সাগর-রুনি হত্যার ৯ বছর, ৭৮ বারেও জমা পড়েনি প্রতিবেদন
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৮:২৪
ঢাকা: সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন নাহার রুনি হত্যা মামলার প্রতিবেদন ৭৮ বারেও দাখিল করতে পারেনি র্যাব। তদন্তে কোনো প্রকার অগ্রগতি না থাকলেও গত ৯ বছরে ৭৮টা অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে জমা দিয়েছে বর্তমান মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা। আদালতের কাছ থেকে দফায় দফায় সময় নিয়েছেন এ তদন্ত কর্মকর্তা।
তবে এ দীর্ঘ সময়েও হত্যা রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেনি র্যাব। এরই মধ্যে পাঁচ বার বদল করা হয়েছে মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা। বহুল আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ৯ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র্যাবের সহকারী পরিচালক শফিকুল ইসলাম এ বিষয়ে সারাবাংলাকে কোনো প্রকার তথ্য জানাতে রাজি হননি।
মামলা বিষয়ে সাগর সরওয়ারের মা সালেহা মনির বলেন, গত ৯ বছর হয়ে গেলো, এখনো সন্তান হত্যার বিচার পেলাম না। কেন তাদের খুন করা হলো সেটাও জানতে পারলাম না। আদৌ মামলার তদন্ত কি শেষ হবে? ইচ্ছাকৃতভাবে বা অদৃশ্য কোনো কারণে না রাজনৈতিক কারণে মামলাটির তদন্ত শেষ হচ্ছে না। মামলার তারিখ আসে আর যায়। উচ্চ আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে র্যাবকে একটা সময় বেঁধে দিক যে, এত দিনের মধ্যে মামলাটির তদন্ত শেষ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, র্যাব যদি রহস্য উদঘাটন করতে না পারে—তাহলে ব্যর্থতা স্বীকার করে মামলা ছেড়ে দিক। অন্য কোনো সংস্থা ঘটনার রহস্য উদঘাটন করবে। অনেক আলোচিত মামলার বিচার শেষ হয়েছে। শুধু সাগর-রুনি হত্যারই বিচার হচ্ছে না কেন? সাংবাদিক হত্যার বিচার হলো না। এটা কেমন কথা।
এদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলেও তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজী হয়নি।
সবশেষ গত ৩ ফেব্রুয়ারি মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ধার্য ছিল। কিন্তু এদিন মামলার তদন্ত সংস্থা র্যাব প্রতিবেদন দাখিল করেনি। এজন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবদাস চন্দ্র অধিকারী প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ১১ মার্চ ঠিক করেন।
২০১২ সালের বছর ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে সাংবাদিক দম্পতি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রুনি নিজ ভাড়া বাসায় নির্মমভাবে খুন হন। পরদিন ভোরে তাদের ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। ওইদিন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ঘটনাস্থলে এসে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেফতার করার কথা বলেছিলেন। কিন্তু সেই ৪৮ ঘণ্টা ফলাফল এখনো ৯ বছরেও শূন্য রয়েছে।
২০১২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি মামলাটির তদন্তের জন্য প্রথম ডিবি উত্তরের পুলিশ পরিদর্শক মো. রবিউল আলম তদন্তভার নেন। এরপের ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি, ওই বছরের ৭ জুন, ২০১৬ সালের ২ অক্টোবর ও সর্বশেষ ২০১৭ বছরের ২১ মার্চ তদন্ত অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। তদন্ত অগ্রগতি সংক্রান্ত প্রতিটি প্রতিবেদনে প্রায় একই ধরনের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলার ৮ আসামির দুই জন বাড়ির দারোয়ান পলাশ রুদ্র পাল ও কথিত বন্ধু তানভীর রহমান জামিনে আছেন। অপর ছয় আসামি মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু, বকুল মিয়া, কামরুল হাসান অরুন, রফিকুল ইসলাম, এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবিল ও আবু সাঈদ কারাগারে আটক আছেন। আসামিদের মধ্যে তানভীর জামিনে আছেন। এ মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার ৮ জনের কেউই এখন পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেনি।
২০১৫ সালের জানুয়ারিতে সাগর-রুনির ভাড়া বাসার নিরাপত্তা প্রহরী এনামুল হক ও পলাশ রুদ্র পাল ১৬১ ধারায় জবানবন্দি দেয়। ২০১৩ সালের আগস্ট মাসে রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মো. সাইদ, মিন্টু, কামরুল হাসান অরুণ ও নিহত দম্পতির বন্ধু তানভীর রহমান এ পাঁচ জনকে মহাখালীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসক নারায়ণচন্দ্র হত্যার ঘটনায় র্যাব ও ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। এ পর্যন্ত ১৫৮ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে র্যাব।
সারাবাংলা/এআই/এমআই