ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে ক্ষোভ, ইমু-দস্তগীরের ছবিতে আগুন
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২২:২১ | আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২২:২৫
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজ ছাত্রলীগের সদ্যঘোষিত কমিটি নিয়ে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে নেতাকর্মীদের বড় একটি অংশের মধ্যে। কমিটি ঘোষণার পর সড়কে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছেন তারা। তাদের দাবি, কলেজটিকে শিবিরমুক্ত করার পর যারা ছাত্রলীগকে ক্যাম্পাসে সংগঠিত করেছেন, তাদের বাদ দিয়ে ছাত্রদল-শিবিরের কর্মীদের দিয়ে কমিটি করা হয়েছে।
বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাত ৮টার দিকে নগরীর চকবাজার এলাকায় মহসীন কলেজের সামনে বিক্ষোভ করেন কয়েক’শ নেতাকর্মী, যারা কলেজটির শিক্ষার্থী।
এর আগে, বুধবার বিকেলে সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজ ছাত্রলীগের ৪২ সদস্যের আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে আহবায়ক করা হয়েছে কাজী নাঈমকে। নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ও সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর কমিটির অনুমোদন দেন।
ঘোষণার পর রাত ৮টার দিকে কমিটিতে সঠিকভাবে মূল্যায়ন না হওয়ার অভিযোগে এবং পদবঞ্চিত একদল নেতাকর্মী প্রথমে কলেজ ক্যাম্পাসে মিছিল করেন। এরপর তারা সড়কে নেমে আসেন। সেখানে ইমু ও দস্তগীরের ছবিতে আগুন দিয়ে তারা বিক্ষোভ করেন। এসময় তারা ইমু-দস্তগীরের বিরুদ্ধে স্লোগানও দেন। নতুন কমিটিতে বঞ্চিতদের বড় অংশ নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনির অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
জানতে চাইলে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান খোন্দকার সারাবাংলাকে বলেন, ‘একদল ছাত্র প্রথমে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছে। পরে তারা সড়কেও আসে। বক্তব্য রেখে আবার ক্যাম্পাসে ফিরে গেছে। অপ্রীতিকর কিছুই হয়নি।’
কমিটি ঘোষণার পর কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে তিন নম্বর যুগ্ম আহবায়ক আনোয়ার পলাশ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরাই মহসীন কলেজে ছাত্রলীগকে সংগঠিত করেছি। শিবিরের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। শিবিরের সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হয়েছি। কিন্তু কমিটিতে আমাদের মূল্যায়ন না করে জুনিয়রদের আমাদের ওপরে বসানো হয়েছে। আহবায়ক করা হয়েছে একজন মোবাইল চোরকে। একসময় কলেজে আমরা ৫-৭ জন মিলে মিছিল করতাম। এখন আমার পেছনে ১০০ কর্মী থাকে। এতকিছুর পরও আমাদের বঞ্চিত করা আমাদের অনেকের ক্যারিয়ারটা ধ্বংস করা হয়েছে।’
পাঁচ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক মায়মুন উদ্দিন মামুন সারাবাংলাকে বলেন, ‘মহসীন কলেজকে শিবিরমুক্ত করার ক্ষেত্রে যারা ভূমিকা রেখেছে, যারা ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের রাজনীতি সংগঠিত করেছে, তাদের বাদ দিয়ে নিজেদের লোকজনকে সামনে রেখে কমিটি করা হয়েছে। কমিটিতে যারা বড় বড় পদ পেয়েছেন তারা কেউই অতীতে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না।’
বিক্ষোভের সময় পদবঞ্চিত এক ছাত্রলীগ কর্মী সারাবাংলাকে বলেন, ‘মোবাইল চোর, ছাত্রদল-শিবিরের কর্মীদের দিয়ে কমিটি করা হয়েছে। আমরা এই কমিটি মানি না। বর্তমান চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের মেয়াদ নেই। তাদের কমিটি ঘোষণারও এখতিয়ার নেই।’
দীর্র্ঘসময় ধরে ছাত্রশিবিরের নিয়ন্ত্রণে থাকা চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ ও সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজে ২০১৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে ছাত্রলীগ। এরপর থেকে কার্যত এই দুই কলেজে শিবিরের কার্যক্রম নেই। শিবিরমুক্ত ক্যাম্পাসে এখন সক্রিয় আছে একমাত্র ছাত্রলীগ।
মহসীন কলেজের কমিটি নিয়ে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘একটি কমিটি হলে কেউ খুশি হন আবার কেউ বিরাগ হন। একটা বড় সংগঠনে এটা থাকবেই। কিন্তু আমরা চেষ্টা করেছি, নির্মোহভাবে সবাইকে রেখে একটা কমিটি করতে। কমিটিতে সবাই আছে। আশা করি সবাই মিলেমিশে কলেজে ছাত্রলীগের রাজনীতিকে এগিয়ে নেবে।’
সারাবাংলা/আরডি/একে