Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রাজনীতিতে এসে ‘মন ভেঙেছে’ রেজা কিবরিয়ার, গণফোরাম থেকে পদত্যাগ

আজমল হক হেলাল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৮:৫৪

ফাইল ছবি

ঢাকা: দেড় বছর আগে গণফোরামের রাজনীতিতে এসে বেশ বাজিমাত করেন আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া। অনেক সিনিয়র নেতাদের ডিঙিয়ে তিনি সাধারণ সম্পাদকও হয়েছিলেন। রেজা কিবরিয়ার আশা ছিল, রাজনীতির মেরুকরণে ড. কামাল হোসেন ক্ষমতায় যাবেন। সে সময় কামাল হোসেনের মসনদের পাশে থাকবেন রেজা কিবরিয়া।

কিন্তু দেড় বছর পর স্বপ্ন ভেঙেছে রেজা কিবরিয়ার। দলীয় কর্মকাণ্ডে তার মনও ভেঙেছে। এ কারণে গণফোরামের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন রেজা কিবরিয়া।

বিজ্ঞাপন

যদিও ড. রেজা কিবরিয়ার পদত্যাগপত্র এখনো গৃহীত হয়নি। তবে দলটির অন্যান্য নেতারা পদত্যাগপত্র গ্রহণ করার ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন।

রেজা কিবরিয়া না থাকলে দলটির সাধারণ সম্পাদক হতে যাচ্ছেন আ হ ম শফিউল্লাহ। দলের একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। দুএকদিনের মধ্যে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হবে।

দলটির একজন নেতা জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া জাতিসংঘের একটি প্রকল্পের উচ্চপদে কর্মরত ছিলেন। রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাবেন ড. কামাল হোসেন এমন স্বপ্ন দেখিয়ে, সেখান থেকে ড. কামাল হোসেন তাকে গত দেশে ফিরিয়ে আনেন।

ক্ষমতার মোহে জাতিসংঘের চাকরি ছেড়ে দেশে আসেন রেজা কিবরিয়া। গত নির্বাচনে তার বাবার আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। লক্ষাধিক ভোটও পেয়েছিলেন কিন্তু তিনি নির্বাচিত হননি।

এ সর্ম্পকে জানতে ড. রেজা কিবরিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা তিনি বলেন, ‘আমি একটি ভালো চাকরি করতাম। আমি ভাবছিলাম আমরা ক্ষমতায় যাব।’ কী কারণে দল থেকে পদত্যাগ করলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এখন বলতে পারছি না। বিষয়টি আরও জটিল।’

বিজ্ঞাপন

অপরদিকে ড. রেজা কিবরিয়া গ্রুপের এক নেতা বলেন, ‘আমিও শুনেছি ড. রেজা কিবরিয়ার স্বপ্নের কথা।’

তিনি জানান, ড. রেজা কিবরিয়াকে তিনি গত নির্বাচনের আগে আর কখনো দেখেননি। রেজা কিবরিয়া গণফোরামের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর তিনি কাছ থেকে দেখেছেন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বেও খ্যাতিমান বক্তিবর্গেও সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। তার মতে রাজনীতির বাইরে ড. কামালের নেতৃত্বে বিকল্প কোনো শক্তির মেরুকরণ হলে সেখানে রেজা কিবরিয়াকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

গত বছরের মে মাসে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলের পর থেকেই মূলত গণফোরামের অভ্যন্তরীণ কোন্দল দেখা দিতে থাকে।

এর আগে, গত ২ মার্চ দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশতাক আহমেদের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে দুই সাংগঠনিক সম্পাদকসহ চার কেন্দ্রীয় নেতাকে বহিষ্কার করা হয়।

এই চার নেতা হলেন সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট হেলাল উদ্দিন ও লতিফুল বারী হামিম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক খান সিদ্দিকুর রহমান এবং প্রবাসীকল্যাণ সম্পাদক আব্দুল হাছিব চৌধুরী।

পরদিন ৩ মার্চ ওই বহিষ্কৃত চার নেতা বহিষ্কার করেন দলের সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া, সহ-সভাপতি মহসীন রশীদ ও সহসভাপতি শফিকউল্লাহ এবং যুগ্ম সাধারণ মোস্তাককে।

