Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দেশের বাইরে গ্রাহক মেলেনি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের

এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২১:০২

ঢাকা: দেশের বাইরে এখনও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের কোন ট্রান্সপন্ডার ভাড়া দেওয়া সম্ভব হয়নি। নেপাল, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়ার তিন কোম্পানি ট্রান্সপন্ডার ভাড়া নিতে আগ্রহ দেখালেও কম দাম হাঁকায় শেষ পর্যন্ত তাদের সঙ্গে কোনো চুক্তি হয়নি। ফলে দেশের বাইরে এখনও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের কোনো গ্রাহক মেলেনি। আর দেশের ভেতরে টেলিভিশন চ্যানেল, রেডিও এবং তারহীন টেলিভিশন দেখার প্রযুক্তি ডিরেক্ট টু হোম (ডিটিএইচ) সেবা ‘আকাশ’-ই এখন স্যাটেলাইটের প্রধান গ্রাহক। বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএসসিএল) সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের অভ্যন্তরীণ বাজার ভালো। আমরা তো কম দাম দিয়ে বাইরে ব্যান্ডউইথ বিক্রি করতে পারি না। কম দামে ট্রান্সপন্ডার ভাড়াও দিতে পারি না। কম দামে বাইরে বিক্রি করলে দেশের ক্রেতারা নিরুৎসাহিত হবে। গ্রহণযোগ্য দাম না পাওয়ায় এখন পর্যন্ত বাইরের কোন ক্রেতার সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়নি।’

বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএসসিএল) এর চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ এ প্রসঙ্গে সারাবাংলাকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ট্রান্সপন্ডার ভাড়া নিতে বাইরের কয়েকটি দেশ আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। উপযুক্ত দাম না দেওয়ায় তাদের সঙ্গে চুক্তি হয়নি।’

আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ফ্রি ইন্টারনেট সুবিধা ৩১ দুর্গম দ্বীপে

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আগে বলেছিলাম যে, আমাদের বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের অর্ধেক ট্রান্সপন্ডার বাইরে বিক্রি করব এবং অর্ধেক ট্রান্সপন্ডার দেশের ভেতরে বিক্রি করব। এর ফলে আমরা বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করব এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করব। কিন্তু বিদেশে স্যাটেলাইট ব্যান্ডউইথের দাম কমে যাওয়ার আমরা বাইরে স্যাটেলাইটের ক্যাপাসিটি বিক্রি করতে পারছি না। সে জন্য আমরা অভ্যন্তরীণ বাজার তৈরি করার চেষ্টা করেছি এবং অভ্যন্তরীণ বাজারে আমাদের স্যাটেলাইটের সেবা বিক্রি করার চেষ্টা করছি। অভ্যন্তরীণ বাজারের মধ্যে আমাদের বড় কাস্টমার হবে ব্যাংকের এটিএম বুথগুলো।’

এর আগে, স্যাটেলাইটের ট্রান্সপন্ডার ভাড়া নিতে নেপাল, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়ার কোম্পানি বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএসসিএল) সঙ্গে আলোচনা চালিয়েছিল। নেপালের দুটি কোম্পানি নেপাল হামরু ডিটিএইচ ও নেপাল ডিফারেন্ট টিভি এবং ফিলিপাইনের ডব্লিউআইটি নামের একটি কোম্পানি ট্রান্সপন্ডার ভাড়া নেওয়ার আগ্রহ দেখায়। তবে উপযুক্ত দাম না পাওয়ায় তাদের কাছে ট্রান্সপন্ডার ভাড়া দেওয়া সম্ভব হয়নি।

বিজ্ঞাপন

দেশে সি ব্রান্ডের স্যাটেলাইট ব্যান্ডইউথ প্রতিমাসের জন্য প্রতি মেগাহার্জ ৩ হাজার ৫০০ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। আর কেইউ ব্রান্ডের ব্যান্ডউইথ প্রতিমাসে প্রতি মেগাহার্জ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ ডলারে। দেশের বাইরের প্রতিষ্ঠানগুলো কেইউ ব্রান্ডের প্রতি মেগাহার্জের দাম ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ ডলার পর্যন্ত দাম হেঁকেছিল। উপযুক্ত দাম না পাওয়ায় দেশের বাইরে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ব্যান্ডউইথ এখনও বিক্রি করা সম্ভব হয়নি।

