ভ্যাকসিন কার্যক্রমে আপ্যায়ন বরাদ্দ ৯০ কোটি টাকা
৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২৩:২৮
ঢাকা: দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রমে ‘আপ্যায়ন ব্যয়’ বাবদ ৮৯ কোটি ৮৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এই বরাদ্দের কথা জানানো হয়েছে।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব আবদুল মান্নান বলেছেন, প্রচার-প্রচারণা ছাড়াও যারা ভ্যাকসিন প্রয়োগ করবেন তাদের জন্য এই বরাদ্দ থেকে খরচ করা হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্র জানিয়েছে, ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম চলবে প্রায় ছয় মাস। আর এই সময়ে যারা ভ্যাকসিন প্রয়োগ করবেন তাদের আপ্যায়ন বাবদ এই টাকা খরচ করা হবে।
বুধবার (৩ ফেব্রুয়ারি) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব আবদুল মান্নানের কাছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের (বাজেট অনুবিভাগ-১) যুগ্ম সচিব ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফের সই করা এক চিঠিতে এ বরাদ্দের বিষয়ে জানানো হয়।
চিঠিতে বলা হয়, ‘স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে কোভিড-১৯ প্রতিরোধক ভ্যাকসিন প্রয়োগ সংশ্লিষ্ট আপ্যায়ন ব্যয় বাবদ ৮৯ কোটি ৮৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা চলতি অর্থবছরের অর্থ বিভাগের বাজেটে ‘করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলা তহবিল’ থেকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনূকুলে আপ্যায়ন ব্যয় কোডে বরাদ্দ দিতে সম্মতি দেওয়া হলো।’
এ বরাদ্দের ক্ষেত্রে কিছু শর্তের কথা উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আপ্যায়ন ব্যয় খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে সরকারি প্রযোজ্য আর্থিক বিধিবিধান যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে দ্য পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্ট-২০০৬ এবং দ্য পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস-২০০৮ অনুসরণসহ যাবতীয় আর্থিক বিধি-বিধান যথাযথভাবে পালন করতে হবে এবং এই অর্থ চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে সংশ্লিষ্ট কোডে সমন্বয় করতে হবে।’ এছাড়া অপরিহার্য বিবেচিত হলে ‘প্রচার ও বিজ্ঞাপন’ এর ব্যয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিজস্ব বাজেট থেকে নির্বাহ করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো বলেও উল্লেখ করা হয় চিঠিতে।
আর অব্যয়িত অর্থ যথাযথভাবে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে বলেও শর্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয় চিঠিতে।
জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, আজকে এই বরাদ্দের একটি অনুলিপি এসেছে স্বাস্থ্য অধিদফতরে। তবে এখানে আপ্যায়ন বিল বাবদ শব্দটাকে যেভাবে দেখা হচ্ছে তা সঠিক নয়। এখানে আপ্যায়ন মানে কিন্তু এমন না যে মন্ত্রণালয় বা অধিদফতরের কর্মকর্তাদের খরচ। বিষয়টা যদি এভাবে কেউ ব্যাখ্যা করে তবে ভুল হবে। সারাদেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগের জন্য প্রায় ১০ হাজার ৪০০টি টিম গঠন করা হচ্ছে। এতে প্রতিটি টিমে থাকবে ছয়জন করে। এদের মধ্যে দুজন ভ্যাকসিনেটর অর্থাৎ যারা ভ্যাকসিন দিবে। এরা ছাড়াও রেজিস্টার রক্ষণাবেক্ষণসহ অন্যান্য কাজে আরও চারজন থাকবেন। সেই হিসেবে দেখা যায় প্রায় ৬২ হাজার ৪০০ স্বেচ্ছাসেবক কাজ করবেন ভ্যাকসিন প্রয়োগের জন্য। পরিস্থিতি