Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নিয়োগেও কাটছে না সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ সংকট

তুহিন সাইফুল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৮:২৫

ঢাকা: দেশের সরকারি কলেজগুলোতে শিক্ষক সংকট নতুন কোন ঘটনা নয়। তবে গত কয়েক বছর ধরে যে বিষয়টি ‘গোদের উপর বিষফোঁড়া’ হয়ে দাঁড়িয়েছে সেটি হলো অধ্যক্ষ সংকট। গেল বছরের শেষ দিকে এসে সেই সংকট কাটাতে তোড়জোড় শুরু করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। এই জানুয়ারি মাসে এসে তড়িঘড়ি করে নিয়োগও দেওয়া হয়েছে ৪৬ জন নতুন অধ্যক্ষ। তবুও কাটছে না সংকট।

দেশে বর্তমানে সরকারি কলেজের সংখ্যা ৬৩২। এর ১৪৫টি কলেজ বর্তমানে চলছে কোনো অধ্যক্ষ ছাড়াই। এমনকি ৩০টিরও বেশি কলেজে নেই উপাধ্যক্ষও। এছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষকের পদ ফাঁকা রয়েছে প্রায় তিন হাজার। শিক্ষক সংকটের কারণে মফস্বল অঞ্চলের বেশির ভাগ সরকারি কলেজই চলছে খুঁড়িয়ে।

বিজ্ঞাপন

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সরকারি কলেজের কয়েকজন সহকারী অধ্যাপক সারাবাংলার কাছে অভিযোগ করেছেন, বিশেষ আনুগত্য ছাড়া এখন আর অধ্যাপক নিয়োগ হচ্ছে না। এ জন্য অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেওয়ার মতো শিক্ষকের কোনো অভাব না থাকলেও অধ্যক্ষের পদগুলো খালি পড়ে রয়েছে। এতে করে শিক্ষার্থীরা সঠিক দিকনির্দেশনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি কলেজে অধ্যক্ষ নিয়োগ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেই সূত্রে জানা যায়, অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পেতে অনেক শিক্ষক আবেদনও করেছেন। তবেও কিছু জটিলতার কারণে এখনো আংশিকভাবে অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ সূত্রে আরও জানা গেছে, অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ নিয়োগ দিতে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়ে গেছে। এ বছরের মধ্যে খালি থাকা প্রতিটি কলেজে অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হবে।

বিজ্ঞাপন

২০১৪ থেকে ১৮ সাল পর্যন্ত মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্যদের তালিকা করে সেখান থেকে সরকারি কলেজগুলোতে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হতো। এখন নিয়মটি বাদ দিয়ে একটি নতুন নীতিমালা হয়েছে। নতুন নিয়মে প্রতিবছর জুলাই ও ডিসেম্বর মাসে কলেজের শীর্ষ দুই পদের জন্য আগ্রহী শিক্ষকদের কাছ থেকে অনলাইনে আবেদন নেওয়া হয়। এরপর জ্যেষ্ঠতা, যোগ্যতা, দক্ষতা ও সুখ্যাতি বিবেচনা করে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ যতদ্রুত সম্ভব নিয়োগ করা হয়।

এ ব্যাপারে রাজধানীর ঢাকা কলেজে সদ্য পদায়ন হওয়া অধ্যক্ষ আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার বলেন, ‘কোনো কলেজে নিয়মিত অধ্যক্ষ না থাকলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়। কেবল শিক্ষার্থীরাই নন, কলেজ প্রশাসনও পড়েন বিপাকে। এখান থেকে উত্তরণ করা না গেলে ভালো পাঠদান করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।’

মাউশির মহাপরিচালক সৈয়দ গোলাম ফারুক বলেন, ‘একটি কলেজে অধ্যক্ষ না থাকলে কী কী সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়ে  সেসব আমাদের জানা রয়েছে। এ জন্যই দ্রুত এই সংকট কাটাতে কাজ হচ্ছে। আমরা এরইমধ্যে ৪৬ জন নতুন অধ্যক্ষ নিয়োগ দিয়েছি। বাকি কলেজগুলোতেও অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়ার কাজ এগিয়ে চলেছে।’

