সংসদে কার্যকর বিরোধীদল নেই: এমপি হারুন
১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৮:০৮
ঢাকা: বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেছেন, দেশে নির্বাচন নামের কোনো সংস্কৃতি নেই। নির্বাচনের নামে প্রহসন ও তামাশা হচ্ছে। এমনকি সংসদে কার্যকর বিরোধীদলও নেই।
সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনিত ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
হারুনুর রশীদ বলেন, ‘রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু বলছেন, ফরমায়েশি বিরোধীদল দিয়ে জাতীয় সংসদ কার্যকর করতে পারবেন না। অথচ আমরা যখন কথা বলি সেই কথার কাউন্টার দেয় বিরোধীদলের চেয়ারে বসে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন হচ্ছে সেখানে বিরোধীদলের কোন প্রার্থী আছে? চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে অন্যান্য জায়গায় মহাজোটের শরিকরা একসঙ্গে ভোট করছে। সত্যিকার অর্থে ১৯৮৮ সালেও জেনারেল এরশাদ সংসদে একটি গৃহপালিত বিরোধীদল তৈরি করেছিল। ২০১৮ সালে মধ্যরাতে ভোট করে যাদের বিরোধীদলের চেয়ারে বসালেন তারাতো নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোট করেছে। তাহলে কীভাবে সংসদ কার্যকর হবে।’
হারুনুর রশীদ বলেন, ‘দুর্নীতির মাত্রা কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে? ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক ও বর্তমান মেয়র একজন অপরের বিরুদ্ধে চুনোপুটি অভিযোগ নিয়ে আসছে। দুদক কি এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবে না।’
তিনি স্পিকারের উদ্দেশে বলেন, ‘সংসদে বিরোধীদলের কণ্ঠ স্তব্ধ করে না দিয়ে তাদের কাজ করার সুযোগ দিন। জিয়াউর রহমানকে বলবেন রাজাকার, সে মুক্তিযোদ্ধা নয়। আপনারা যতই চেষ্টা করেন জিয়াউর রহমানকে অসম্মানিত করতে পারবেন না। তাকে আল্লাহ সম্মান ও মর্যাদা দিয়েছেন। আল্লাহ বঙ্গবন্ধুকে যে সম্মান ও মর্যাদা দিয়েছেন আমি বা অন্য কেউ চেষ্টা করেও তা অসম্মানিত করতে পারব না।’
হারুনুর রশীদ বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি তার ভাষণে বলেছেন সংসদ হচ্ছে আলাপ-আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। প্রধানমন্ত্রী গতকাল বলেছেন, সত্য বললে মহাজোটের শরিক সবাই অসন্তুষ্ট হবেন। নির্বাচনকে নিয়ে রাশেদ খান মেনন কি বলেছিলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি জনগণ ভোট দিতে পারেনি। মাইকে আজান দিয়েও ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের আনা যাবে না। মির্জা কাদের সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তি। উনি পরিষ্কারভাবে বলেছেন, আজ যদি বৃহত্তর নোয়াখালীতে নির্বাচন হয় দুই-তিনটি আসন ছাড়া যারা সংসদ সদস্য আছেন তারা পালানোর দরজা খুঁজে পাবেন না। এই কথাগুলো কি অসত্য?’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনিয়মের একটি মডেল। তার দায়িত্ব থেকে তিনি বলেছেন, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়নি। সহিংসতা ও নির্বাচন একসঙ্গে চলতে পারে না। যশোরের একজন এমপির সাথে ওসির কথোপকথন ভাইরাল হয়েছে। সে সরাসরি ওসিকে বলছে, তুমি থানায় বোমা নিক্ষেপ কর এবং তার বিরুদ্ধে মামলা দাও। আমি বিস্মিত হই, চট্টগ্রামে মেজর সিনহা হত্যার পর যে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল হয়েছে তা দেখে। র্যাব যে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করেছে এটি উদ্বেগজনক। এই সংসদের একজন সদস্য হাজী সেলিমের পুত্র ইরফান সেলিমের বাড়ি ঘেরাও করে অকি-টকি, মাদক ও অস্ত্র উদ্ধার করা হলো। কিন্তু তদন্ত রিপোর্ট গেলো তার পক্ষে। মাদক নির্মূলের নামে শত শত নিরপরাধ মানুষকে ফাঁসানো হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিদেশে কত টাকা পাচার হচ্ছে সেই বিষয়গুলো আলোচনার মধ্যে নেই। নতুন শিশু ৩০ হাজার টাকার অধিক ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে জন্মগ্রহণ করছে। লাখ লাখ টাকা বিদেশ থেকে ঋণ নিয়ে আসছেন। মেগা প্রকল্প বানাচ্ছেন আর জাতীয় উন্নয়নের নামে জাতীয় লুটপাট হচ্ছে।’
বিএনপি দলীয় এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা ধ্বংসের মুখে। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় সরকার যাদের মনোনয়ন দিচ্ছে তারাই সেখানে নির্বাচিত হচ্ছে। দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হচ্ছে। নষ্ট রাজনীতি নষ্ট মানুষ তৈরি করে। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের কারণে জাতীয় মূল সংকট আজ আড়াল হয়ে যাচ্ছে। এর দায় সরকার এড়াতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, চোর ধরে চোর হয়ে যাচ্ছি। তিনি বাস্তব কথা বলেছেন। সত্যকে কখনো মিথ্যা দিয়ে ঢাকা যাবে না।’
সারাবাংলা/এএইচএইচ/পিটিএম