ভুট্টা থেকে পুষ্টিসমৃদ্ধ তেল উৎপাদনের সম্ভাবনা

ঢাকা: বাংলাদেশে ভুট্টা থেকে তেল উৎপাদনের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছে কৃষি মন্ত্রণালয়। কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, দেশে শিল্প-কারখানা স্থাপন করে বাণিজ্যিকভাবে ভুট্টার তেল উৎপাদন করতে পারলে বিদেশ থেকে তেল আমদানি হ্রাস, অন্যদিকে তেলের দেশজ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। সেক্ষেত্রে উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসলে দেশের কৃষক লাভবান হবে।

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে নাসির স্টার্চ, অয়েল অ্যান্ড অ্যানিমেল ফিড ইন্ড্রাস্টিজ লিমিটেড পরিদর্শন শেষে তিনি এ কথা বলেন। কৃষিমন্ত্রী বলেন, এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে দেশের মানুষের পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতে সহায়ক হবে।

কৃষিমন্ত্রী এ সময় উদ্যোক্তাদের ভুট্টার তেল উৎপাদনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। এ ব্যাপারে সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস প্রদান করেন।

গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. এছরাইল হোসেন বলেন, দেশে বর্তমানে উৎপাদিত ৫৪ লক্ষ টন ভুট্টা থেকে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টন ভুট্টা তেল প্রতি বছর আহরণ করা সম্ভব। যার বাজার মূল্য প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। ভুট্টা তেল তৈরির পাশাপাশি ভুট্টা থেকে কর্ন ফেক্স, কর্ন চিপস তৈরি করাও সম্ভব।

গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্যানুসারে, দেশে ভুট্টা নতুন সম্ভাবনাময় ফসল। বাংলাদেশের মাটি ও জলবায়ু ভুট্টা চাষের অনুকূল। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ত জমিতেও ভুট্টার ভাল ফলন হচ্ছে। কৃষকদের কাছেও ভুট্টা চাষ জনপ্রিয়তা লাভ করছে। ফলে ভুট্টার উৎপাদন ক্রমশ বাড়ছে। বর্তমানে দেশে ভুট্টা চাষের মোট আবাদি জমি ৫.৫ লাখ হেক্টরেরও অধিক। আর উৎপাদন ৫৪ লাখ মে. টন। উন্নত দেশে ভুট্টার বহুমুখী ব্যবহার থাকলেও দেশে শুধু প্রাণী, পোল্ট্রি ও মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। দেশে উৎপাদিত ভুট্টার অধিকাংশই (৯৫%) প্রাণী, হাঁস-মুরগির ফিড ও মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে, ইদানিং খই ভুট্টা, মিষ্টি ভুট্টা (৫%) হিসেবেও মানুষের খাদ্য হিসেবে বেশ গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছে।

গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্যে আরও জানা যায়, উন্নত বিশ্বে ভুট্টা থেকে র্স্টাচ, ইথানল, জৈব জ্বালানি, তেল উৎপাদনসহ রয়েছে আরও বহুমুখী ব্যবহার। বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় ৫২টি দেশে ভুট্টা থেকে উৎকৃষ্ট মানের ভোজ্য তেল উৎপাদিত ও ব্যবহৃত হয়। ভুট্টা তেল স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিসমৃদ্ধ। এতে কোনো আমিষ বা শর্করা নেই। শতকরা ১০০ ভাগই চর্বি বিদ্যমান। যার পুষ্টিমান অন্যান্য তেলের চেয়ে তুলনামূলকভাবে বেশি। ভুট্টা তেলে বিদ্যমান সম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড ও অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড সয়াবিন ও সূর্যমুখী তেলের সমপরিমাণ। ভুট্টা তেলে ভিটামিন ই (টোকোফেরল) এর পরিমাণ সূর্যমুখী তেলের চেয়ে বেশি।

এ সময় বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. এছরাইল হোসেন, নাসির গ্লাসওয়্যার অ্যান্ড টিউব ইন্ড্রাস্টিজ লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার মো. ফজলুল রহমান, ডিজিএম মো. কাজিমুল বাশার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/জেআর/এএম

ভুট্টা ভুট্টা তেল