সকালে গ্রেফতার, দুপুরেই জামিন
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৫:৩২
ঢাকা: দেশে ফিরেই গ্রেফতার হওয়া সিকদার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রন হক সিকদারকে জামিন দিয়েছেন আদালত। গ্রেফতার হওয়ার পাঁচ ঘণ্টার মধ্যেই তিনি জামিন পেয়েছেন।
শুক্রবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আশেক ইমামের আদালত রন হক সিকদারের আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে জামিন মঞ্জুর করেন।
এদিন দুপুর আড়াইটার দিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান জোনাল টিমের উপপরিদর্শক (এসআই) রিপন উদ্দিন আসামি রন হককে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। অন্যদিকে আসামিপক্ষেন আইনজীবী এ কে এম ফুরকান আলী ও সোহেল আমিন তার জামিনের জন্য আবেদন করেন।
আরও পড়ুন- বিমানবন্দরে নেমেই গ্রেফতার এমডি রন হক সিকদার
শুনানিতে আইনজীবীরা বলেন, সিকদার গ্রুপ দেশের একটি প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। রন হক সিকদারের বাবা এই গ্রুপের চেয়ারম্যান, যিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। বাবার জানাজায় অংশ নিতে তিনি দেশে এসেছেন। এ অবস্থায় মানিবক বিবেচনায় আমরা তার জামিনের প্রার্থনা করছি।
বিচারক দুই পক্ষের শুনানি নিয়ে ৫ হাজার টাকা মুচলেকায় রন হক সিকদারের জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
এর আগে, শুক্রবার সকাল ১০টায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামার পরপরই গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেফতার করে রন হক সিকদারকে। এক্সিম ব্যাংকের দুই কর্মকর্তাকে নির্যাতন ও গুলি করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে রন হক সিকদার ও তার ভাই দিপু হক সিকদারকে আসামি করে মামলা করেছিল ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
গত ১৯ মে গুলশান থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, এক্সিম ব্যাংক থেকে ৫০০ কোটি টাকা ঋণ পেতে আবেদন করে সিকদার গ্রুপ। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৭ মে দুপুর ১২টায় এক্সিম ব্যাংকের গুলশানের প্রধান কার্যালয়ে আসেন রন হক সিকদার ও ন্যাশনাল ব্যাংকের এমডি চৌধুরী মোসতাক আহমেদ। তারা এক্সিম ব্যাংকের এমডি ও অতিরিক্ত এমডিকে ঋণের বিপরীতে জামানত হিসেবে রূপগঞ্জের আদি নওয়াব আসকারি জুট মিল পরিদর্শনে নিয়ে যান। পরিদর্শনে গিয়ে জামানত হিসেবে ওই সম্পত্তির বন্ধকি মূল্য নথিপত্রে দেখানো মূল্যের চেয়ে কম উল্লেখ করলে রন হক সিকদার তাদের আরেকটি প্রজক্ট পূর্বাচলের আইকন টাওয়ার পরিদর্শনে যেতে বলেন। তাতে রাজি হয়ে টাওয়ার পরিদর্শনে গেলেও রন হক সিকদার ও চৌধুরী মোসতাক আহমেদকে না পেয়ে ও প্রকল্পের ভেতরের সড়ক অপরিচিত হওয়ায় এক্সিম ব্যাংকের এমডি ও অতিরিক্ত এমডি ৩০০ ফিট সড়ক ধরে ঢাকায় ফিরতে শুরু করেন। ওই সড়কেই রন হক সিকদার ও ন্যাশনাল ব্যাংকের এমডিকে দেখতে পেয়ে থামেন তারা। সে সময় ন্যাশনাল ব্যাংকের এমডি, এক্সিম ব্যাংকের এমডি ও অতিরিক্ত এমডিকে জানান, বলে দেওয়া নির্ধারিত স্থানে উপস্থিত হতে ব্যর্থ হওয়ায় রন হক অত্যন্ত মনোক্ষুন্ন ও ক্ষুব্ধ হয়েছেন।
এজাহারে বলা হয়, এরপরই রন হক সিকদারের কাছে এক্সিম ব্যাংকের এমডি ও অতিরিক্ত এমডিকে মাফ চাইতে বাধ্য করা হয়। এর কিছুক্ষণ পরই রন হক সিকদার গাড়ির গ্লাস নামিয়ে এক্সিম ব্যাংকের এমডির উদ্দেশ্যে গুলি ছুঁড়লে তা তার বাম কানের পাশ দিয়ে চলে যায়। এরপর আবারও তিনি গুলি করতে উদ্যত হলে এক্সিম ব্যাংকের অতিরিক্ত এমডির গাড়ির পেছনে আশ্রয় নেন। এরপর এক্সিম ব্যাংকের এমডির গাড়িতে ব্যাংকটির অতিরিক্ত এমডিকে তোলা হয়। সে সময় রন হক সিকদারের একজন নিরাপত্তাকর্মীও গাড়িতে ওঠেন এবং এমডি ও অতিরিক্ত এমডির মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বনানীর সিকদার হাউজে নিয়ে যান।
এজাহারে আরও বলা হয়, সেখানে দিপু হক সিকদার ব্যাংকটির অতিরিক্ত এমডিকে মারধরের চেষ্টা করেন। পরে দু’জনকে বিদেশি নিরাপত্তাকর্মীর পাহারায় বসিয়ে রাখা হয়। এরপর রন হক সিকদার ও দিপু হক সিকদার ব্যাংকটির এমডির কাছে একটি সাদা কাগজে জোর করে সই আদায় করে নেন। সই না করলে বিদেশি নিরাপত্তাকর্মী দিয়ে টর্চার সেলে নিয়ে নির্যাতন চালানো হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়। আবার আর এই সইয়ের সাক্ষী করা হয় অতিরিক্ত এমডিকে। এরপর বিকেল সাড়ে ৫টায় সিকদার গ্রুপের চেয়ারম্যান জয়নুল হক সিকদারের কাছে নিয়ে তার সঙ্গে ছবি তোলা হয়। এরপর দুই গাড়িচালকসহ রাত সাড়ে ৭টায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। রন হক সিকদার বাসার নিচে এসে সবার মোবাইল ফোন ফেরত দেন।
সারাবাংলা/এআই/টিআর