Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অরক্ষিত শাহজালালের গুরুত্বপূর্ণ ৭ পয়েন্ট, বাড়ছে চোরাচালান

শেখ জাহিদুজ্জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৯:৩৯

ঢাকা: হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে উঠেছে সোনা ও মাদক চোরাচালানের নিরাপদ রুট। ঢাকা কাস্টমস হাউজের এক প্রতিবেদন বলছে, বিমানবন্দরের গুরুত্বপূর্ণ সাতটি পয়েন্ট অরক্ষিত রয়েছে। আধুনিক যন্ত্রপাতি না থাকায় অনেক ক্ষেত্রে চোরচালান প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে রয়েছে সমঝোতার অভাব। ফলে ঝামেলা রয়েই গেছে। প্রতিবছর অবকাঠামো উন্নয়নে বাজেটের আকার বাড়লেও হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থাপনার নিরাপত্তায় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। তবে এর জন্য অর্থের অভাব দায়ী নয়, রয়েছে পরিকল্পনার অভাব। সেইসঙ্গে যারা বিমানবন্দরে দায়িত্ব পালন করছেন তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে নানান অভিযোগ।

বিজ্ঞাপন

এদিকে সম্প্রতি ঢাকা কাস্টম হাউজ শাহজালালের নিরাপত্তা নিশ্চিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) একটি চিঠি দিয়েছে। ওই চিঠিতে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিরাপত্তা বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে।

চিঠি সূত্রে জানা গেছে, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দ্বিতীয় তলায় একটি স্টাফ গেইট আছে। ওই গেইট দিয়ে এয়ারলাইন্সসহ বিমানবন্দরে দায়িত্বরত কর্মীরা আসা-যাওয়া করে। ঢাকা কাস্টমের প্রতিবেদন বলছে, এখানে লাগেজ বা মানুষের শরীর পরীক্ষায় স্ক্যানিং মেশিন নেই। সেই সুযোগ নিয়ে এয়ারলাইন্সসহ বিমানবন্দরের অনেক কর্মী চোরাচালানে জড়িয়ে পড়ছে। এর আগে এ ধরণের অপরাধে জড়িয়ে ধরা পড়ার নজিরও রয়েছে। অপরদিকে বর্হিগমন হলেও নেই ব্যাগেজ স্ক্যানার। ফলে সব যাত্রীকে সঠিকভাবে তল্লাশি করা যায় না। আর স্থায়ী স্ক্যানার না থাকায় নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিতদের ম্যানেজ করার সুযোগও থেকে যায়। এছাড়া আগমনী হলেও নেই আধুনিক স্ক্যানার মেশিন।

বিজ্ঞাপন

প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, প্রতিদিন হ্যাঙ্গার গেইট দিয়ে অসংখ্য গাড়ি বিমানবন্দরে প্রবেশ করে আর বের হয়। এখানকার স্ক্যানিং মেশিনটিও পুরনো। সেটিও প্রায় সময় নষ্ট থাকে। এখানে একটি আধুনিক ভেহিক্যাল স্ক্যানার থাকলে পণ্য যাচ্ছে কি যাচ্ছে না সেটা জানা সম্ভব। এছাড়া কুরিয়ারে প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার বিল অব এন্ট্রি শুল্কায়ন হয়। কিন্তু এগুলোর বেশির ভাগই স্ক্যানিং হয় না। এদিকে এয়ারফ্রেইটে স্ক্যানার রয়েছে মাত্র একটি। যা দিয়ে সব চালান পরীক্ষা করা অসম্ভব। আর পদ্মা গেইটেও নেই কোনো গাড়ি স্ক্যানার। ফলে জানা যায় না তেল পরিবহনে নিয়োজিত গাড়ির মাধ্যমে কোনো চোরাচালান হচ্ছে কিনা।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, যারা হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কাজ করেন তাদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে প্রকট। আর সোনা বা মাদক চোরাচালানের যেসব বড় চালান আটক করা হয়েছে তার বেশির ভাগই বিমানবন্দরের। সম্প্রতি মাদকের দুটি বড় চালান আটক হয়েছে। এছাড়া প্রায়ই সোনা আটক হয়ে থাকে।

ঢাকা কাস্টমস হাউজ জানাচ্ছে, ২১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সাত পয়েন্টের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব। আর সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা নিরাপত্তা ব্যবস্থা আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেবে।

এ বিষয়ে ঢাকা কাস্টমস হাউজের কমিশনার মো. মোয়াজ্জেম হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা একটি তালিকা করেছিলাম। তালিকায় বিভিন্ন স্ক্যানিং মেশিন দরকার বলে উল্লেখ করেছিলাম। তার মধ্যে ছিল বডি স্ক্যানার, ব্যাগেজ স্ক্যানার এবং ভেহিক্যাল স্ক্যানার। সেজন্য আমরা এনবিআরকে চিঠিও দিয়েছিলাম। এরপর এনবিআর থেকে ৮ নম্বর গেইটে একটি ভেহিক্যাল স্ক্যানার কিনতে সিভিল এভিয়েশনকে অনুরোধও করা হয়েছে। সেটি কিনতে ইতোমধ্যে কাজও শুরু হয়েছে। আসলে স্ক্যানার থাকলে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।’

আর বিমানবন্দরের উন্নয়ন বিষয়ে সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মাশা‍র্ল এম মফিদুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা বিমানবন্দরের উন্নয়নে অনেক উদ্যোগ নিয়েছি। করোনার কারণে সময় কিছুটা বেশি লেগে যাচ্ছে। তবে আমাদের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের কাজ কিন্তু থেমে নেই। আমরা আমাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। বিমানবন্দরের জন্য আধুনিক বডি স্ক্যানার, লাগেজ স্ক্যানার, সিসি টিভি ক্যামেরা কেনা হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে কিছু বসানোর কাজ চলছে। সব হবে, তবে একটু সময় লাগবে।’

সারাবাংলা/এসজে/পিটিএম

৭ পয়েন্ট অরক্ষিত চোরাচালান জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ঢাকা কাস্টমস হাউজ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সিভিল এভিয়েশন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর