গণতন্ত্র সূচকে বাংলাদেশের ৪ ধাপ উন্নতি
৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৫:৪৩
২০২০ সালে ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) বৈশ্বিক গণতন্ত্র সূচকে বাংলাদেশের চার ধাপ উন্নতি হয়েছে। ১৬৫ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৫.৯৯ স্কোর নিয়ে ৭৬তম অবস্থানে রয়েছে। এর আগে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৮০তম স্থানে।
পাঁচ মানদণ্ডের ভিত্তিতে গণতন্ত্র পরিস্থিতি বিচার করে ইআইইউ বুধবার (৩ ফেব্রুয়ারি) এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ২০১৯ সালে আট ধাপ এগিয়ে বাংলাদেশ উঠে এসেছিল ৮০তম অবস্থানে। ২০১৮ সালে ৫.৫৭ স্কোর নিয়ে ওই তালিকার ৮৮তম অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ।
২০০৬ সালে ইআইইউ যখন প্রথম এই সূচক প্রকাশ করে, তখন বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৬.১১। ২০০৮ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তা এক ধাক্কায় ৫.৫২ পয়েন্টে নেমে যায়। তারপর থেকে এ বছরই গণতন্ত্র সূচকে সবচেয়ে বেশি স্কোর পেয়েছে বাংলাদেশ।
অন্যদিকে, ২০২০ সালে এই সূচকে পুরো বিশ্বের গড় স্কোর আগের বছরের ৫.৪৪ থেকে কমে ৫.৩৭ হয়েছে। ইআইইউ বলছে, ২০০৬ সালে সূচক প্রকাশের পর থেকে এটাই সবচেয়ে বাজে স্কোর।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতির এই অবনমনের পেছনে মহামারির মধ্যে দেশে দেশে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের বিষয়টি বড় ভূমিকা রেখেছে। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক (৪৯.৪ শতাংশ) এখন গণতন্ত্র অথবা আংশিক গণতন্ত্র উপভোগ করছে। এর মধ্যে, পূর্ণ গণতন্ত্র উপভোগ করছে মাত্র ৪.৮ শতাংশ মানুষ।
ইআইইউ বলছে, গণতন্ত্রের জন্য এই বাজে বছরেও বাংলাদেশ, ভুটান, পাকিস্তানসহ এশিয়ার কিছু দেশের স্কোরে উন্নতি হয়েছে। কিন্তু, তারপরও বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ মানুষ রয়ে গেছে কর্তৃত্ববাদী শাসনের অধীনে, যার একটি বড় অংশ চীনের বাসিন্দা।
প্রসঙ্গত, এই সূচক তৈরির ক্ষেত্রে নির্বাচনি ব্যবস্থা ও বহুদলীয় অবস্থান, সরকারে সক্রিয়তা, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ, রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং নাগরিক অধিকার – এই পাঁচ মানদণ্ড বিবেচনায় নেয় ইআইইউ। সব সূচক মিলিয়ে কোনো দেশের গড় স্কোর ৮ এর বেশি হলে সেই দেশে ‘পূর্ণ গণতন্ত্র’ রয়েছে বলে বিবেচনা করা হয়। স্কোর ৬ থেকে ৮ এর মধ্যে হলে সেখানে ‘ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র’। স্কোর ৪ থেকে ৬ এর মধ্যে হলে ‘মিশ্র শাসন’ এবং ৪ এর নিচে হলে সে দেশে ‘স্বৈরশাসন’ চলছে বলে ধরা হয়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২০ সালে ‘পূর্ণ গণতন্ত্র’ ছিল মাত্র ২৩ দেশে। ‘ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র’ রয়েছে এমন দেশের সংখ্যা ৫২। আর ‘মিশ্র শাসনে’ রয়েছে ৩৫ দেশ। বর্তমান বিশ্বে ৫৭ দেশ এখন স্বৈরশাসনের অধীনে রয়েছে।
গণতন্ত্রের বিচারে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের চেয়ে ভালো অবস্থায় আছে ভারত। ৬.৬১ স্কোর নিয়ে ভারত আছে তালিকার ৫৩ নম্বরে। ৬.১৪ স্কোর নিয়ে শ্রীলঙ্কা ৬৮ তম; ৫.৯৯ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশ ৭৬ তম; ৫.৭১ স্কোর নিয়ে ভুটান ৮৪ তম; ৫.২২ স্কোর নিয়ে নেপাল ৯২তম; ৪.৩১ স্কোর নিয়ে পাকিস্তান ১০৫তম; ৩.০৪ স্কোর নিয়ে মিয়ানমার ১৩৫তম এবং ২.৮৫ স্কোর নিয়ে আফগানিস্তান ১৩৯তম অবস্থানে রয়েছে।
অন্যদিকে, ৯.৮১ স্কোর নিয়ে এবারের তালিকার শীর্ষে রয়েছে নরওয়ে। শীর্ষ দশে আরও আছে আইসল্যান্ড, সুইডেন, নিউজিল্যান্ড, কানাডা, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক, আয়ারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও নেদারল্যান্ডস। ইউরোপের দেশ যুক্তরাজ্য ও জার্মানি পূর্ণ গণতন্ত্রের দেশের তালিকায় থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের স্থান হয়েছে গতবারের মতই ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্রের দেশের তালিকায়।
তালিকার তলানিতে রয়েছে উত্তর কোরিয়া। এছাড়াও কঙ্গো, সেন্ট্রাল আফ্রিকা, সিরিয়া, চাদ, তুর্কমেনিস্তানকেও নিচের দিকে রাখা হয়েছে।
সারাবাংলা/একেএম
ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) গণতন্ত্র সূচক নরওয়ে বাংলাদেশ