পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির নির্বাচনি রথযাত্রা
৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৭:৫৬
নির্বাচনকে সামনে রেখে পশ্চিমবঙ্গে রথযাত্রা শুরু করেছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মোট পাঁচটি রথ বের হয়ে বিজেপির পক্ষে নির্বাচনি প্রচারণা চালাবে। খবর ডয়চে ভেলে।
প্রথম রথটি বের হয়েছে নবদ্বীপ থেকে। যাত্রার উদ্বোধন করেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা। চলতি সপ্তাহেও আরও রথযাত্রা উদ্বোধন হওয়ার কথা রয়েছে। নির্বাচনের আগে বিজেপির এই রথযাত্রা পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে নতুন মোড় তৈরি করতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
কারণ, এই রথযাত্রাকে সামনে রেখে ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নেতাদের উড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গে আনার পরিকল্পনা করছে বিজেপি। ওই তালিকায় রয়েছেন, উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগি আদিত্যনাথ থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
এদিকে, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সাংগঠনিক জোন রয়েছে পাঁচটি। পাঁচ জোন থেকে পাঁচ রথ বের করার পরিকল্পনা করেছে বিজেপি। পাঁচটি রথ রাজ্যের প্রতিটি বিধানসভা এলাকার মধ্য দিয়ে যাবে। প্রতিদিনই রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে এক বা একাধিক জনসভার পরিকল্পনা করছে দলটি। ওই জনসভাগুলোতেই কেন্দ্রীয় নেতা-মন্ত্রীদের যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। নির্বাচনে রথযাত্রা বিজেপির রাজনীতিতে নতুন কোনো কিছু নয়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে বিজেপির এই কৌশল অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। এর আগে উত্তর ভারতে, বিশেষ করে হিন্দি বেল্টে বিজেপি নির্বাচনের আগে রথযাত্রা করেছে।
বিজেপির রথযাত্রায় মূলত একটি বাসকে রথ হিসেবে সাজানো হয়। বাসের ওপর একটি স্বয়ংক্রিয় মঞ্চ তৈরি করা হয়। নেতারা ওই মঞ্চ থেকে ভাষণ দেন। বাসটির একটি নির্দিষ্ট রুট থাকে। বাসের সামনে-পেছনে গাড়ি এবং মোটরবাইক নিয়ে কর্মীরা যোগ দেন। অর্থাৎ, ওই রথযাত্রাকে কেন্দ্র করেই মিছিল এবং জনসভাগুলো অনুষ্ঠিত হয়।
অন্যদিকে, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগেও বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে রথযাত্রার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু, সে সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি রথযাত্রার অনুমতি দেননি। যা নিয়ে দীর্ঘ দিন কলকাতা হাইকোর্টে মামলাও চলেছিল। নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহরা অভিযোগ করেছিলেন, ভয় পেয়ে মুখ্যমন্ত্রী তাদের রথযাত্রা করতে দিচ্ছেন না। মমতা অবশ্য বলেছিলেন, বিজেপির রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক অশান্তি ছড়াতে পারে। যদিও, বিজেপি সে কথা কখনোই মানতে চায়নি।
বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করেন, ২০১৯ সালে বিজেপিকে রথযাত্রা করতে না দিয়ে মমতা ভুল রাজনৈতিক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। যে কারণে, মানুষের ভাবাবেগ বিজেপির পক্ষে গিয়েছিল। অতীতের সেই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এ বছর বিজেপির রথযাত্রার অনুমোদন দিয়েছেন। তবে, এর পেছনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রচারণা উপদেষ্টা প্রশান্ত কিশোরের হাত রয়েছে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ। প্রশান্ত কিশোরের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ আইপ্যাকের এক কর্মী ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার এবার বিজেপির কোনো প্রচারেই হস্তক্ষেপ করবে না। নেতিবাচক প্রচারের কোনো সুযোগই তাদের দেওয়া হবে না।
বিজেপির রথযাত্রা পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে কতটা প্রভাব ফেলবে? এমন প্রশ্নের জবাবে নাম না প্রকাশের শর্তে রাজ্য বিজেপির এক শীর্ষ নেতা ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, রাজ্য সরকার রথযাত্রায় বাধা দিলে বিজেপির লাভ হতো বেশি। লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি সেই লাভ পেয়েছে। তবে এবারও রথযাত্রা থেকে বিজেপির লাভ হবে বলেই তার ধারণা। এক মাসে রাজ্যের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলে বিজেপির রথ ঘুরবে। সঙ্গে হবে জনসভা। কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তৃতা দেবেন। ফলে প্রচারের সমস্ত আলো বিজেপি’র দিকে থাকবে বলে তিনি মনে করেন।
তবে, তৃণমূল নেতা সৌগত রায় অবশ্য মনে করেন, রথযাত্রা করে বিজেপি শেষ পর্যন্ত বিশেষ সুবিধা করতে পারবে না। কারণ, পশ্চিমবঙ্গের রথযাত্রার প্রভাব হিন্দি বেল্টের মতো হবে না।
বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে রাজ্যে সাম্প্রদায়িক অশান্তি ছড়ায় কি না? সেটাই এখন দেখার বিষয়। যদি তেমন কোনো ঘটনা ঘটে যায়, তাহলে নির্বাচনের ইস্যুই ঘুরে যাবে বলে তারা মনে করছেন। তবে এখনো পর্যন্ত তেমন কোনো সম্ভাবনা পশ্চিমবঙ্গে তৈরি হয়নি।
সারাবাংলা/একেএম
তৃণমূল কংগ্রেস নরেন্দ্র মোদি পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) মমতা ব্যানার্জি রথযাত্রা