মরা নদীর প্রাণ ফেরানোর উদ্যাগ, চলছে সমীক্ষা
৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৯:৫১
ঢাকা: চুয়াডাঙার দামুড়হুদা উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া একসময়ের খড়স্রোতা মাথাভাঙা ও ভৈরব নদী এখন কেবলই স্মৃতি। গত কয়েক দশকে অবৈধ দখলে পানির প্রবাহ কমে গিয়ে পরিণত হয়েছে মরা খালে। পানি কমে যাওয়ায় বিলুপ্ত হচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ। একই অবস্থা এক সময়ের খরস্রোতা দর্শা নদীও, ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে ব্রহ্মপুত্র, মরতে বসেছে গোমতি নদী।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ও নদী কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী অবৈধ দখল, দূষণ, বালু মহাল, অপরিকল্পিত মাছ চাষ, আর সরকারি সংস্থাগুলোর অপরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণে জোয়ার-ভাটায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ায় দেশের নদ-নদী ও খালের অস্তিত্ব টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।
বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকা এই পরিস্তিতিতে মৃত কিংবা মৃত প্রায় নদ-নদীকে বাঁচিয়ে রাখতে কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। এসব নদ-নদীতে কীভাবে জোয়ার-ভাটার পানি ফেরানো যায় তাও ছিল চিন্তার বাইরে। গত তিন বছর ধরে মরে যাওয়া নদ-নদী নিয়ে কাজ করছে জাতীয় নদীরক্ষা কমিশন।
জাতীয় নদীরক্ষা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, দেশের প্রধান ৪৮টি নদ-নদী নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে।
তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, নদ-নদীগুলো নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখে গেছে, অনেক শাখা নদীই মরে গেছে। সেসব নদী উদ্ধার করা প্রায় দুরূহ। আইনে নদীর জমি কোনো ব্যক্তির নামে রেকর্ড হওয়ার বিধান নেই। কিন্তু নানাভাবে নদীর অনেক জমি ব্যক্তির দখলে চলে গেছে। আবার বালু উত্তোলনের কারণে অনেক নদ-নদী ঝুঁকির মুখে রয়েছে।
জানা গেছে, বালু, আড়িয়াল খাঁ, মধুমতি ও ধলেশ্বরীর সমীক্ষা শেষ হয়েছে। এসব নদ-নদীর কোথায় কী ধরনের সমস্যা রয়েছে তা চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব নদীর যেসব শাখা রয়েছে তার অনেকগুলোতেই পানির প্রবাহ এখন প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জের নয়টি আন্তর্জাতিক নদীর পানির প্রবাহ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমে গেছে। যে কারণে সোমেশ্বরী, জাদুকাটা, রক্তি, জালুখালি, ভোগাই, কংস, নিতাই ও উমিয়াম এখন মৃতপ্রায়।
এদিকে নদ-নদী উদ্ধার নিয়ে যে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে তার মেয়াদ জুনে শেষ শেষ হওয়ার কথা। এ প্রসঙ্গে জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান এ এস এম আলী কবীর বলেন, ‘এ সমস্যা দীর্ঘদিনের। অনেক নদীর শাখা প্রশাখাও মরে গেছে। সেসব আগের স্থানে ফিরিয়ে আনা সহজ কাজ নয়। যতটা উদ্ধার করা যায়, সে চেষ্টা করা হচ্ছে।’
নদীরক্ষা কমিশন সূত্রে আরও জানা গেছে, বিশাল এই কর্মযজ্ঞের মেয়াদ শেষ হয়ে এলেও এখনো চলছে মরা নদ-নদী শনাক্তের কাজ।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এই জঞ্জাল দীর্ঘদিনের। কোনো নদীতে নতুন চরের দেখা মিললে, তা সবার আগে ভূমিগ্রাসীদের পেটে চলে যায়। স্থায়ী বসতি গড়ার পাশাপাশি নানা অবকাঠামো নির্মাণ করে রাতারাতি। সেখান থেকে নদীকে উদ্ধার করে আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা আগে কখনো করা হয়নি। যে কারণে মূল নদীর অনেক শাখা প্রশাখা মরে গেছে।
উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ২৪ হাজার ১০০ কিলোমিটার জলরাশি নিয়ে দেশে ৩১০টি নদ-নদী রয়েছে। কিন্তু এই সংখ্যক নদ-নদীর মধ্যে কতগুলো মরে গেছে কিংবা অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে তার সঠিক হিসাব নদী কমিশন, পানি উন্নয়ন বোর্ড কিংবা উইকিপিডিয়াতেও পাওয়া যায়নি।
আন্তর্জাতিকভাবে নদীর পানির সঠিক হিস্যা না পাওয়াও অনেক নদী শুকিয়ে যাওয়ার কারণ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। দীর্ঘ সময় ধরে চেষ্টা করেও তিস্তার পানি বণ্টনে ভারতকে রাজি করানো যায়নি সে উদাহরণ টেনে বলেন, যে কারণে ভারত নিজের ইচ্ছামত পানি ছাড়ে। কৃষি সেচ মৌসুমে পানির প্রবাহ না থাকায় উত্তরের জনপদের বিভিন্ন জায়গায় হাজার হাজার একর জমি অনাবাদি থাকছে। দেশের নদ-নদী রক্ষায় সমন্বিত এবং জোরালো উদ্যোগ নেওয়া উচিত বলে মনে করেন তারা।
সারাবাংলা/জেআর/এমআই