Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এখন আর যুদ্ধের ছবি আঁকে না রোহিঙ্গা শিশুরা


২০ মার্চ ২০১৮ ১২:০৪

।। ওমর ফারুক হিরু, ডিস্ট্রিক্ট্র করেসপন্ডেন্ট।।

কক্সবাজার: মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও রাখাইনদের নির্যাতনে জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গার মাঝে প্রায় ৬ লাখের মত শিশু। এসব শিশুরা খুব কাছ থেকেই দেখেছে নির্যাতন, হত্যা, আগুন লাগিয়ে দেওয়ার দৃশ্য। তাদের চোখের সামনেই মা-বাবাসহ আত্মীয়দের গুলি করে, কুপিয়ে, আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। তাদের দেখা থেকে বাদ পড়েনি ধর্ষণের দৃশ্যও।

সীমান্তের পাহাড়-নদী পার হয়ে আসা শিশুরা এসব ভয়ঙ্কর দৃশ্য ভুলতে পারছিল না। এতে তারা খুব বেশি মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর এসব শিশুদের নিরাপদ আশ্রয়ের পাশাপাশি আনন্দের মাধ্যমে মানসিকভাবে শান্তি দিতে কাজ করছে বাংলাদেশ। যার ধারাবাহিকতায় উখিয়া-টেকনাফের ১২ টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১৩ শ’এর বেশি স্কুল রয়েছে বলে জানা যায় সংশ্লিষ্ট সূত্রে।

দেশি-বিদেশি এনজিও পরিচালিত এসব স্কুলে শিশুদের বিনোদনকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বেশি। যেখানে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে ছবি আঁকাকে।

মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এসব শিশুদের স্কুল পরিচালকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, শুরুর দিকে এসব শিশুদের যখন কাগজ আর রং পেন্সিল দেওয়া হত তখন তারা যুদ্ধের ছবি আঁকত। তারা আঁকত হেলিকপ্টার থেকে গুলিবর্ষণ, হত্যাকাণ্ড, ঘর বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়াসহ নানা নির্যাতনের দৃশ্য। যেসব ছবি আঁকার সময় তাদের চেহারা থাকতো মলিন।

কিন্ত এই শিশুরা এখন আর যুদ্ধের ছবি আঁকছে না। তারা আঁকছে ফুল, বাগান, সাজানো ঘর-বাড়ি, গ্রামের দৃশ্যসহ নানা ধরনের ছবি। এই ছবিগুলো আঁকছে আনন্দের সাথে।

এ ব্যাপারে মনোবিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এসব শিশুরা শান্তি’র পরিবেশ পেয়ে ধীরে ধীরে ভুলে যাচ্ছে ভয়ঙ্কর সেই যুদ্ধের স্মৃতি। যার ফলে তারা এখন আর যুদ্ধের ছবি আঁকছে না। তাই এসব শিশুদের ভাল রাখতে তাদের আনন্দদায়ক পরিবেশ দিতে হবে।

উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইউনিসেফ পরিচালিত প্রজাপতি নামে স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, রোহিঙ্গা শিশুদের আঁকা যুদ্ধের ছবি দেয়ালে টাঙানো থাকলেও ওই মুহূর্তে শিশুরা আঁকছিল ফুল, পাখি আর গ্রামের দৃশ্য। তাদের মধ্যে মঞ্জুর আলী নামে ১১ বছর বয়সী এক রোহিঙ্গা শিশুর সাথে কথা হয়। সে জানায়, মিয়ানমারে তার বাবা-মা দুজনেকেই মেরে ফেলেছে। তার ছোট বোনকে মারা হয়েছে আগুনে পুড়িয়ে। ওই সময়ের কথা মনে পড়লে তার খুবই কষ্ট হয়। তার আঁকা অনেক যুদ্ধের ছবি রয়েছে। কিন্তু সে এখন আর যুদ্ধের ছবি আঁকে না। ফুল, মাছ আর গ্রামের ছবি আঁকছে।

ইউনিসেফ কর্মকর্তা জাহেদ হোসেন পলাশ জানান, ইউনিসেফের উদ্যোগ ৭০৭ টি স্কুল রয়েছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। আর ওসব স্কুলে আনন্দের সাথে লেখা পড়া করছে ৮২ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা শিশু। এছাড়া এই এনজিও সংস্থার পরিকল্পনা রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ স্কুল স্থাপন করা।

একইভাবে ‘মুক্তি‘ নামে আরেকটি দেশীয় এনজিও সংস্থা কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইমরান হোসেন জানান, রোহিঙ্গা শিশুদের বিনোদনের জন্য সরকারের নানা উদ্যেগ বাস্তবায়নের দেশি-বিদেশি এনজিও সংস্থাগুলো কাজ করছে। আর এই কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে যাতে করে কোন রোহিঙ্গা শিশু মানসিক চাপে না থাকে।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেনটাল হেলথ এর সহযোগী অধ্যাপক ও শিশুদের মানসিক উন্নয়নে কাজ করা মনোবিশেষজ্ঞ হেলাল উদ্দিন আহাম্মেদ জানান, আশপাশের পরিবেশের ওপর’ই প্রতিফলিত হয় শিশুদের চিন্তা-ভাবনা এবং আচরণ। ফলে যে সব শিশু যুদ্ধের অভিজ্ঞতা আর সহিংসতার মধ্যে রয়েছে ওসব শিশুদের চিন্তা প্রকাশ ভঙ্গির মধ্যে সেই আগ্রাসন আর যুদ্ধের প্রতিছবি ফুটে উঠবে।

ঠিক যেভাবে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের শিশুদের মধ্যে হয়েছে। কিন্তু যখনই এসব শিশুরা একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরে পেয়েছে, সেবা পাচ্ছে এবং নিরাপত্তা পাচ্ছে। তখন তারা নিরাপদ বোধ করছে এবং আনন্দিত হচ্ছে। যার ফলে তারা ফুল আর শান্তির ছবি আঁকছে।

তাই এসব শিশুদের জন্য সবসময় এই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে তাদের বিকাশটা স্বাভাবিক হবে আর শান্তিপূর্ণ হবে। আর তারা যদি সংঘাতপূর্ণ পরিবেশে বড় হয় তাহলে তাদের সমস্ত আচরণ সংঘাতপূর্ণ হবে।

সারাবাংলা/এমএইচ/একে


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

কুষ্টিয়া থেকে সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:২৮

সম্পর্কিত খবর