বিসিএসসিএল এর তথ্যমতে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার রয়েছে। এরমধ্যে ২৬টি কেইউ ব্যান্ডের। বাকি ২৪টি ইনসেটসি ব্রান্ডের। বর্তমানে বিদ্যমান স্যাটেলাইটগুলো সি ব্যান্ডের। তবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটটির ইনসেট সি। অন্যান্য স্যাটেলাইটগুলোর সঙ্গে দেশের স্যাটেলাইটের পার্থক্য এটিই।

আরও পড়ুন: ‘দ্বিতীয় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ ২০২৩ সালে’

বিসিএসসিএল জানিয়েছে, এরইমধ্যে ডিরেক্ট টু হোম’ (ডিটিএইচ) সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান আকাশ ৬টি ট্রান্সপন্ডার ভাড়া দিয়েছে। এখন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের সবচেয়ে বড় গ্রাহক তারাই। এ ছাড়া দেশের সবকটি টেলিভিশন ও রেডিও স্যাটেলাইট ব্যবহার করে তাদের সম্প্রচার কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। ভবিষ্যতে দেশের এটিএম বুথগুলোকে স্যাটেলাইটের আওতায় আনার লক্ষ্য রয়েছে।

এদিকে, দুর্গম ও উপকূলীয় এলাকার ৩১টি দ্বীপ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ব্যান্ডউইথের আওতায় এসেছে। ১১২টি ভি-স্যাটের মাধ্যমে ওইসব অঞ্চলে ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে অপটিক্যাল ফাইবার বা টেলিফোন সেবার মাধ্যমে ব্যান্ডইউথ না থাকলেও এসব এলাকা এখন ইন্টারনেটের আওতায় এসেছে। আর ওইসব এলাকার বাসিন্দারা এখন ফ্রি ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারছে।

এর আগে, ২০১৮ সালের ১২ মে বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত ২টা ১৪ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে দেশের প্রথম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’র সফল উৎক্ষেপণ হয়। নিজ কক্ষপথ ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রিতে পৌঁছানোর পর এর ইন অরবিট টেস্টসহ (আইওটি) নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ হয়। পাওয়া যায় সফল সংকেত।

উৎক্ষেপণের ছয় মাসের মাথায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মালিকানা ও দেখভালের দায়িত্ব বুঝে নেয় বাংলাদেশ। এরপর থেকে বাংলাদেশ কমিউনেকশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএসসিএল) এর অধীনে স্যাটেলাইটটির সম্পূর্ণ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

আরও পড়ুন: দেশের সব টিভির সম্প্রচার বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে, আগ্রহী আরও ৩ দেশ

ওই বছরের সেপ্টেম্বরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সাফ চাম্পিয়নশিপ সরাসরি সম্প্রচারের ক্ষেত্রে সফলতা দেখায় দেশের প্রথম এই স্যাটেলাইট। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে বিটিভিতে খেলা দেখানো হয়। মাত্র এক বছরের মধ্যেই স্যাটেলাইটটির বাণিজ্যিক কার্যক্রমও শুরু হয়।

বর্তমানে সবকটি টেলিভিশন চ্যানেল স্যাটেলাইটের মাধ্যমে তাদের সম্প্রচার কার্যক্রম চালাচ্ছে। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ক্যাবল ছাড়া টিভি দেখার ডিটিএইচ সেবাও চালু হয়েছে। এখন পর্যন্ত বেশ জনপ্রিয় এই সেবা।

এদিকে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণের লক্ষ্যে এগিয়ে চলছে কার্যক্রমও। এরইমধ্যে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য পরামর্শকও নিয়োগ করা হয়েছে।

২০১৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহার অনুযায়ী ২০২৩ সালের মধ্যে এর কার্যক্রম চালু হওয়ার ঘোষণা রয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ এর উৎক্ষেপণের লক্ষ্যে কাজ করছে বিসিএসসিএলও।

সারাবাংলা/ইএইচটি/একে

ট্রান্সপন্ডার বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট স্যাটেলাইট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর