ফাস্ট ট্র্যাকের ৮ প্রকল্প: ৫ মাসে খরচ বরাদ্দের ২২ শতাংশ
৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৯:০৬
ঢাকা: পেরিয়ে গেছে চলতি অর্থবছরের (২০২০-২১) প্রায় সাত মাস। এই সাত মাসের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) পদ্মাসেতুসহ দেশের বৃহৎ ৮টি প্রকল্পে খরচ হয়েছে ৮ হাজার ৫৯৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরের বাষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) এসব প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ রয়েছে ৩৫ হাজার ৮৭৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা। সেই তুলনায় গড় ব্যয়ের হার দাঁড়িয়েছে ২১ দশমিক ৯২ শতাংশ। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) ফাস্টট্র্যাক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
সম্প্রতি প্রতিবেদনটি পাঠানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। তবে করোনা মহামারির কারণে অর্থ ব্যয়ের হার কম বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, মেগা প্রকল্পগুলোতে বিদেশি শ্রমিকের সংখ্যা অনেক। কোভিড-১৯ এর শুরুতেই অনেক শ্রমিক তাদের দেশে চলে গিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে তাদের ফিরিয়ে এনে প্রকল্পের গতি বাড়ানোটা ছিল অন্যতম চ্যালেঞ্জ। কিন্তু সেই পরিস্থিতি মোকাবিলা সম্ভব হয়েছে।
ফাস্টট্র্যাক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, পদ্মাসেতু প্রকল্পের অনুকূলে চলতি অর্থবছর এডিপিতে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৫ হাজার কোটি টাকা। গত পাঁচ মাসে প্রকল্পটির আওতায় ব্যয় হয়েছে ৫৫২ কোটি ৪৯ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। এছাড়া রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া হয় ১৫ হাজার ৬৯১ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ২ হাজার ৭৩১ কোটি ১৩ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে ১২ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। গত নভেম্বর মাস পর্যন্ত প্রকল্পের আওতায় ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ৪৭৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ। মোট ব্যয়ের মধ্যে সরকারি তহবিলের এক হাজার ২৭০ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে এক হাজার ২০৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ১৩০০ মেগাওয়াট মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্টের (রামপাল) আওতায় চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ রয়েছে ৪ হাজার ৪৮৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। পুরোটাই সরকারি তহবিলের অর্থ থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়। গত নভেম্বর পর্যন্ত এতে ব্যয় হয়েছে ৮৪৬ কোটি ৩৯ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১৯ দশমিক ২৬ শতাংশ। ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট-লাইন-৬ (মেট্রোরেল) প্রকল্পের আওতায় চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫ হাজার ৫৪২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের এক হাজার ৭৬২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে তিন হাজার ৭৮০ কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। গত পাঁচ মাসে প্রকল্পটির আওতায় ব্যয় হয়েছে ৬৪২ কোটি ২২ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১১ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এর মধ্যে সরকারি তহবিল হতে ২৮২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ হতে ৩৫৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ব্যয় হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পদ্মাসেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পের অনুকূলে চলতি অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দ রয়েছে তিন হাজার ৬৮৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের এক হাজার ২৮৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক ঋণের দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। গত পাঁচ মাসে প্রকল্পটির আওতায় ব্যয় হয়েছে দুই হাজার ২১৯ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৬০ দশমিক ২৪ শতাংশ। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ৯৩৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ হতে এক হাজার ২৮৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে।
সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে থাকো অপর প্রকল্প হচ্ছে দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু হতে মিয়ানমারের কাছে গুনদুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প। এই প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ৮৫ কোটি টাকা এবং বৈদেশক ঋণের এক হাজার ৪১৫ কোটি টাকা। গত পাঁচ মাসে এতে ব্যয় হয়েছে ২২২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ। মোট ব্যয়িত অর্থের মধ্যে সরকারি তহবিলের ৩১ কোটি ১৯ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ হতে ১৯১ কোটি ১৬ লাখ টাকা।
ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত আরেকটি প্রকল্প মাতারবাড়ি ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্রজেক্টের (মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্প) অনুকূলে চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ রয়েছে তিন হাজার ৬৭২ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ৫৭৮ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ হতে তিন হাজার ৯৪ কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। গত নভেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের আওতায় ব্যয় হয়েছে এক হাজার ৫৪৬ কোটি ৫১ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৪২ দশমিক ১২ শতাংশ। মোট ব্যয়ের মধ্যে ১০৮ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ হতে এক হাজার ৪৩৮ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে।
পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও সুবিধাদির উন্নয়ন (পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর) প্রকল্পের অনুকূলে চলতি অর্থবছর বরাদ্দ রয়েছে ৩০০ কোটি টাকা। পুরোটাই সরকারি তহবিলের অর্থ। গত নভেম্বর মাস পর্যন্ত এতে ব্যয় হয়েছে ৭৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ও ফাবা উইং এর প্রধান মোস্তাফিজার রহমান মঙ্গলবার (২ ফেব্রুয়ারি) সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনার কারণে সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও বিভিন্নভাবে প্রভাব পড়েছে। দেশের সবগুলো উন্নয়ন প্রকল্পেই করোনার প্রভাব পড়েছিল। তবে বড় প্রকল্পগুলোতে এ প্রভাব ছিল আরও বেশি। কেননা এগুলোর সঙ্গে বিদেশি অর্থায়ন ও বিদেশি শ্রমিক জড়িত। ফলে কয়েক মাস অর্থ ব্যয় কম হয়েছে। তবে এখন পরিস্থিতি অনেকটা উন্নতির দিকে। মেগা প্রকল্পগুলোতে বিদেশিরা ফিরেছে। ধীরে ধীরে গতিও বাড়ছে। আশা করি সামনের মাসগুলোতে প্রকল্প ব্যয় বাড়বে।’
সারাবাংলা/জেজে/পিটিএম
৮ প্রকল্প অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এডিপি খরচ পদ্মাসেতু প্রকল্প ফাস্ট ট্র্যাক বরাদ্দ মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র