কোস্টগার্ডের তৎপরতায় মাদক চোরাচালান কমেছে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১১:৪৭
ঢাকা: বাংলাদেশ কোস্টগার্ড বাহিনীর তৎপরতার কারণে উপকূলীয় অঞ্চলে মাদকের চোরাচালান কমেছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
তিনি বলেন, মাদক ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় এটি নিয়ন্ত্রণ কঠিন। আমাদের সীমান্তগুলোতে আরও বেশি নজরদারির জন্য সংশ্লিষ্ট বাহিনীগুলোকে আধুনিকায়ন করা হচ্ছে।
রবিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের ২৬ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও পদক প্রদান অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বাহিনীগুলোকে আধুনিকায়ন এবং জনবল বৃদ্ধি করা হলেও মাদকের তৎপরতা রয়েছে। তাহলে কি মাদকের চোরাচালান বন্ধে সরকার ব্যর্থ— সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাব স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, মাদক চোরাচালান বন্ধে সরকার ব্যর্থ নয়। এটি নিয়ন্ত্রণে সীমান্তে রোড তৈরি হচ্ছে। সব কাঠামো হয়ে গেলে সীমান্তে চোরাচালান কমবে।
তিনি বলেন, কোস্টগার্ডে জাপান থেকে আনা চারটি অস্ত্র ভ্যাসেল সংযুক্ত করা হয়েছে। আরও চারটি অস্ত্র ভ্যাসেল যুক্ত করা হচ্ছে। প্রয়োজনে বাহিনীটিতে এয়ারউইং সংযোজন করা হবে। সব ধরনের লজিস্টিক সাপোর্ট দিয়ে আধুনিকায়ন করা হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে কোস্টগার্ডে ৪ হাজার সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। এতোদিন নেভি থেকে এ জনবল দেওয়া হতো। তবে কোস্টগার্ডে নিজস্ব জনবল নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। এটি শুরু হলে কোস্টগার্ডের নিজস্ব সদস্য থাকবে যারা স্থায়ীভাবে বাহিনীতে থেকে সেবা দিয়ে যেতে পারবেন।
কোস্টগার্ডের আধুনিকায়নে প্রয়োজনীয় সকল উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৪ সালে বিরোধীদলে থাকাকালীন কোস্ট গার্ডের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। তিনি সংসদে এ সংক্রান্ত একটি বিল উত্থাপন করেন, যার ফলশ্রুতিতে কোস্টগার্ডের যাত্রা শুরু হয়। মাত্র একটি জাহাজ দিয়ে যাত্রা শুরু করা কোস্টগার্ড এখন বিশাল বহরে পরিণত হয়েছে।’
পটুয়াখালীতে একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্রসহ বাহিনীটিকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করতে প্রয়োজনীয় সকল উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
মাদকের চোরাচালান রোধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণে স্থলসীমান্তে বিজিবি কাজ করছে। কিন্তু আমাদের এমন কিছু স্থলসীমা আছে যেখানে বিজিবির একটি বিওপি থেকে আরেক বিওপিতে যেতে ২ দিনও সময় লেগে যায়। তাই আমরা সেসব এলাকায় সীমান্ত সড়ক নির্মাণের কাজ করছি। এগুলো হয়ে গেলে মাদক আরও নির্মূল সম্ভব। শুধু তাই নয়, এসব দুর্গম অঞ্চলে দ্রুত পৌঁছানোর জন্য বিজিবিতে হেলিকপ্টার যুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে কোস্টগার্ড উপকূলীয় এলাকাতেও তাদের অবস্থান নিশ্চিত করেছে। সকলের প্রচেষ্টায় মাদক অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছি, আশা করছি আরও নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বাহিনীটির ২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কোস্ট গার্ডের ৪০ জন সদস্যকে বিভিন্ন কাজে সফলতার জন্য পদক প্রদান করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
এসময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কোস্টগার্ডের নানা সফলতা তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশ কোস্টগার্ড দুই যুগেরও অধিক সময় ধরে সমুদ্র বাণিজ্য ও উপকূলীয় জনগণের নিরাপত্তা বিধানে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাই এ বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সরকার বদ্ধপরিকর। খুব শিগগিরই যুক্ত হবে অত্যাধুনিক অফশোর প্যাট্রল ভেসেল (ওপিভি), হোভারক্রাফ্ট ও অন্যান্য উচ্চপ্রযুক্তি সম্পন্ন জলযান। এ সকল জলযান দ্বারা এ বাহিনী অর্পিত দ্বায়িত্ব পালন করে দেশ ও জাতির কল্যাণ সাধনে তাদের কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
তিনি আরও বলেন, উপকূলীয় এলাকায় অবস্থিত কোস্টগার্ড এর বিভিন্ন বেইজ, স্টেশন ও আউটপোস্টে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে এ বাহিনীর পরিপূর্ণ বিকাশ সুনিশ্চিত করা হবে।
এ সময় কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার এডমিরাল এম আশরাফুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পৃষ্ঠপোষকতা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সুযোগ্য ও যুগপোযোগী দিক নির্দেশনার ফলে এ বাহিনীর আধুনিকায়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সেইসঙ্গে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড এর সদস্যগণ দেশ প্রেমের চেতনা সমুন্নত রেখে তাদের অটুট মনবল, নিরলস কর্মস্পৃহা ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে সরকার কর্তৃক ঘোষিত রূপকল্প ২০৩০ ও ২০৪১ বাস্তবায়নে সর্বদা সচেষ্ট থাকবে মর্মে অঙ্গিকার ব্যক্ত করছি।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীনসহ অন্যান্য সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/এসএইচ/এসএসএ