৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বিএসএমএমইউতে হচ্ছে শিশু কার্ডিয়াক ইউনিট
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৮:৫৭
ঢাকা: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ শিশু কার্ডিওলজি ও শিশু কার্ডিয়াক সার্জারি ইউনিট। এর মাধ্যমে জন্মগতভাবে শিশুর হৃদরোগ সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনার প্রচেষ্টা চালানো হবে।
এ ছাড়া প্রায় ৩৩ লাখ নবজাতকসহ ১৮ বছরের নিচে প্রায় ৬৭ লাখ শিশু এবং প্রায় ১ দশমিক ৬৮ লাখ জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুর চিকিৎসা সেবা ও সার্জারি দেওয়ার পর জন্মগত হৃদরোগ থেকে মৃত্যুহার সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনার অংশ হিসেবে এটি স্থাপন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ জন্য ‘শিশু কার্ডিওলজি ও শিশু কার্ডিয়াক সার্জারি ইউনিট স্থাপন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৭৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।
প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ৩৬টি সরকারি মেডিকেল কলেজ পর্যায়ে নবজাতকসহ জন্মগত হৃদরোগ আক্রান্ত শিশুর চিকিৎসা সেবা ও সার্জারি নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রশিক্ষিত জনবল গড়ে তোলে ৮০টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ পর্যায়েও তা সম্প্রসারিত করা হবে। এছাড়া নবজাতকসহ জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুর চিকিৎসা সেবা ও সার্জারি বিষয়ে প্রতিবছর প্রায় ২০ জন চিকিৎসককে উচ্চতর শিক্ষা দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠমো ও সুযোগ সুবিধা গড়ে তোলা হবে। সেই সঙ্গে গ্রামীণ জনগণের দোরগোড়ায় শিশু হৃদরোগের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা এবং দেশে শিশু হৃদরোগের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার ওপর আস্থা ও বিশ্বাস দৃঢকরণের মাধ্যমে দেশের বাইরে চিকিৎসার উদ্দেশ্য গমনে নিরুৎসাহিত করা এবং কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, প্রকল্প প্রস্তাবটি নিয়ে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। এতে সভাপতিত্ব করেন কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মোছাম্মৎ নাসিমা বেগম।
প্রক্রিয়াকরণ শেষে অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে শুরু হয়ে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।
পিইসি সভার কার্যপত্রে বলা হয়েছে, ওই সভায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে অত্যাধিত ব্যয় সম্পর্কে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এগুলো হলো রাজস্ব খাতে আপ্যায়ন ব্যয় ৫ লাখ টাকা, হায়ারিং চার্জ ৩৬ লাখ টাকা, বিদ্যুৎ ৩ লাখ টাকা, ইন্টারনেট ৩ লাখ টাকা, ডাক দেড় লাখ টাকা, প্রচার ও বিজ্ঞাপন খাতে ৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা, বইপত্র ৯ লাখ ৩৮ হাজার টাকা, মুদ্রণ ও বাঁধাই ৮ লাখ ১০ হাজার টাকা, স্টেশনারি ৬ লাখ টাকা, অন্যান্য স্টেশনারি ৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা, সম্মানী ১১ লাখ ৭০ হাজার টাকা এবং উদ্বোধনী ব্যয় বাবদ ২০ লাখ টাকা সংস্থান রাখা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন বলেছে এসব ব্যয় অত্যাধিক মর্মে প্রতীয়মান হয়। তাই এ সব ব্যয় যৌক্তিক করা যেতে পারে।
আরও বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত যন্ত্রপাতির মূল্য যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করা প্রয়োজন। যন্ত্রপাতির স্পেসিফিকেশনে দেশের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যা পিপিআর (পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুল) পরিপন্থি। এ ছাড়া ক্রয় পরিকল্পনায় একাধিক পদ্ধতি রাখা হয়েছে, যা সংশোধন করে পিপিআর অনুসারে করা উচিত।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। বর্তমানে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা প্রায় সতের কোটি। দেশের মোট ২৮ শতাংশের বয়স ১৪ বছর বা তার চেয়ে কম। নিরক্ষরতা, দারিদ্র, পুষ্টিহীনতা এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশের অভাব, রোগ হবে প্রতিষেধকমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করাসহ অন্যান্য কারণে জন্মগত শিশু হৃদরোগীর সংখ্যাও বাংলাদেশে কম নয়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী উন্নত বিশ্বে প্রতি হাজারে ৬ থেকে ৮ জন শিশু জন্মগত হৃদরোগ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে থাকে। বাংলাদেশে এক গবেষণায় প্রতি হাজারে ২৫ জন শিশু জন্মগত হৃদরোগ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে বলে দাবী করা হয়েছে।
স্বাভাবিকভাবেই দেখা যায়, বাংলাদেশে জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা উন্নত বিশ্বের তুলনায় অনেক বেশি। যে সব কারণে, সাধারণত জন্মগত হৃদরোগ হয়ে থাকে সে কারণগুলো দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে অধিক হারে বিদ্যমান। ফলে বাস্তবে দেখা যায়, দরিদ্র এবং অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্তের হার বেশি। সে কারণে একদিকে যেমন জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে, অন্যদিকে দারিদ্রের কারণে সঠিক সময়ে চিকিৎসা গ্রহণ না করা এবং সময়মত জন্মগত হৃদরোগের সার্জারিসহ প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় এ সংখ্যা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে ক্রমাগত বেড়েই চলছে।
বর্তমানে আধুনিক বিশ্বে অপারেশন ছাড়া জন্মগত হৃদরোগ হৃদরোগের চিকিৎসা ও প্রতিকার করার প্রবণতাই বেশ। বিভিন্ন ধরনের হৃদরোগ যেমন, বিএসডি, এএসডি, পিডিএ প্রভৃতি বিনা অপারেশনে ইন্টারভেনশনের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হচ্ছে। এসবের মধ্যে সরু ভাল্ব বড় করা, অপারেশন ছাড়া ভাল্ব প্রতিস্থাপন, স্ট্রেন্ট বসানো দ্বারা রোগ নিরাময় করা হচ্ছে। তা ছাড়া জন্মগত হৃদরোগের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোগীর সার্জারির প্রয়োজন হয়। সঠিক বয়সে সঠিক সময়ে যদি সার্জারি করা যায় তবে ওই সমস্ত রোগীর সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেলবিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণাঙ্গ শিশু কার্ডিওলজি ও শিশু কার্ডিয়াক সার্জারি ইউনিট স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পটি নেওয়া হলে শিশু হৃদরোগীদের চিকিৎসা ও সার্জারির সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি পাবে। তাই বাংলাদেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিদ্যমান শিশু হৃদরোগীদের জন্য হৃদরোগ চিকিৎসা ও সার্জারির সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি করার উদ্দেশ্য বিএসএমএমইউ এই প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে, ভবন নির্মাণ, চিকিৎসা ও শলা চিকিৎসা সরঞ্জামাদি ক্রয়, কম্পিউটার সামগ্রী ক্রয়, আসবাবপত্র ক্রয়, এবং অটোমেশন সফটওয়্যারসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন।
সারাবাংলা/জেজে/একে