মিয়ানমারকে প্রত্যাবাসন শুরুর সুযোগ নিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান
৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৮:০২
ঢাকা: মিয়ানমারের পক্ষ থেকে কোনো বার্তা না পাওয়ায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু নিয়ে বৃহস্পতিবারের (৪ ফেব্রুয়ারি) বৈঠক অনুষ্ঠানের বিষয়টি এখনও অনিশ্চিত। এমন পরিস্থিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন মিয়ানমারের প্রতি প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, তাদের জন্য এটি একটি সুযোগ। তারা এখন প্রত্যাবাসন শুরু করলে সবার সঙ্গে থাকতে পারবে। আশা করব, তারা এই সুযোগ নেবে।
বুধবার (৩ ফেব্রুয়ারি) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে মিয়ানমারের প্রতি এ আহ্বান জানান তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার দফতরে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার-চীনের মহাপরিচালক (ডিজি) পর্যায়ের ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠানের কথা ছিল। কিন্তু মিয়ানমারের সঙ্গে এখনও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তাদের সব যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ রয়েছে।’
ড. মোমেন বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে দুই দেশের সরকারের সঙ্গে কথা হয়েছে। কোনো একক ব্যক্তির সঙ্গে আমাদের কথা হয়নি। তাই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করার প্রক্রিয়া চলমান থাকবে। অতীত অভিজ্ঞতা বলে যে, এর আগে ৭৮ বা ৯২ এমন একাধিক সময়ে মিয়ানমারের সামরিক সরকারের সময়েই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হয়েছে। কাজেই এখন হতে বাধা কোথায়? তাদের জন্য এটি একটি সুযোগ। তারা এখন প্রত্যাবাসন শুরু করলে সবার সঙ্গে থাকতে পারবে। আশা করব, তারা এই সুযোগ নিবে।’
আসন্ন ত্রিপক্ষীয় বৈঠকটি হচ্ছে কিনা?- জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি এখনও জানি না। বৈঠকের বিষয়ে কাজ চলছে।’
মিয়ানমারের ঘটনায় বাংলাদেশ কেন নিন্দা প্রকাশ করল না? এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘অন্যরা নিন্দা জানিয়েই শেষ। এই যে মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা নির্যাতিত হলো, ওনারা একটু একটু নিন্দা জানিয়েই শেষ। মিয়ানমার আমাদের প্রতিবেশি। দেশটির ইতিহাসে মিলিটারি বহু বছর ধরে আছে। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী, গণতন্ত্র হচ্ছে আমাদের মূলনীতি। আমরা চাই বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রের বিকাশ ঘটুক। আমরা বলেছি যে, মিয়ানমার যেন গণতান্ত্রিকে প্রক্রিয়া মেনে চেলে। এটা আমরা শক্তভাবে বলেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বলেছি যে, তারা আমাদের প্রতিবেশি রাষ্ট্র। তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আছে এবং সেখানে যেন শান্তি শৃঙ্খলা বজায় থাকে। তৃতীয় যেটা বলেছি, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া যাতে চলমান থাকে। আমাদের দেশের স্বার্থেই গণতন্ত্রের কথা বলেছি, রোহিঙ্গা সংকটের কথা বলেছি। আমরা এই এলাকায় শান্তি চাই, আমরা চাই না এখানে মারামারি হোক। যেকোনো অজুহাতে মধ্যপ্রাচ্যের মতো অবস্থা এখানে সৃষ্টি হোক, এমনটা আমরা চাই না।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘মিয়ানমারের নতুন সরকারকে আমরা স্বাগত জানাইনি। আমরা তাদের উপদেশ দিয়েছি যে, সেখানে যেন গণতন্ত্রের মূল্যবোধের চর্চা হয়। আমরা সুচিরও মুক্তি দাবি করিনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমরা সবার কাছে সহযোগিতা চেয়েছি। চীন, জাতিসংঘসহ সবার কাছেই আমরা সহযোগিতা চেয়েছি। বিচারের জন্য আমরা আন্তর্জাতিক আদালতে গিয়েছি। তবে যারা মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বলছেন তারা কিন্তু ঠিকই তাদের সঙ্গে ব্যবসাও চালু রেখেছে।’
রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘে চীনের ভেটো দেওয়া প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এটা চীনের নীতি। তাদের নীতিতে আমরা হস্তক্ষেপ করতে পারি না। তবে আমরা এখনও চীনের ওপর আস্থা রাখতে চাই্।’
নতুন করে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের পশ্চিমা কয়েকটি বন্ধু রাষ্ট্র জানিয়েছে যে, আবারও সীমান্তে রোহিঙ্গা ঢল হতে পারে। তবে আমাদের তা মনে হয় না। কেননা আমাদের নাগরিকরা রোহিঙ্গাদের আর স্বাগত জানাবে না। এছাড়া সীমান্ত সুরক্ষা রাখার বিষয়েও আমরা যথেষ্ট পদক্ষেপ নিয়েছি।’
সারাবাংলা/জেআইএল/পিটিএম
ড. এ কে আব্দুল মোমেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রত্যাবসন মিয়ানমার রোহিঙ্গা সুযোগ