অনুযায়ী এর কম বেশিও হতে পারে। তাদের কিন্তু তাদের জন্য আলাদা কোনো ভাতার ব্যবস্থা নেই। সেক্ষেত্রে তাদের দুপুরের খাওয়া বাবদ ২০০ টাকার মতো বরাদ্দ করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ছয় মাস এই স্বেচ্ছাসেবকরা ভ্যাকসিন প্রয়োগের কার্যক্রমে অংশ নিবে। এছাড়াও তাদের প্রশিক্ষণসহ নানা রকমের প্রচারের কাজেও কিন্তু এই অর্থ ব্যয় করা হবে। এর আগে নানাভাবে এগুলো নিয়ে অপপ্রচারের চেষ্টা চলেছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অনুমোদনের পর কিন্তু এ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। ছয় মাস কার্যক্রম শেষে যদি টাকা সাশ্রয় হয় তবে সেটি অর্থ মন্ত্রণালয়কে অবগত করে ফেরত দেওয়া হবে সরকারি কোষাগারে।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের আরেক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ভ্যাকসিন কার্যক্রমে মূলত দুইভাবে খরচের বিষয়টি হয়ে থাকে। একটি হলো কেনাকাটা সংক্রান্ত, যেটি সিএমএসডি’র মাধ্যমে হয়ে থাকে। আরেকটি হলো দেশব্যাপী ভ্যাকসিন প্রয়োগের সময় হওয়া খরচ নিয়ে। এক্ষেত্রে আমাদের দেশে সচরাচর অন্যান্য ভ্যাকসিন প্রয়োগের সময়েও কিন্তু খরচ করা হয়ে থাকে। তাই এবারও সেভাবেই হচ্ছে। কারণ ভ্যাকসিন প্রয়োগে যারা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেন তাদের কিন্তু খাওয়া-দাওয়ার একটা খরচ দেওয়া হয়ে থাকে। সেখানেই মূলত এবারের অর্থ খরচ হবে।’
জানতে চাইলে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব বলেন, ‘অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সেটি আপ্যায়ন ব্যয় বাবদ খাত থেকেই উল্লেখ করে দেওয়া আছে। ভ্যাকসিন প্রয়োগ নিয়ে নানা রকম প্রচার প্রোপাগান্ডা আছে। সেগুলো দূর করার কিছু বিষয় থাকে। ভ্যাকসিন প্রয়োগ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া স্বেচ্ছাসেবকদের ইনসেনটিভের কিছু বিষয় আছে। সারাদেশে মাঠ পর্যায়ে কয়েক মাস যাবত যারা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন তাদেরও কিন্তু কিছু আপ্যায়ন খরচ আছে। ৫০ হাজারের বেশি কর্মী এই কর্মসূচিতে অংশ নেবে। তাদের সবার জন্য তো কিছু খরচ আছে। আর সেদিকেই মূলত এই অর্থ ব্যয় করা হবে।’
এর আগে স্বাস্থ্য অধিদফতর তাদের প্রস্তাবে আপ্যায়ন ব্যয়ের জন্য ৮৯ কোটি ৮৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা এবং প্রচার ও বিজ্ঞাপন ব্যয়ের জন্য ১৪ কোটি ১৭ লাখ ৩৮ হাজার টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করে। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে প্রচার ও বিজ্ঞাপনের ব্যয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিজস্ব বাজেট থেকে করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে। তবে প্রচার ও বিজ্ঞাপন খাতে কোনো বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।
উল্লেখ্য, ২৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম শুরু করা হয়। পরবর্তীতে ২৮ জানুয়ারি রাজধানীর পাঁচটি হাসপাতালে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়। এই দুই দিনে দেশে সর্বমোট ৫৬৭ জনকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কর্মসূচি শুরু করতে যাচ্ছে সরকার।
সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম
৯০ কোটি অর্থ বিভাগ অর্থ মন্ত্রণালয় আপ্যায়ন বরাদ্দ কার্যক্রম নভেল করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন স্বাস্থ্য অধিদফতর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়