‘ছেলে তো ফিরে আসবে না, তবু ন্যায় বিচার হোক’
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০০:১১
ঢাকা: রাজধানীর শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটে নিজের দোকানে প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনকে কুপিয়ে হত্যার পাঁচ বছর পর ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলার রায় ঘোষণা হতে যাচ্ছে। বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মুজিবুর রহমান এ রায় ঘোষণা করবেন। রাষ্ট্রপক্ষ আশা করছে, মামলার আট আসামির সবাইকে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড দেবেন আদালত। আর নিহত ফয়সালের মা-বাবা বলছেন, সন্তানকে ফিরে পাওয়ার কোনো সুযোগ না থাকলেও তারা ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করছেন।
রায় ঘোষণার আগের দিন মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) দীপনের মা ফরিদা প্রধান সারাবাংলাকে বলেন, আমরা ন্যায় বিচার চাই। আসামিরা যদি দোষী হয়, অবশ্যই তাদের শাস্তি হওয়া উচিত। নির্দোষ একজন মানুষকে খুন করা পুরো মানবতাকে খুন করার সমান অপরাধ। আসামিরা দোষী হলে অবশ্যই তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাওয়া উচিত।
ফরিদা প্রধান আরও বলেন, দীপন এমনভাবে শেষ পর্যন্ত চলে গেল— এটা ভাবতেই পারি না। খুব কষ্ট হয়। মুহূর্তের মধ্যে আমাদের জীবন শেষ হয়ে গেল, সব ছাড়খার হয়ে গেল। আমরা তো নিঃস্ব হয়ে গেলাম।
মামলার কার্যক্রম প্রসঙ্গে নিহত দীপনের মা বলেন, শুনেছি একেকজন আসামির জন্য একাধিক আইনজীবী নিয়োগ হয়েছে। মামলাতে অনেক সাওয়াল-জবাব হয়েছে। শেষ পর্যন্ত কী হয়, সেটা তো জানি না। ওদের শাস্তি হলেই তো আর আমাদের ছেলেকে ফিরে পাব না। আমাদের যা যাওয়ার, তা তো গেছেই। তারপরও ন্যায় বিচার হোক। বিজ্ঞ বিচারক নিশ্চয় ন্যায় বিচার নিশ্চিত করবেন।
কথা হয় দীপনের বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হকের সঙ্গেও। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, অপরাধীদের বিচার হোক। যারা আমার ছেলেকে হত্যা করেছে, আইন অনুযায়ী তাদের সাজা হোক। বিচারক সবকিছু বিবেচনা করেই রায় দেবেন, সেটিই প্রত্যাশা করছি।
এদিকে, দীপন হত্যা মামলায় সব আসামির অপরাধ প্রমাণে সক্ষম হয়েছে বলে দাবি করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী গোলাম ছারোয়ার খান জাকির। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। মামলাটিতে ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১৬১ ও ১৬৪ ধারায় আসামিদের জবানবন্দি এবং মামলার অন্যান্য আলামত আসামির বিরুদ্ধে গেছে। আশা করছি আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড দেবেন আদালত।
অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবীদের দাবি, রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। তারা বলছেন, আসামিরা সবাই খালাস পাবেন। আদালত তাদের পক্ষে রায় ঘোষণা করবেন।
এই মামলার আট আসামি হলেন— বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়া, আকরাম হোসেন ওরফে হাসিব, মইনুল হাসান শামীম, আ. সবুর, খাইরুল ইসলাম, আবু সিদ্দিক সোহেল, মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন ও শেখ আব্দুল্লাহ। অভিযোগপত্রে পুলিশ বলছে, তারা সবাই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য। তাদের মধ্যে জিয়া ও আকরাম পলাতক। বাকিরা কারাগারে। গ্রেফতার সবাই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর দুপুরের পর শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে জাগৃতি প্রকাশনীর কার্যালয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় দীপনকে। একইদিন কাছাকাছি সময়ে লালমাটিয়ায় শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর কার্যালয়ে ঢুকে প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী আহমেদুর রশীদ টুটুল, লেখক সুদীপ কুমার ওরফে রণদীপম বসু ও প্রকৌশলী আবদুর রহমানকে দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার চেষ্টা করে।
এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহকারী কমিশনার ফজলুর রহমান আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। ২০২০ সালের ১৩ অক্টোবর দীপন হত্যা মামলায় আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সামরিক শাখার প্রধান ও বরখাস্ত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়াসহ আট আসামির বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।
মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, দীপনকে হত্যার নির্দেশদাতা, মূল পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে ছিলেন পলাতক সৈয়দ জিয়াউল হক। আসামি খাইরুল, আবদুস সবুর ও মইনুলকে হত্যা মিশনে যাওয়ার আগে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন।
মামলাটিতে এ পর্যন্ত ২৬ জন সাক্ষীর মধ্যে ২১ জনের সাক্ষ্য নিয়েছেন আদালত। গত ২৩ ডিসেম্বর মামলাটিতে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। যুক্তিতর্ক শেষে গত ১৭ জানুয়ারি ৮ আসামির সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড দাবি করে রাষ্ট্রপক্ষ।
সারাবাংলা/এআই/টিআর