আজাদের পরিবারের বক্তব্য মিথ্যা— প্রতিবাদ জানিয়ে দিনাজপুরের এসপি
২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২৩:৪৩
ঢাকা: মাত্র চার মাসের ব্যবধানে দিনাজপুর জেলা যুবলীগ নেতা খলিলুল্লাহ আজাদ মিল্টনের বিরুদ্ধে পুলিশ ১৬টি মিথ্যা মামলা দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তার পরিবারের সদস্যরা। তারা বলছেন, এক মামলায় জামিন হলে অন্য মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে খলিলুল্লাহকে কারাগার থেকে বের হতে দিচ্ছে না পুলিশ। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপিসহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে অভিযোগ করে প্রতিকার না পেয়ে শেষে সংবাদ সম্মেলন করেছে তার পরিবার।
সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) মিল্টনের বাবা হাবিবুল্লাহ আজাদ এই সংবাদ সম্মেলন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (২ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর প্রতিবাদ লিপি পাঠিয়েছেন দিনাজপুরের পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন।
আরও পড়ুন: যুবলীগ নেতার নামে ৪ মাসে ১৬ মিথ্যা মামলা— অভিযোগ পরিবারের
প্রতিবাদ লিপিতে পুলিশ সুপার বলেছেন, ‘পিতা-মাতার করুন আহাজারী’ শিরোনামে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনের বিষয়টি আমাদের দৃষ্টিতে এসেছে। প্রচারিত সংবাদ সম্মেলনের বিষয়টির বিষয়ে আমাদের সুনির্দিষ্ট ও সুষ্পষ্ট বক্তব্য রয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে মো. হাবিবুল্লাহ আজাদ লিখিত বক্তব্যে বলেন তার পুত্র মো. খলিলুল্লাহ আজাদ মিল্টনের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত মিথ্যা মামলা শারীরিক ও মানসিক হয়রানির হাত থেকে প্রতিকার পাওলার লক্ষ্যে তার এই সংবাদ সম্মেলন। মো. হাবিবুল্লাহ আজাদ পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার জন্য সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন। প্রকৃতপক্ষে মো. খলিলুল্লাহ আজাদ মিল্টন একজন কৌশলী, ধূর্ত ও চতুর প্রকৃতির প্রতারক। সে বিভিন্ন পেশাজীবী লোকজনকে ভয়ভীতি ও বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা আত্মসাৎ করেন। প্রতারক মো. খলিলুল্লাহ আজাদ মিল্টনের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী ও ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ মানুষের নিকট হতে সুনির্দিষ্ট তথ্য সম্বলিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দেশের প্রচলিত আইন মোতাবেক এ পর্যন্ত মোট পাঁচটি জিডি ও ১৩টি মামলা রুজু হয়েছে। ইতোমধ্যে তদন্ত পূর্বক চারটি জিডির প্রশিকিউশন ও পাঁচটি মামলার অভিযোগপত্র বিজ্ঞ আদালতে দাখিল করা হয়েছে। যা বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। অন্যান্য মামলাগুলি তদন্তাধীন আছে।
প্রতিবাদ লিপিতে আরও বলা হয়, মো. খলিলুল্লাহ আজাদ মিল্টনকে গ্রেফতারের পর ভুক্তভোগী ও ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ মানুষ ন্যয় বিচার পেতে আশ্বস্ত হয়েছে। কিন্তু মো. খলিলুল্লাহ আজাদ মিল্টনের পিতা মো. হাবিবুল্লাহ বিভিন্ন স্থানে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে পুত্রের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড আড়াল করার অপচেষ্টা করছেন।
প্রতিবাদ লিপিতে জানানো হয়, অপরাধ দমনে পুলিশের দায়িত্ব-কর্তব্য এবং ঘটনা সম্পর্কে না জেনে এ ধরনের বিভ্রান্তিকর সংবাদ সম্মেলন করা সমীচিন নয়। বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা তথ্য প্রচারে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, তথা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে এমন সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে আরও সচেতন হওয়া উচিত। ভবিষ্যতে এ ধরনের বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা তথ্য সম্বলিত সংবাদ সম্মেলনের ক্ষেত্রে দৃষ্টিভঙ্গি পরিহারের জন্য অনুরোধ করা হলো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) দিনাজপুরের পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, আজাদ মিল্টন একজন আন্তর্জাতিক মানের প্রতারক। চাকরি দেওয়ার নাম করে শত শত মানুষের কাছ থেকে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিয়েছে। তার বিরুদ্ধে মোট ১৭টি মামলার তদন্ত চলছে। সবগুলো মামলার বাদী সাধারণ মানুষ। তার বাসা থেকে একটি চোরাই গাড়ি উদ্ধারের ঘটনায় শুধু পুলিশ একটি মামলা করেছে। পুলিশ শুধু আইন প্রয়োগ করে গ্রেফতার করেছে।
এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, তার ভয়ে দিনাজপুরে কেউ মুখ খুলত না। প্রথম মামলায় যখন সে কারাগারে গেল, এরপর সবাই একে একে মামলা ও জিডি করতে শুরু করলেন। সামনে আরও অনেক ভুক্তভোগী মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তার সঙ্গে আরও সহযোগী রয়েছে বলে জানতে পেরেছি। তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে এসপি আনোয়ার হোসেন বলেন, মিল্টনকে পুলিশ কোনো নির্যাতন করেনি। এই অভিযোগ কেউ করে থাকলে পুলিশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে মনে করছি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আপনাদের স্থানীয় প্রতিনিধির সহায়তা নিতে পারেন। তাহলে বিষয়গুলো আরো পরিষ্কার হবে।
সারাবাংলা/পিটিএম