কলকাতার প্যারেড গ্রাউন্ডে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের দিনকে স্মরণ
৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৭:৩০
ঢাকা: ১৯৭২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি কোলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে দশ লক্ষের বেশি বাঙালির উপস্থিতিতে ভাষণ দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেদিনের বিগ্রেডে মুজিবের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের মিলনের মধ্যে দিয়ে আমাদের বিজয় উৎসব সম্পন্ন হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন ভারতে সফররত তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
এ বছর ৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের সহায়তায় সেই ঐতিহাসিক দিবসটি স্মরণে আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ সব কথা বলেন ড. হাছান মাহমুদ।
তিনি আরো বলেন, এই ব্রিগেডের মঞ্চে যারা মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা পেয়েছিলেন তাদেরকে আবার সম্মান দিতে পেরে গর্বিত বোধ করছি। ‘যে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, মানবিক-অর্থনৈতিকসহ সকল সূচকে সেই পাকিস্তানকে অনেক পেছনে ফেলে আমরা এগিয়ে গেছি। আজ পাকিস্তানের জনগণ বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নতি দেখে হতাশ হয়। তারা বাংলাদেশের মতো হতে চায়, এখানেই স্বাধীনতার বিরাট সার্থকতা।’
৭২ সালের ব্রিগেডের প্রত্যক্ষ সাক্ষী পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মন্ত্রী সুব্রত মুখার্জি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু পশ্চিমবঙ্গের কাছের মানুষ ছিলেন। ১৯৭২ সালের সেদিন দুপুর একটার মধ্যে কানায় কানায় ভরে গিয়েছিল ব্রিগেড। তিনটের সময় রাজভবন থেকে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ইন্দিরা গান্ধী এই ব্রিগেডে আসেন। আমি তখন মঞ্চের নিচে ছিলাম। এটি আজ পর্যন্ত আমার দেখা ব্রিগেডে সর্বকালের সেরা জনসমাবেশ যেখানে ভাষণ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী সেই ভাষণে ছিলো স্বাধীনতার আনন্দ, স্বজন হারানোর বেদনা, ভারতের প্রতি অকুণ্ঠ কৃতজ্ঞতা ও চিরঞ্জীব সম্প্রীতি আর স্বাধীনতাবিরোধীদের সমালোচনা।’
উল্লেখ্য, ১৯৭২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি কোলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে দশ লাখের বেশি বাঙালির উপস্থিতিতে ভাষণ দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু। তার দেওয়া ঐতিহাসিক ভাষণের ৪৯ বছর পূর্তি দিবসে সেখানে দাঁড়িয়ে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য ভূমিকার কথা বলতে গিয়ে স্মরণ করলেন বঙ্গবন্ধুর উদ্ধৃতি ‘বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী চিরদিন অটুট থাকবে’, স্মারক তুলে দিলেন মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননাভূষিত পশ্চিমবঙ্গের গুণীজনদের হাতে।
১৯৭২ সালে পশ্চিমবঙ্গের তরুণ এমএলএ হিসেবে সেদিনের জনসমুদ্রের প্রত্যক্ষ সাক্ষী পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী সুব্রত মুখার্জি অতিথি হিসেবে ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোহাম্মদ ইমরান ও তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাইমুম সারওয়ার কমল বিশেষ অতিথি হিসেবে এবং কলকাতায় বাংলাদেশ উপহাইকমিশনার তৌফিক হাসানের সভাপতিত্বে প্রথম সচিব (প্রেস) ড. মোফাখখারুল ইকবাল স্বাগত বক্তা হিসেবে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য ভূমিকার জন্য মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননাপ্রাপ্ত ভারতীয় গুণীজনদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন ড. হাছান মাহমুদ ও সুব্রত মুখার্জি।
মৈত্রী সম্মাননা ভূষিতদের মধ্যে জাদুকর প্রদীপ চন্দ্র সরকার, সাংবাদিক মানস ঘোষ, সুখরঞ্জন দাসগুপ্ত, পঙ্কজ সাহা, দিলীপ চক্রবর্তী, মানবাধিকার কর্মী উৎপলা মিশ্রা, অধ্যাপক জিষ্ণু দে ও তার স্ত্রী মীরা দে, প্রণবরঞ্জন রায়, ভাষাবিদ পবিত্র সরকার এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
পাশাপাশি কালজয়ী কবি গোবিন্দ হালদার, কালজয়ী গায়ক মান্না দে, তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ও সাবেক পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ রায়, কংগ্রেস নেতা বিজয় সিং নাহার, উপন্যাসিক মৈত্রী দেবী, সমাজসেবী লেডি রানু মুখার্জি, সমাজসেবী ইলা মিত্র, সাংবাদিক পান্নালাল দাশগুপ্ত, বাম নেতা রনেন মিত্র, আকাশবাণী ঘোষক দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংবাদিক দিলীপ চক্রবর্তী, সাংবাদিক উপেন তরফদার, গায়ক অংশুমান রায়, সাংবাদিক দিলীপ মুখার্জি, লোকসভা ও রাজ্যসভার সাবেক সাংসদ ও সমাজসেবী ফুলরেনু গুহ, সাংবাদিক বাসব সরকার নিবেদিতা নাগ ও নেপাল নাগের মত মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা প্রাপকদের পরিবারের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন ড. হাছান ও সুব্রত মুখার্জি । অতিথিদের সঙ্গে নিয়ে দিবসটি উপলক্ষে কলকাতা উপহাইকমিশন প্রকাশিত স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন করেন তারা।
মন্ত্রীর সফরসঙ্গী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, সফররত তথ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, বিশিষ্ট সাংবাদিক সন্তোষ শর্মা, সুভাষ সিংহ রায়, বাংলাদেশ হাইকমিশন দিল্লির প্রেস মিনিস্টার শাবান মাহমুদ ও অভিনয়শিল্পীসহ বিশিষ্টজনেরা এ সব অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
সারাবাংলা/জেআর/একে