শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা: হাইকোর্টের রায় ১৭ ফেব্রুয়ারি
১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৭:০৫
ঢাকা: গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় ২০০০ সালে বোমা পুঁতে রেখে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলায় আপিলের রায় ঘোষণার জন্য আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি দিন ঠিক করেছেন হাইকোর্ট।
সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামমিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শেষে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জামানের হাইকোর্টের বেঞ্চ এই দিন ধার্য করেন।
সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ রায়ের দিন নির্ধারণ করে আদেশ দেন।
আদেশের বিষয়টি সারাবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. বশির উল্লাহ। তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ১০ আসামির ডেথ রেফারেন্স শুনানি শুরু হওয়ার পরে অব্যাহতভাবে চলছিল। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা এর আগে তাদের যুক্তিতর্ক শেষ করেছেন। আজ (১ ফেব্রুয়ারি) রাষ্ট্রপক্ষ শুনানি শেষে করেছে। দীর্ঘ শুনানি শেষে আদালত আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি রায়ের জন্য দিন ঠিক করেছেন।’
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলায় ফাঁসির রায় অনুমোদনের জন্য নিম্ন আদালত থেকে পাঠানো ডেথ রেফারেন্স ও আসামিপেক্ষের করা আপিল আবেদনের ওপর সোমবার শুনানি সম্পন্ন হওয়ায় আদালত এ রায়ের দিন নির্ধারণ করেন।
শুনানি সম্পন্ন শেষে আদালত বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ভাষার মাসের সম্মানে বাংলায় রায় দেবো।’
এদিন আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিত দেবনাথ ও মো. বশির উল্লাহ, সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল মিজানুর রহমান খান শাহীন ও মো. শাহীন আহমেদ মৃধা।
আসামিপক্ষে ছিলেন এস এম শাহজাহান, মোহাম্মদ আহসান, মো. নাসির উদ্দিন ও রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী অমূল্য কুমার সরকার।
এদিকে শুনানির শেষ দিনে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন আসামিদের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার আরজি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। আমরা বিচারিক আদালতের আদেশ বহাল রাখার আবেদন করেছি। একইসঙ্গে ডেথ রেফারেন্স গ্রহণ করা হোক এবং আসামিদের আবেদন ডিসমিস করে দেওয়া হোক।’
তবে একজন আসামির পক্ষের আইনজীবী এস এম শাহজাহান বলেন, ‘অন্য মামলায় মুফতি আব্দুল হান্নানের দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ভিত্তিতে এই মামলায় সাজা দেওয়ার সুযোগ নেই। তাই আলোচিত আসামি শেখ ফরিদ ওরফে মাওলানা শওকত ওসমান খালাসযোগ্য।’
শুনানি শেষে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০০ সালে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার কোটালীপাড়া জনসভায় অংশ নিতে গিয়েছিলেন। ওই জনসভা স্থলে এই আসামিরা তাকে হত্যার উদ্দেশে বোমা পুঁতে রেখেছিল। পরে মুফতি হান্নান সিলেটে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ওপর বোমা হামলার ঘটনায় আটক হলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ওই জবানবন্দিতে কোটালিপাড়ায় বোমা পুঁতে রাখার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন মুফতি হান্নান।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আদালতে আসামিদের অপরাধ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আসামিরা সবাই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল, আমরা রায় বহাল রাখার আবেদন করেছি। আমরা চেয়েছি- রায় বহাল রাখা হোক, ডেথ রেফারেন্স গ্রহণ করা হোক এবং আসামিদের আবেদন ডিসমিস করে দেওয়া হোক। এ মামলায় আমরা পরিপূর্ণভাবে আসামিদের অপরাধ প্রমাণ করতে সমর্থ হয়েছি বলে আমরা মনে করি।’
অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, ‘আদালত এ মামলার রায় ঘোষণার জন্য আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেছেন। আদালত বলেছেন এটা যেহেতু ভাষার মাস, তাই এ রায়টি বাংলায় দেওয়া হবে।’
মামলা সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মামলায় ২০১৭ সালের ২০ আগস্ট ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মমতাজ বেগম ১০ জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় দেন। এ ছাড়া চার আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ মামলার রায়সহ সব নথি ওই বছরের ২৪ আগস্ট হাইকোর্টে পাঠানো হয়। এরপর প্রধান বিচারপতির কাছে নথি উপস্থাপন করা হলে তিনি জরুরিভিত্তিতে পেপারবুক তৈরির নির্দেশ দেন। মামলাটি শুনানির জন্য প্রস্তুত শেষে কার্যতালিকায় দেয়া হয়।
মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- ওয়াসিম আকতার, রাশেদ ড্রাইভার ওরফে আবুল কালাম, ইউসুফ ওরফে আবু মুসা হারুন, শেখ ফরিদ ওরফে মাওলানা শওকত ওসমান, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বক্কর, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই ও মাওলানা আবদুর রউফ ওরফে আবু ওমর। এ ছাড়া মেহেদি হাসান ওরফে আবদুল ওয়াদুদকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে। আনিসুল ওরফে আনিস, মো. মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান এবং সরোয়ার হোসেন মিয়াকে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের দণ্ড দেওয়া হয়েছে।
সারাবাংলা/কেআইএফ/এমও