আড়াই কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নে লেগে যাচ্ছে ৬ বছর!
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৯:৪১
ঢাকা: প্রকল্পের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০১৫ সালের জুলাইয়ে কাজ শুরু হয়ে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে কাজটি শেষ করতে না পারায় তিন দফায় মেয়াদ বাড়ানো হয়। উন্নয়ন কাজটি সম্পন্ন করার জন্য সর্বশেষ ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। তারপরও কাজটি শেষ হয়নি। এবার চুতুর্থ দফায় মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হয়েছে। যদিও এরই মধ্যে পার হয়ে গেছে ছয়টি বছর। মাত্র ২ দশমিক ৫ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্তকরণ ও আনুষাঙ্গিক কার্যক্রম সমাপ্ত করতেই যাচ্ছে এই সময়। ‘রাজশাহী কল্পনা সিনেমা হল থেকে তালাইমারি মোড় পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পে বিরাজ এ চিত্র।
সূত্র জানায়, বর্ধিত যানজট পরিস্থিতে রাজশাহী মহানগরীর কল্পনা সিনেমা হল ধেতে রামচন্দ্রপুর, রাণী নগর হয়ে তালাইমারি মোড় পর্যন্ত এলাকাটি দ্রুত বর্ধনশীল এবং যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী। ২০০৬ সালে রাজশাহী বাইপাস সড়ক চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। রাজশাহী বাইপাস সড়ক চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হওয়ার পর বর্তমান পুরাতন নাটোর রোড সিটির পূর্ব গেট ও পশ্চিম গেট থেকে নগর কেন্দ্রে প্রবেশের সংযোগ সড়ক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। মহানগরীর কল্পনা সিনেমা হল থেকে তালাইমারি মোড় পর্যন্ত সড়কটি পুরাতন নাটোর রোডের একটি অংশ। মহানগরীর পূর্ব প্রান্তে বিভিন্ন অফিস, আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান দ্রুত গতিতে নির্মিত হচ্ছে। ফলে এই এলাকায় জনসংখ্যার ঘনত্ব অন্যান্য এলাকার তুলনায় অনেক বেশি। বর্ধিত জনসংখ্যার চাপে যানবাহনের সংখ্যাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে অফিস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলাকালীন সড়কটিতে অসনীয় যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু মহানগরীর কয়েকটি ব্যস্ততম সড়ক এই সড়কের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে। বর্ধিত যানবাহনের তুলনায় বর্তমান সড়কটি খুবই অপ্রশস্ত। ২ দশমিক ৫০ কিলোমিটার লম্বা সড়কটির প্রশস্ততা ৬৭ ফুট। অপ্রশস্ত সড়ক ও অধিক সংখ্যক যানবাহন চলাচলের জন্য প্রায়ই যানজটের সৃষ্টি হয়। বর্ধিত যানবাহনের চাপে বর্তমান সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এছাড়াও যথাযথ ট্রাফিক ডিজাইন অনুযায়ী নির্মিত না হওয়ায় সড়কটি যানবাহন চলাচলের ত্রুটিপূর্ণ।
এ পরিপ্রেক্ষিতে হাতে নেওয়া এই প্রকল্পটি ২০১৫ সালের ১৯ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পায়। ১২৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৫ সালের জুলাই হতে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে বাস্তবায়নের কথা ছিল। পরবর্তীতে তিন দফায় প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে বাস্তবায়নের জন্য অনুমোদিত হয়। এতেও কাজ শেষ হয়নি। ভূমি অধিগ্রহণের পরিমাণ বৃদ্ধি ও আইনি জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় এবং রেট সিডিউল পরিবর্তনের কারণে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব না হওয়ায় ফের সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ব্যয় ৩৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ১৬৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা এবং মেয়াদ ছয় মাস বাড়িয়ে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এদিকে শুরু থেকে গত নভেম্বর মাস পর্যন্ত প্রকল্পটির ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় হয়েছে ৯৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা, যা মোট অনুমোদিত ব্যয়ের ৭৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ। এছাড়া বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ৭১ শতাংশ।
প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে- ৪ দশমিক ৩২ একর ভূমির ক্ষতিপূরণ, ২০ হাজার ১২৩ দশমিক ৫০ বর্গমিটার কাঠামোর ক্ষতিপূরণ, ২ দশমিক ৫০ কিলোমিটার সড়ক ও মহাসড়ক, চারটি কালভার্ট, ৬ দশমিক ২৩৩ কিলোমিটার নিকাশ কাঠামো, ২ দশমিক ৫০ কিলোমিটার পানি সরবরাহ লাইন স্থানান্তর, ২ দশমিক ৫০ কিলোমিটার লাইন ও তার, ২ দশমিক ৫০ কিলোমিটার গ্যাস লাইন স্থানান্তর, ৫ দশমিক শূন্য ৪ কিলোমিটার ফুটপাত নির্মাণ, ২ দশমিক ৫৩ কিলোমিটার সড়ক বিভক্তিকরণ, এক হাজার মিটার নিরাপত্তামূলক ট্রাফিক কাঠামো, ২ দশমিক ৫৩ কিলোমিটার মিডিয়ানের নিরাপত্ত বেষ্টনী, ২ হাজার ৭৫০ কিলোমিটার রোড মার্কিং, ২ দশমিক ৫০ কিলোমিটার টেলিযোগাযোগ সরঞ্জামাদি স্থানান্তর, ২ দশমিক ৫০ কিলোমিটার সড়ক বাতি স্থাপন, ৫০টি ট্রাফিক সিগনাল স্থাপন এবং ২ দশমিক ৫০ কিলোমিটার সড়কের পাশে ও মিডিয়ানে সৌন্দর্যবর্ধক গাছের চারা রোপণ করা হবে।
প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত প্রথম সংশোধিত ডিপিপিতে ভূমি অধিগ্রহণে ভূমির প্রকৃত পরিমাণ ৩ দশমিক ৩৯৯ একরের পরিবর্তে ৪ দশমিক ৩২ একর করা হয়েছে। এছাড়া কাঠামোর পরিমাণ ২৪ হাজার ১৫১ দশমিক ৯৫ বর্গমিটারের পরিবর্তে ২০ হাজার ১২৩ দশমিক ৫০ বর্গ মিটার করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ৪ হাজার ২৮ দশমিক ৪৫ বর্গ মিটার কমে গেছে। ভূমি অধিগ্রহণে অস্বাভাবিক বিলম্বের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ ব্যয় ২৬ কোটি ২৮ লাখ ৯৪ হাজার টাকার পরিবর্তে ৫০ কোটি ৫৯ লাখ ৯৬ হাজার টাকা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ২৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং কাঠামোর ক্ষতিপূরণ ব্যয় ৭০ কোটি ৮ লাখ টাকার পরিবর্তে ৬৫ কোটি এক লাখ টাকা হয়েছে অর্থাৎ ৫ কোটি ৬ লাখ ৯৪ হাজার টাকা হ্রাস পেয়েছে।
প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসেবে আরও বলা হয়েছে, ভৌত নির্মাণ কাজের এলজিইডি-২০১৯ রেট সিডিউল ও গণপূর্ত বিভাগ-২০১৮ রেট সিডিউল অনুসরণের ফলে দাফতরিক প্রাক্কলিত ব্যয় অনুমোদিত প্রাক্কলিত ব্যয়ের তুলনায় বেড়েছে। এছাড়া বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। এর জন্য জননিরাপত্তা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার স্বার্থে সবধরনের উন্নয়ন কার্যক্রম সরকারি নির্দেশনায় বন্ধ ছিল। কাজটি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের জন্য অতিরিক্ত ৬ মাস অর্থাৎ ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো দরকার।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মামুন আল রশীদ পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, ‘সংশোধিত প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে রাজশাহী মহানগরীর বিদ্যমান রাস্তা প্রশস্তকরণ ও উন্নয়নের মাধ্যমে একটি কার্যকর যানজট মুক্ত নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হবে।’
সারাবাংলা/জেজে/পিটিএম