বেরোবিতে জাতীয় পতাকা অবমাননায় ১৯ শিক্ষক-কর্মকর্তার জামিন
৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৬:৫০
রংপুর: বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় পতাকা বিকৃত করে প্রদর্শন এবং অবমাননার ঘটনায় করা মামলার পুলিশের প্রতিবেদনে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে বাদ দেওয়ায় আদালতে নারাজি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পুলিশের তদন্তে পতাকা অবমাননা রাষ্ট্রদ্রোহ করার মতো অপরাধ প্রমাণ হওয়ায় মামলাটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হিসেবে গ্রহণ অনুরোধ করেছে বাদীপক্ষ।
এদিকে এই মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তাবিউর রহমান প্রধানসহ ১৯ শিক্ষক ও কর্মকর্তার জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রংপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এর বিচারক ফজলে এলাহী খানের আদালত তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। এ সময় অভিযুক্তরা সবাই আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
জামিন পাওয়া ১৮ শিক্ষক-কর্মকর্তা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাবিউর রহমান প্রধান, গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. আর এম হাফিজুর রহমান, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. পরিমল চন্দ্র বর্মণ, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোরশেদ হোসেন, পরিসংখ্যান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রশিদুল ইসলাম ও শাহ জামান, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. নুর আলম সিদ্দিক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. কামরুজ্জামান, মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাসুদ উল হাসান, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সদরুল ইসলাম সরকার, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক প্রদীপ কুমার সরকার।
এছাড়াও পরিসংখ্যান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক চার্লস ডারউইন, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক রামপ্রসাদ বর্মণ, ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক শামীম হোসেন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক মো. রহমতউল্লাহ, রসায়ন বিভাগের প্রভাষক মোস্তফা কাইয়ুম শারাফাত, ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রভাষক সোহাগ আলী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক আবু সায়েদ এবং পরিসংখ্যান বিভাগের সেকশন অফিসার শুভঙ্কর চন্দ্র সরকার।
আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জি আরও) রাফিউল ইসলাম রাফি জানান, গত ৫ জানুয়ারি দেওয়া পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদনে রাষ্ট্রদ্রোহ করার মতো অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় অভিযুক্তদের জামিন নামঞ্জুরের আবেদন করা হয়েছিলো।
এদিকে অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী আব্দুল হক প্রামাণিক জানান, জাতীয় পতাকা অবমাননার যে মামলা হয়েছে তা জামিনযোগ্য। আদালত দুই পক্ষের কথা শুনে জামিন মঞ্জুর করেছেন।
তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী রফিক হাসনাইন বলেন, ‘আমরা এই মামলার পুলিশ প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দিয়েছি। কারণ পুলিশ যে তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহকে বাদ দেওয়া হয়েছে। যেহেতু ভিসির লিখিত আদেশে বিজয় দিবসের কর্মসূচি পালিত হয়েছে, তাতে তাকে বাদ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমরা আদালতকে বলেছি, এই মামলাটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হিসেবে গ্রহণ করতে, কারণ পুলিশ তদন্ত করে রাষ্ট্রদ্রোহ করার মতো অপরাধ পেয়েছে।’
তবে মামলাটি রাষ্ট্রদ্রোহ হবে কি না, আদালত সে বিষয়ে এখনও আদেশ দেয়নি।
উল্লেখ্য, মহান বিজয় দিবসে জাতীয় পতাকার নকশার বিকৃতি করে নিজেদের মতো করে তৈরি করা পতাকা নিয়ে ক্যাম্পাসে অবস্থিত স্বাধীনতা স্মারকে ছবি তোলেন একাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তা। এছাড়া জাতীয় পতাকা পায়ের নিচে লাগিয়ে ছবি তুলে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। পরদিন ১৭ ডিসেম্বর জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগ এনে ভিসির শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তাবিউর রহমানকে প্রধান আসামি করে মেট্রোপলিটন তাজহাট থানায় মামলা করেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি আরিফুল ইসলাম আরিফ।
বেরোবিতে জাতীয় পতাকা বিকৃত করে বিজয় ‘উদযাপনে’ শিক্ষকরা
এছাড়াও যৌথভাবে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহামুদুল হক ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান ভিসি অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে প্রধান আসামি করে আরেকটি মামলা করেন। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসন তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ১৯ শিক্ষক-কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা পেয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ভিসির কাছে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন।
সারাবাংলা/এমও
জাতীয় পতাকা জাতীয় পতাকা অবমাননা বেরোবি শিক্ষক ভিসি কলিমউল্লাহ