Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘নবজাতকের অকালমৃত্যু বাড়ছে, হাজারে মারা যাচ্ছে ৩০ জন’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২৩:২৩

ঢাকা: দেশে জন্ম নেওয়া প্রতি এক হাজার জীবিত নবজাতকের মধ্যে ৩০ জনের অকালমৃত্যু হচ্ছে। এর মধ্যে ১৯ শতাংশ মারা যায় প্রিম্যাচিউর বার্থ বা অকালজাত জন্ম এবং জন্মকালীন কম ওজনের (লো বার্থ ওয়েট) কারণে। ২০১৪ সাল পর্যন্ত দেশে নবজাতকের মৃত্যুহারে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যায়। তবে ২০১৭-২০১৮ সালের সমীক্ষায় দেখা যায় এই হার আগের ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফিরে এসেছে।

বুধবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মহাখালীতে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশে (আইসিডিডিআর’বি) আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য জানানো হয়। বাংলাদেশে অকালজাত জন্ম ও জন্মকালীন কম ওজনের সমস্যা, সমাধান ও উত্তরণের উপায় শীর্ষক এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে ইউএসএআইডি’র অর্থায়নে পরিচালিত আইসিডিডিআর,বির রিসার্চ ফর ডিসিশন মেকারস (আরডিএম) প্রকল্প, ও ডাটা ফর ইম্প্যাক্ট (ডিফরআই)।

বিজ্ঞাপন

অনুষ্ঠানে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন আইসিডিডিআর,বি’র অ্যাসোসিয়েট সায়েন্টিস্ট ডা. আহমেদ এহসানুর রহমান।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, নবজাতকের মৃত্যুহার হ্রাসে গত কয়েক দশকে বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ (বিডিএইচএস) ২০১৪-এর প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ২০১৪ সাল পর্যন্ত নবজাতকের মৃত্যুহারের নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। তবে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে যে, বিডিএইচএস ২০১৭-১৮ সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে এই হার পূর্বের ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফিরে আসছে। বাংলাদেশে প্রতি এক হাজার জীবিত নবজাতকের মধ্যে ৩০ জন অকাল মৃত্যুর শিকার হয়। এদের মধ্যে ১৯ শতাংশ মারা যায় অকালজাত জন্ম (প্রিম্যাচিওর বার্থ) এবং জন্মকালীন কম ওজনের (লো বার্থ ওয়েট) কারণে।

বিজ্ঞাপন

অকালমৃত্যুর কারণ জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে অকালমৃত্যুর অন্যতম কারণ হচ্ছে শিশুর অকালজাত বা প্রিম্যাচিওর জন্ম (গর্ভে ৩৭ সপ্তাহ পূর্ণ হওয়ার পূর্বে) এবং জন্মকালীন ওজন আড়াই কেজি বা এর চেয়ে কম হওয়ায়। প্রতিবছর বাংলাদেশে পাঁচ লাখ ৭৩ হাজার নবজাতক প্রিম্যাচিওর অবস্থায় এবং আট লাখ ৩৪ হাজার নবজাতক কম ওজন নিয়ে ভূমিষ্ঠ হয়। এদের মধ্যে এক লাখ ৯২ হাজার নবজাতকের জন্মকালীন ওজন হয় ২ কেজি বা এর নিচে। এর মধ্যে দেশে প্রতিবছর ১৭ হাজার ১০০ নবজাতক এই দুইয়ের সম্মিলিত কারণে মৃত্যুবরণ করে। এদের মধ্যে ৭২ শতাংশ জন্মের প্রথম দিন পূর্ণ করার আগেই মারা যায়। দেশে মারা যাওয়া ১৭ হাজার ১০০ নবজাতক মৃত্যুর ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ পরিবার কোনো ধরণের স্বাস্থ্যসেবা নেয় না। একইসঙ্গে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ৪৩ শতাংশ মৃত্যু ঘটে বলেও উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।

মৃত্যুরোধে কার্যকর প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, সহজে বাস্তবায়ন যোগ্য বিভিন্ন পদ্ধতি যেমন এন্টিনেটাল কর্টিকোস্টেরয়েড (এসিএস), ক্যাংগারু মাদার কেয়ার (কেএমসি) এবং স্পেশাল কেয়ার নিউবর্ন ইউনিট (স্ক্যানু) ইতোমধ্যেই এই মৃত্যুরোধে কার্যকর হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, নবজাতকের জন্মকালীন ওজন নির্ণয়ের মাধ্যমের তাকে কম ওজনের হিসেবে চিহ্নিত করার যে পদ্ধতি তার প্রস্তুতি স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে অপ্রতুল। বাংলাদেশ হেলথ ফ্যাসিলিটি সার্ভে ২০১৭ অনুযায়ী, দেশের মাত্র ৬৯ শতাংশ জেলা হাসপাতাল এবং ৬৫ শতাংশ উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এই ওজন পরিমাপক স্কেল আছে। দেশের মাত্র ২০০ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কেএমসি সেবাপ্রদানের ব্যবস্থা আছে যেখানে সীমিত সংখ্যক কম ওজনসম্পন্ন নবজাতক সেবা পাচ্ছে।

ক্যাংগারু মাদার কেয়ার বা কেএমসি প্রদানের গুণগতমান, ফলো আপ সুবিধার অপর্যাপ্ততা এবং কম সময় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অবস্থানের প্রবণতাও সমীক্ষায় উঠে আসে বলে জানানো হয় প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০২০ সালে মাত্র পাঁচ হাজার ৭৩১ জন নবজাতক কেএমসি সেবা লাভ করে যাদের সেবা প্রয়োজন এমন নবজাতকের সংখ্যার মাত্র এক শতাংশ।

প্রতিবেদন প্রকাশ করে ডা. এহসান বলেন, ‘নবজাতকের মৃত্যুরোধে কেএমসি অত্যন্ত উপযোগী পদক্ষেপ। এটি একটি কম ব্যয়সাপেক্ষ ও সহজ সমাধান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু এই পদ্ধতির সঠিক প্রয়োগের জন্য চাই দীর্ঘ সময় শিশুকে মায়ের ত্বকের সংস্পর্শে রেখে সেবা দেওয়া ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ। আপাতদৃষ্টিতে একে সহজ সমাধান মনে হলেও এই পদ্ধতি বাস্তবায়নে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।’

এ বিষয়ে আইপাস বাংলাদেশের কান্ট্রি প্রধান ডা. সায়েদ রুবায়েত বলেন, ‘জীবন রক্ষাকারী সব পদ্ধতি কম ব্যয় সাপেক্ষ হবে এমনটা ভেবে নেওয়া উচিত না। আর কেএমসি তেমনি একটি কার্যকরী পদ্ধতি।’

তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯ এর মতো মহামারির সময়েও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে যে, উপযুক্ত সাবধানতা অবলম্বন করে কেএমসি দিলে নবজাতকের জন্য ঝুঁকি তৈরি হয় না। তাই নবজাতক মৃত্যু রোধে কেএমসিসহ অন্যান্য সেবা সহজ লভ্য করার পাশাপাশি এর সুবিধা সম্পর্কে পরিবার ও কমিউনিটিকে অবহিত করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

২০৩০ সালের মধ্যে নবজাতক ও অনূর্ধ্ব ৫-বছর বয়সী শিশুর প্রতিরোধ যোগ্য মৃত্যু বন্ধের পাশাপাশি প্রতিহাজারে জীবিত জন্মে নবজাতকের মৃত্যুহার কমপক্ষে ১২-তে এবং প্রতিহাজারে জীবিত জন্মে অনূর্ধ্ব ৫-বয়সী শিশুমৃত্যুর হার কমপক্ষে ২৫-এ নামিয়ে আনা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশকে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে বলে জানানো হয় মতবিনিময় সভায়।

সভায় বিশেষজ্ঞ হিসেবে ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন নবজাতক স্বাস্থ্যবিষয়ক জাতীয় টেকনিক্যাল ওয়ার্কিং কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মাদ শহীদুল্লাহ। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন আইসিডিডিআর,বি’র ম্যাটার্নাল অ্যান্ড চাইল্ড হেলথ ডিভিশনের সিনিয়র ডিরেক্টর এবং আরডিএম প্রকল্প প্রধান ডা. শামস এল আরেফিন। সভায় উপস্থিত ছিলেন ইউএসএইড বাংলাদেশের সিনিয়র মনিটরিং, ইভ্যালুয়েশন অ্যান্ড রিসার্চ অ্যাডভাইজর ডা. কান্তা জামিল।

সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম

অকাল মৃত্যু আইসিডিডিআরবি কেএমসি টপ নিউজ নবজাতক প্রিম্যাচিওর বার্থ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ইনজুরিতে মৌসুম শেষ রদ্রির
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১০:২৮

সম্পর্কিত খবর