Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মহামারির দিনে বসন্ত আর ভালোবাসার উৎসব

তুহিন সাইফুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৬:৩৬

ঢাকা: মহামারিতে এমনিতেই ফিকে হয়ে আছে সব, সুতো কেটে গেছে রোজকার জীবনের যাপনের। গেল এক বছর ধরে ঘরবন্দি হয়ে থাকা মানুষের শহরে তারপরও এসেছে বসন্ত। শীতে ধুসর হয়ে যাওয়া বৃক্ষশাখায় লেগেছে দোল খাওয়া বাতাসের শিহরণ। পাখিদের কলকাকলিতে মুখর হতে ফুটেছে ফুল। সেই সঙ্গে পঞ্জিকার তারিখ ধরে এসেছে পশ্চিমা জগতের ভালবাসার দিনটি।

এবারের বসন্ত আর ভালবাসার দিনিটিতেও লেগেছে বিবর্ণ মাহামারির ছোঁয়া। ফলে ঢাকার রাস্তায় হলুদ শাড়ি আর খোঁপায় ফুল গুঁজে এলোমেলো হেঁটে বেড়ানো প্রেমিকাদের ভিড় আজ অনেক কম। কমে গেছে উচ্ছ্বাসও। তবে মহাদেশব্যাপী এই মড়কের দিনেও রমনা আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাদের নিয়মিত যাতায়াত ছিল, তারা আজও এসেছেন কানে ফুল গুঁজে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন কেউ কেউ। চারুকলা থেকেও শোনা গেছে যুগলদের খিলখিল হাসি আর উল্লাসের শব্দ।

বিজ্ঞাপন

তবে কোথাও বলার মতো কোনো অনুষ্ঠান হয়নি বসন্ত ও ভালোবাসার যুগলবন্দি দিনে। কলা ভবনের সামনের বটতলায় যে বসন্ত বরণ উৎসবটি হয়ে আসছে এতবছর ধরে, সেখানে শোনা গেছে কেবলই পাতার সুনসান নীরবতা।

বসন্ত মানেই নতুনের জাগরণ। দীর্ঘ শীতে যে বৃক্ষগুলো পাতা ঝড়িয়ে ডু্ব দেয় মহাজাগতিক ধ্যানে, বসন্ত এসে তাদেরকে জাগায় ফুলেল স্পর্শে। যে পাখি দশ মাস আটকে থাকে নৈঃশব্দের চোরাবালিতে, সেও ‘কুহু’ সুরে মাতোয়ারা করে তুলে প্রাণ। অথছ এই মড়ক প্রাণহীন করে তুলেছে গোটা বসন্তকেই। সেই মলিনতারই ছাপ যেন লেগেছে পোশাক, উৎসব আর আয়োজনে।

উৎসব আয়োজনে ঘাটতি থাকলেও, এই বসন্তে যারা চুল খুলে পথে নেমেছেন তারা নিজেদের মতো করে উপভোগ করছেন দিনটি।

ঢাবির মনোবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম বলছেন, কোথাও কেউ নেই তবে মনের ভেতরে আছে প্রগাঢ় অনুভুতি। সেই অনুভুতি বলছে আনন্দ করো। মৃত্যু মানুষের সুনিশ্চিত যাত্রা সেটা জানি, তবে মৃত্যুর দিকে যেতে হবে উৎসবের উৎসাহে। এ জন্যই এই মড়ক লাগা চলতি হাওয়ার দিনেও আমাদের আনন্দময় পথ হাঁটা।

বিজ্ঞাপন

বাংলা সাহিত্যের শিক্ষার্থী সাদিয়া রাত্রি বলছেন, আমাদের যাপন থেকে এমনিতেই আনন্দ পৃথক হয়ে গেছে। আমরা অভ্যস্থ হয়ে পড়েছি অসুখি থাকার দুষ্টুচক্রে। আছি ভোগের প্রতিযোগিতায়। এটা কি এই শহর নাকি সময়ের দায় সেটি বুঝতেই আজ বের হয়েছি যুগল সন্ধিতে। নিজেদের মতো করে দেখছি এই বিবর্ণ শহর, পার্ক আর অ্যাভিনিউ। কোথাও হয়ত ফুল ফুটেছে, পাখি ডেকেছে, আমরা শোনার চেষ্টা করছি সেই মায়াময় সুরের আহ্বান।

সময়ের সঙ্গ সঙ্গে বসন্ত উৎসব হয়ে উঠেছে আরও বেশি সার্বজনীন। পঞ্জিকা সংশোধনের কারণে এর সঙ্গে আবার যোগ হয়েছে ভালবাসা দিবস। ফলে মড়ক থেকে যাওয়ার পর এই দিনটি যে আরও বেশি প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে সে বিষয়েও ভবিষ্যৎবাণী করে গেছেন তারা।

তাদের কথার সূত্র ধরে খোঁজতে গিয়ে জানা গেল, ভারতের পুরী অঞ্চলে ফাল্গুনের দোল যাত্রা থেকে এই বসন্ত উৎসবের উৎপত্তি। বৈশাখের মতো এই উৎসবেরও প্রবর্তন করেন মোঘল সম্রাট আকবর। এরপর ১৯০৭ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বসন্ত উৎসবের নাম দেন ঋতুরঙ্গ উৎসব। যা ভারতের পশ্চিম বাংলাপ্রদেশের শান্তিনিকেতনে উদযাপিত হয়ে আসছে নিয়মিত। আর এই বাংলায় বসন্ত উৎসব আনুষ্ঠানিক রূপ পায় সাতাশ বছর আগে ১৪০১ বঙ্গাব্দে। সে বছরই জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ ঢাকায় শুরু করে বসন্ত উৎসব।

আর ভালোবাসা দিবসের ইতিহাস অবশ্য তার চেয়েও অনেক পুরনো। রোমান সম্রাটের জারি করা অন্যায় আদেশ অমান্য করে এক সাধুর ভালোবাসার বাণী প্রচার ও করুণ পরিণতি থেকে এই দিনটির সূচনা। তবে এই ভালোবাসা প্রথমে আত্মার পরিশুদ্ধির আহ্বান হলেও পরবর্তীতে এটি রূপ নেয় মানবীয় প্রেম ভালোবাসায়। পঞ্চম শতাব্দীতে পোপ গেলাসিয়াস এই দিনটির প্রবর্তন করেন।

এ দুটি দিবস প্রসঙ্গে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, ‘দুটি দিনই আনন্দের দিন। একই দিনে উদযাপন হওয়ায় সাধারণ মানুষের কাছে এখন থেকে দিন দুটির আবেদন বাড়বে। হিংসাত্মক কর্মকাণ্ডের বদলে মানুষের ভেতর প্রেম, প্রণয় আর মায়া বাড়ুক এটাই আমাদের চাওয়া।’

ছবি ‍তুলেছেন: সারাবাংলার সিনিয়র ফটো করেসপন্ডেন্ট হাবিবুর রহমান

সারাবাংলা/টিএস/একে

বসন্ত ভালোবাসার দিন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর