প্রতিবন্ধী শনাক্ত-সুবর্ণ কার্ড কার্যক্রমে দুর্নীতি পেয়েছে টিআইবি
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৮:১৩
ঢাকা: প্রতিবন্ধী ব্যক্তি শনাক্ত করা, সুবর্ণ কার্ড ও ভাতা দেওয়ার ক্ষেত্রে ঘুষ, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ও প্রমাণ পেয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি বলছে, সংশ্লিষ্ট সরকারি বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে একশ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের তদবিরের মাধ্যমে এসব সেবা দেওয়ার তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার (১১ ফ্রেব্রুযারি) এক গবেষণা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে টিআইবি। সংস্থাটি বলছে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির ভাতা পাওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ রয়েছে।
টিআইবি’র গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এনজিওদের একাংশ জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে অনুদান পেয়ে থাকে। অনুদান পাওয়ার ক্ষেত্রে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ২০ থেকে ৭০ হাজার টাকা অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। আর প্রতিবন্ধী ভাতার প্রথম কিস্তি পেতে ২৪ শতাংশ থেকে ৬৭ শতাংশ অর্থ আত্মসাৎ হয়ে থাকে।
বৃহস্পতিবার অনলাইনে ‘উন্নয়নে অন্তর্ভুক্তি ও প্রতিবন্ধিতা: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে টিআইবি। গবেষণার তথ্য তুলে ধরেন টিআইবির প্রোগ্রাম ম্যানেজার (গবেষণা ও পলিসি) ফারহানা রহমান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
প্রতিবন্ধী শনাক্তকরণ ও সুবর্ণ কার্ড সংক্রান্ত অনিয়ম-দুর্নীতি সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোনো কোনো সরকারি হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডাক্তার ও তার সহকারীদের একাংশের বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধী শনাক্তকরণ কার্যক্রমে এক থেকে দেড় হাজার টাকা নিয়ম বহির্ভূতভাবে আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। অধিকাংশ জেলা সদর হাসপাতালে প্রতিবন্ধী শনাক্ত করার কার্যক্রমে দায়িত্বপ্রাপ্ত ডাক্তার ‘অনেক ব্যস্ত’ থাকায় নাগরিকরা সময়ক্ষেপণের পাশাপাশি হয়রানির শিকার হচ্ছেন। উপজেলা বা শহর সমাজসেবা কার্যালয়ে তথ্যভাণ্ডারে নাম অন্তর্ভুক্ত করতে ক্ষেত্রবিশেষে প্রতিবন্ধি ব্যক্তি বা তার স্বজনদের কাছ থেকে দুয়েকশ করে টাকা আদায় করা হয়ে থাকে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় সংসদ সদস্য, সচিবালয়, জেলা প্রশাসন অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশ তাদের আত্মীয়স্বজন ও পরিচিতজনদের সুবর্ণ কার্ড দিতে সমাজসেবা কার্যালয়ে তদবির করেন, যদিও এসব স্বজনরা প্রকৃতপক্ষে প্রতিবন্ধী নন। ফলে প্রকৃত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাই সুবর্ণ কার্ড পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এছাড়া ইউনিয়ন পর্যায়েও জনপ্রতিনিধিদের একাংশের বিরুদ্ধে সুবর্ণ কার্ডের জন্য নিয়ম বহির্ভূতভাবে তিন হাজার টাকা আদায়ের আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। আবার সুবর্ণ কার্ড থাকলেও প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা না পাওয়া ও সুবিধা পেতে মধ্যস্থতার অভিযোগ রয়েছে।
টিআইবি পরিচালিত সেবা খাতে দুর্নীতি বিষয়ক জাতীয় খানা জরিপ ২০১৭-এর তথ্য বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ২৩ দশমিক ৪ শতাংশ খানাকে ভাতায় অন্তর্ভুক্ত হতে নিয়মের বাইরে গিয়ে অর্থ দিতে হয়েছে। এছাড়া সময়ক্ষেপণ, স্বজনপ্রীতি ও প্রতারণার শিকার যথাক্রমে ১৯ দশমিক ৩শতাংশ খানা, ১১ শতাংশ খানা ও ৭ দশমিক ৯শতাংশ খানা। আর ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে যে নতুন ২ লাখ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিসহ অন্যরা ভাতার আওতায় এসেছেন, ক্ষেত্রবিশেষে তাদের ভাতার অর্থের অংশবিশেষ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।
ক্রয় সংক্রান্ত অনিয়ম-দুর্নীতি প্রসঙ্গে টিআইবির গবেষণায় বলা হয়েছে, জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের কেনা বিভিন্ন থেরাপি মেশিন ও অন্যান্য উপকরণ নিম্নমানের। প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের একাংশের পরিচিত ও আত্মীয়দের বাসা ভাড়া নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। যোগসাজশের মাধ্যমে উভয়পক্ষ আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব ভাড়া করা কেন্দ্রের অবকাঠামো প্রতিবন্ধীবান্ধব নয়।
এনজিওদের অনুদান সংক্রান্ত অনিয়ম-দুর্নীতির ব্যাপারে গবেষণায় প্রকাশ পেয়েছে, জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন শর্তসাপেক্ষে এনজিওদের আর্থিক সাহায্য দিয়ে থাকে। সাহায্যপ্রাপ্ত এনজিওদের একাংশ ফাউন্ডেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশের মাধ্যমে অনুদান পেয়ে থাকে। অনুদান পাওয়ার ক্ষেত্রে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ২০ থেকে ৭০ হাজার টাকা অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে।
সভার কার্যবিবরণী সংক্রান্ত অনিয়ম-দুর্নীতির ব্যাপারে টিআইবি বলছে, বছরের নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য কোনো কোনো উপজেলা কমিটি সভা না করেই সভাপতিসহ সবার সই নিয়ে সভার কার্যবিবরণী তৈরি করে।আর
সারাবাংলা/জিএস/টি