মাউশি মহাপরিচালক যে ৪৬টি সরকারি কলেজে নতুন অধ্যক্ষের কথা উল্লেখ করেছেন, তাদেরকে ২ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) পদায়ন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড. শ্রীকান্ত কুমার চন্দ স্বাক্ষরিত পদায়নের আদেশে বলা হয়, বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারের এসব কর্মকর্তাদের পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত তারা এ পদে দায়িত্ব পালন করবেন।

এ ব্যাপারে শ্রীকান্ত কুমার চন্দ বলেন, ‘শিক্ষক-কর্মকর্তা পদায়ন একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এখন সংকটের কথা সবাই বলছেন আমরাও তা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছি। যে কলেজগুলো এখনো অধ্যক্ষ শূন্য সেখানেও দ্রুত পদায়ন করা হবে। মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে যত্নশীল।’

৪৬ নতুন অধ্যক্ষের তালিকা: ঢাকা কলেজের নতুন অধ্যক্ষ হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে কবি নজরুল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আইকে সেলিম উল্লাহ খোন্দকারকে। আর তিতুমীর সরকারি কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আমেনা বেগমকে কবি নজরুল সরকারি কলেজের নতুন অধ্যক্ষ হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে।

নোয়াখালীর চাটখিল পাঁচগাঁও মাহবুব সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ করা হয়েছে মাহবুবুর রহমান, রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ তুষার কান্তি বড়ুয়া, চৌদ্দগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ শিব প্রসাদ দাস গুপ্ত, সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ অধ্যক্ষ মো. আরিফ হাসান চৌধুরী, ঢাকার সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ অধ্যক্ষ মো. গোলাম ফারুক, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ অধ্যক্ষ সাবিকুন নাহার।

বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব সরকারি মহাবিদ্যালয়ে অধ্যক্ষ ড. অর্চ্চনা দত্ত, দুয়ারিপাড়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ সুফিউন নাহার, ধামরাই সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ড. মো. সেলিম মিয়া, ফরিদপুর সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের অধ্যক্ষ খুরশীদ সোলায়মান, সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজ, ফরিদপুরের অধ্যক্ষ কাজী গোলাম মোস্তফা, নগরকান্দা মহাবিদ্যালয়, ফরিদপুরের অধ্যক্ষ হিসেবে মো. আসাদুল আলম খানকে পদায়ন করা হয়েছে।

মাদারীপুরের শিবচরের বরহামগঞ্জ সরকারি কলেজে অধ্যক্ষ শামীমা আক্তার, সরকারি সফল আলী কলেজ, আড়াইহাজরের অধ্যক্ষ মো. গিয়াস উদ্দীন, শহীদ আসাদ সরকারি কলেজ, শিবপুর, নরসিংদীর অধ্যক্ষ ড. মো. শফিউল কাফী, ব্রজমোহন (বিএম) কলেজ অধ্যক্ষ ড. মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া, বরিশাল সরকারি কলেজ অধ্যক্ষ মো. আব্বাস উদ্দিন খান, গৌরনদী সরকারি কলেজ বরিশালের অধ্যক্ষ মাহাবুবুল ইসলাম, ঝালকাঠি সরকারি মহিলা কলেজ অধ্যক্ষ মো. হেমায়েত উদ্দিন, বাউফল সরকারি কলেজ অধ্যক্ষ মো. আবুল বশার তালুকদারকে পদায়ন করা হয়।

রয়েছে শিক্ষক সংকটও: কেবল অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষই নয় সরকারি কলেজগুলোতে রয়েছে শিক্ষক সংকটও। দেশের পুরোনো সরকারি কলেজগুলোতে প্রভাষক থেকে অধ্যাপক পর্যন্ত ২ হাজার ৮৭৮টি পদ শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে অধ্যাপকের ১৮৫টি, সহযোগী অধ্যাপকের ২৮৩টি, সহকারী অধ্যাপকের ৩৭৫টি এবং প্রভাষকের ২ হাজার ৩৫টি পদই শূন্য রয়েছে।

সারাবাংলা/টিএস/একে

অধ্যক্ষ সংকট মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর সরকারি কলেজ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর