেন ফ্লো আছে কিনা। আমরা মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিতে পারব কিনা। আমাদের সেই সক্ষমতা আছে কিনা। ডাক্তার-নার্স অপ্রতুল নাকি যথেষ্ট সংখ্যক আছে, এসব কিছু না জেনেই তারা মন্তব্যগুলো করেছিলেন।”
তিনি আরও বলেন, ‘করোনার শুরু থেকে স্বাস্থ্যখাতে একের পর এক কেলেঙ্কারি আমরা দেখেছি। দেখেছি নকল এন-৯৫ মাস্ক। এখন দেখছি নকল এন-৯৫ মাস্ক যে জেএমআই সরবরাহ করেছিল সেই কোম্পানির কাছ থেকেই এখন টিকাদানের জন্য সিরিঞ্জ নেওয়া হচ্ছে। এরপর গ্লাভস-পিপিইর মতো সুরক্ষা সরঞ্জাম কেনা, ওয়েবসাইট বানানো, সেমিনার করতে অবিশ্বাস্য ব্যয়ের মতো ঘটনা এসেছে।’
গত ১২ বছরে স্বাস্থ্যখাতে এক এক করে তিন মন্ত্রী বদল হয়েছেন উল্লেখ করে বিএনপির এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘এবার আমরা প্রথম জানতে পারি স্বাস্থ্য খাতে মিঠু সিন্ডিকেটের কথা। কিন্তু আশ্চর্য হয়ে দেখি মিঠু সিন্ডিকেট এখনও তার জায়গায় রয়ে গেছে। মিঠু সিন্ডিকেটের ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় নাই। সবার সঙ্গে মিঠুর এতই সম্পর্ক। দুর্নীতি কেন কমে না সেটাও কিন্তু ভালো মতো জানি। এই করোনাকালে দুই একটা চুনোপুটিকে বাদ দিয়ে কোন রাঘব বোয়ালকে ধরা হয় নাই। করোনা পরীক্ষা নিয়ে কেলেঙ্কারি ঘটে যাওয়ার পরে দুই ব্যক্তি শাহেদ এবং সাবরিনাকে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। একজন প্রতারক যিনি আদালত কর্তৃক প্রতারক হিসেবে প্রমাণিত হয়েছেন আগেই সেই শাহেদের সাথে কি করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্বয়ং এবং স্বাস্থ্যসচিব উপস্থিত হয়ে করোনার জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করে?’
গণফোরামের মোকাব্বির খান বলেন, ‘বড় বড় প্রকল্পগুলো সাধারণত মন্ত্রিপরিষদ সদস্যরা নীতি-নির্ধারণীতে থাকেন, তারপর এটা পাস হয়। কিন্তু এটা বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকেন আমাদের সচিব সাহেবরা। প্রজেক্ট ডাইরেক্টর সাহেবরা। কিন্তু যারা বাস্তবায়নে থাকেন। তাদের হাত দিয়েই বড় বড় দুর্নীতি হয়। আজ পর্যন্ত একটি নজিরও নাই যে, একজন প্রকল্প পরিচালক বা একজন সচিব; যার দায়িত্বে অবহেলার জন্য দৃষ্টান্তমূলক কোনো শাস্তি হয়েছে। সব দোষ আসে মন্ত্রী, উপমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য বা রাজনীতিবিদদের ওপর। এতো শক্তিশালী আমলাতন্ত্র মনে হয় পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের আমলাতন্ত্র এত শক্তিশালী যে তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে। এই ব্যাপারে আলোচনা হওয়া দরকার। আমলারা যদি অসৎ হয়, প্রকল্প পরিচালক যদি অসৎ হয় যত ভালো সিদ্ধান্তই গ্রহণ করা হোক না কেন আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে যত আলোচনা-সমালোচনা করি, আমলা যদি ভালো না হয় তাহলে ভালোকাজ আদায় করা অত্যন্ত কঠিন।’
সারাবাংলা/এএইচএইচ/এমও
সংসদ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্যখাত স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি