ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় যুবলীগকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান নানক-আজমের
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২৩:১০
ঢাকা: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা, আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যেকোনো ষড়যন্ত্র রুখতে যুবলীগ সবসময় প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন সংগঠনটির সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং সংগঠনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম।
বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের ৪৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এক আলোচনা সভায় তারা এ আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত হন।
যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের কথা তুলে ধরেন জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি বলেন, যুবলীগের আজকের দায়িত্ব একটি বিরাট দায়িত্ব। নেত্রী (শেখ হাসিনা) যে দায়িত্ব আপনাদের দিয়েছেন, সেই পূত-পবিত্র দায়িত্ব আপনাদের পালন করতে হবে। যুবলীগ এমন একটি সংগঠন, যেটি বাংলাদেশের চার কোটি যুবকের সংগঠন। আর এই দেশটি নিয়েই নেত্রী দিনরাত পরিশ্রম করছেন। তাই চার কোটি যুবকের হৃদয় স্পর্শ করার পবিত্র দায়িত্ব যুবলীগকে পালন করতে হবে।
আরও পড়ুন- ‘খালেদা জিয়ার বড়াই করে বলা কথা তার বেলাতেই ফলে গেছে’
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজকের যুব সমাজ শিক্ষা শেষে কাজের নিশ্চয়তা পেয়েছে— এমনটি উল্লেখ করে নানক বলেন, আমরা যে যুবলীগকে স্বপ্ন দেখি, সেই যুবলীগ সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করেছে। সেই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করার দৃঢ় শপথ নিয়েই যুবলীগকে এগিয়ে যেতে হবে। আজ বাংলাদেশে যে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, সেই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে এই যুবসমাজকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে পরশ-নিখিলের নেতৃত্বাধীন যুবলীগের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগের প্রশংসা করেন নানক। তিনি আরও বলেন, আমরা এমন একটি যুবলীগ চাই, যে যুবলীগের চেয়ারম্যান-সাধারণ সম্পাদক ডাক দিলেই এই ঢাকায় মুহূর্তের মধ্যে লাখো যুবক ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে। তেমন একটি যুবলীগই আমরা প্রত্যাশা করি।
আলোচনা সভায় যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, নেত্রীর বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত বহু ষড়যন্ত্র হয়েছে। তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র হয়েছে। আবারও চক্রান্ত চলছে। কয়েকদিন আগে আল-জাজিরার একটি ষড়যন্ত্র প্রকাশ পেয়েছে। এই ষড়যন্ত্রই শেষ নয়, আরও ষড়যন্ত্র হবে। এসব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করার জন্য আমরা শুধু রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর দিকে তাকিয়ে থাকব না। যখনই ষড়যন্ত্র হবে, মোকাবিলা করতে হবে। কে ষড়যন্ত্র করল, সেটি দেখার বিষয় নয়। যুবলীগকে শেখ হাসিনার জন্য নিজের তাজা রক্ত ঢেলে দিতে প্রস্তুত সবসময় প্রস্তুত থাকতে হবে। আমাদের সেই শপথ নিতে হবে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার প্রতি অনুরোধ ও আবেদন জানিয়ে মির্জা আজম বলেন, প্রতিষ্ঠার ৪৮ বছরের মধ্যে কখনো যুবলীগের সংবিধানে বয়সের কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না। গত সপ্তম কংগ্রেসে যুবলীগের ৫৫ বছর পর্যন্ত যুবলীগ করার একটি সীমা আপনি বেঁধে দিয়েছেন।
এসময় মঞ্চে সামনের সারিতে বসা বর্তমান যুবলীগের নেতাদের দেখিয়ে মির্জা আজম বলেন, এই ৫৫ বছর বয়সের কারণে এখানকার অনেকেই আগামীতে যুবলীগ করতে পারবেন না। অনেকেই আছেন, রাজনীতি শুরুর পর থেকেই তারা যুবলীগে জড়িত। কিন্তু আপনি জানেন, কোনো রাজনৈতিক কর্মীই মৃত্যুর আগ পর্যন্ত রাজনীতি থেকে অবসর নিতে চান না। কিন্তু যুবলীগের সাংবিধানিক কারণে ৫৫ বছর হলেই তাকে যুবলীগ থেকে অবসর নিতে হয়। তাই অবসর নেওয়ার পরে যদি আওয়ামী লীগের কোনো পদে তারা পদায়ন হতে পারতেন, তাহলে হয়তো তাদের সৌভাগ্য থাকত। কিন্তু সেই ভাগ্যটা অনেকের হয় না। কেবল সামান্য কিছু নেতার বিভিন্ন পদে পদায়ন হয়। বেশিরভাগ যুবলীগ নেতারাই কোথাও পদ পান না।
‘এ কারণে আপনার কাছে অনুরোধ রাখতে চাই— বাংলাদেশে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ থেকে শুরু করে জেলা আওয়ামী লীগ, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগে বয়সের কারণে যেসব নেতা যুবলীগ করতে পারবেন না, তাদের যেন সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো পদে পদায়ন করা হয়, এরকম একটি নির্দেশনা আপনি দিলে আমার মনে হয় আওয়ামী লীগই সাংগঠনিকভাবে সমৃদ্ধ হবে এবং শক্তিশালী হবে,’— বলেন মির্জা আজম।
আরও পড়ুন- একটি জাতির জন্য ১২ বছর কিছু না: প্রধানমন্ত্রী
২৬ বছর যুবলীগ করার অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে মির্জা আজম বলেন, আপনি আমাকে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়েছেন, আমি অত্যন্ত সৌভাগ্যবান। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি। আমার যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির নানক, তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হয়েছেন। কিন্তু আমাদের সঙ্গে যারা আরও অনেক নেতা ছিলেন, তারা বয়সের কারণে রাজনীতি থেকে বিতাড়িত হয়েছেন, বিদায় নিয়ে চলে গেছেন। এর মধ্যে দুয়েকজনের মহানগর আওয়ামী লীগে জায়গা হয়েছে। বেশিরভাগ নেতারই কোনো পদ-পদবী নেই। তাদের একটি আবদার— তারাও ১৫ আগস্ট, ১৭ মার্চ, ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে মালা দিতে চান। কিন্তু সেই মালা কার সঙ্গে গিয়ে দেবেন? তারা আবেদন করেছেন, আমাকে বলেছেন, নানক ভাইকে বলেছেন— যুবলীগের এই সাবেক নেতাদের মধ্যে যারা কোনো পদ-পদবী পাবেন না, তারা একটি প্ল্যাটফর্ম চান, আপনি যদি অনুমতি দেন। সাবেক যুবলীগ নামে একটি ফোরাম করে নির্দিষ্ট দিবসগুলোতে তারা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিতে চান। আপনি যদি এই অনুমতি দেন, তাহলে যুবলীগের সাবেক নেতারা আপনার কাছে কৃতজ্ঞ থাকবে।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ। সভা পরিচালনা করবেন সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল।
সাবেক চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বিশেষ অতিথি হিসেবে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তন প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন যুবলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ। এছাড়া কবিতা আবৃত্তি করেন নাট্যভিনেতা জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়।
গত ১১ নভেম্বর ছিল যুবলীগের ৪৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় ওই সময় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভা হয়নি। আজ বুধবার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে সেই আলোচনা অনুষ্ঠিত হলো।
সারাবাংলা/এনআর/টিআর
৪৮তম প্রতিষ্ঠা আলোচনা সভা জাহাঙ্গীর কবির নানক টপ নিউজ মির্জা আজম যুবলীগ