পাল্টাপাল্টি এই বহিষ্কারের পর ৪ মার্চ এক বিজ্ঞপ্তিতে গণফোরামের চেয়ারম্যান ড. কামাল হোসেন কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। নিজেকে আহ্বায়ক ও আগের কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়াকে সম্পাদক রেখে ওই বিজ্ঞপ্তিতে দুই সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন তিনি। পরে ১২ মার্চ পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটিও ঘোষণা করেন তিনি।

বিরাজমান এই বিরোধ মীমাংসার জন্য ড. কামাল হোসেন নিজে একাধিকবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। পরবর্তী সময়ে ড. কামালসহ বিবদমান দুই অংশের পাঁচজন করে মোট ১১ জন নেতার সমন্বয়ে দলের একটি স্টিয়ারিং কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হলে কমিটির তালিকায় আগে পরে নাম নিয়ে এবং নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বের বিষয় নিয়ে নতুন করে আবার বিরোধ দেখা দেয়। ফলে দুই অংশের বিরোধ মীমাংসার ঘোষণা আটকে আছে।

এ সব বিষয় নিয়ে মোস্তফা মহাসিন মন্টু গ্রুপের নেতা আ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘ড. কামাল হোসেনকে সামনে রেখে গণফোরামের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। তবে বিরাজমান সংকট দূর না হলে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

অ্যাডভোকেট জগলুল আফ্রিদ বলেন, ‘আমরা অপেক্ষায় আছি ড. কামাল স্যার কী পদক্ষেপ নেন। তার পদক্ষেপের পর দলটির কাউন্সিলসহ অন্যান্য কার্যক্রম শুরু হবে।’

তিনি জানান আপতত ড. কামাল হোসেনকে গণফোরাম থেকে বাদ দেওয়ার চিন্তাভাবনা নেই।

ড. রেজা কিবরিয়া গ্রুপের নেতা শফিউল্লাহ বলেন, ‘গণফোরামের বিরাজমান সংকট নিরসনের কোনো লক্ষণ দেখছি না।’

এদিকে আজ রেবাবার (৭ ফেব্রুয়ারি) এক বিবৃতিতে ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীর সদয় অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, আমি গণফোরামের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে পদত্যাগ করেছি এবং আমার পদত্যাগপত্র দলের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের কাছে এরইমধ্যে জমা দিয়েছি। এ ছাড়া আমি গণফোরামের দলীয় সদস্যপদ থেকেও ইস্তফা দিয়েছি।’

আমাকে দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য আমি ড. কামাল হোসেন ও গণফোরামের নেতৃবৃন্দের প্রতি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। গত ১৮ মাস ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে কাজ করতে পেরে আমি অত্যন্ত সম্মানিত বোধ করছি।

আপনারা জানেন যে আমি ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ছেড়ে আনুষ্ঠানিকভাবে গণফোরামে যোগ দিই। গণফোরামে যোগ দেওয়ার পূর্বে আমি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সরকারি নীতি নিয়ে কাজ করি। এক পর্যায়ে আমার মনে হয়েছে যে নিজ দেশের জনগণের জন্য কাজ করার সময় এসেছে। এ ধরনের সুযোগ হয়তো ভবিষ্যতে নাও আসতে পারে, কিন্তু আমার বাবা শাহ এ.এম.এস. কিবরিয়ার মতো, আমি জনগণের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে চাই।

বাংলাদেশে যারা গণতন্ত্র, সামাজিক ন্যায়বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে আমি তাদের সঙ্গে কাজ করে যাব। আমি আমাদের তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে অনেক আশাবাদী। আমি মনে করি তরুণরা বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনা সম্পর্কে ধীরে ধীরে সচেষ্ট হয়ে উঠছে।

আমি দেশের মানুষ ও গণমাধ্যম যারা আমাকে বিগত মাসগুলোতে সাহস যুগিয়েছেন ও সহযোগিতা করেছেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আশা করি আগামী দিনগুলোতে আমরা দেশে মুক্তি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একযোগে কাজ করে যাব।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/একে

গণফোরাম ড. কামাল রেজা কিবরিয়া

বিজ্ঞাপন

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর