আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধি: ব্যয় বাড়ছে এলএনজি আমদানিতে
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৮:১১
ঢাকা: একদিকে সীমিত হয়ে আসছে প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুত, অন্যদিকে দিন দিন বাড়ছে চাহিদা। চলতি সেচ মৌসুমেও দেশে চাহিদা বেড়েছে দেড় থেকে দ্বিগুণ। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়তি থাকায় গত দুই মাস ধরে সরবরাহ কম রয়েছে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি)। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় বেশ বেগ পেতে হচ্ছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজসম্পদ করপোরেশন পেট্রোবাংলাকে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী মার্চের মধ্যেই স্বাভাবিক হয়ে যাবে পরিস্থিতি।
জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গ্যাস সংকট মোকাবিলায় ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহের কথা। সেখানে গত ডিসেম্বরে সরবরাহ হয়েছে মাত্র ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। অবশ্য জানুয়ারির শেষে তা বেড়ে ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুটে দাঁড়িয়েছে।
এ প্রসঙ্গে রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (আরপিজিসিএল)-এর ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, বিশ্ববাজারে এলএনজির দাম বৃদ্ধি থাকায় এবার আমদানি কম হয়েছে। উচ্চমূল্যের কারণে এলএনজি আমদানিতে দুই দফা দরপত্র আহবান করেও তা পরে বাতিল করা হয়। ফলে সেখানেও একটা সংকট তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি পুরনে পাইপলাইনে নতুন করে সমস্যা দেখা দিয়েছে।
সূত্র অনুযায়ী, এক বছর আগেও প্রতি মিলিয়ন ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট (এমএমবিটিইউ) তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম ছিল পাঁচ ডলার। তা বেড়ে এখন ২০ ডলারে পৌঁছেছে। এ অর্থবছরে দেশে মোট ৭৬টি এলএনজি কার্গো আমদানির লক্ষ্য রয়েছে সরকারের। এরই মধ্যে ৩৫টি কার্গো এসে পৌঁছেছে। বাকিগুলো আসার অপেক্ষায়। এবার এই পরিমাণ এলএনজি আমদানি করতে বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে সরকারকে।
জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২০-২১ অর্থ বছরে এলএনজি আমদানিতে ব্যয় হবে সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া এলএনজি সরবরাহ করতে টার্মিনালের অপারেশন চার্জ বাবদ আরও ১৪০ কোটি টাকা চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে দিতে হবে। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরে এলএনজি আমদানিতে খরচ হবে ১৭ হাজার ৬৯২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে এলএনজি আমদানিতে ভর্তুকি ছিল আড়াই হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এই ভর্তুকির পরিমাণ ৩১২ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান জানান, এলএনজি আমাদের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা। গত কয়েক মাস ধরে বিশ্ববাজারে এলএনজির দর ওঠানামার মধ্যে রয়েছে। মূল্যবৃদ্ধির বিষয় মাথায় রেখেই এলএনজি সরবরাহে ভারসাম্য রাখতে হচ্ছে।
বিশ্ববাজারে দফায় দফায় এলএনজির দাম বৃদ্ধির কারণে এ নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে জ্বালানি বিশেষজ্ঞদেরও। এ প্রসঙ্গে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, ‘এলএনজি আমদানি অনেক ব্যয়বহুল। সারাবছরের গ্যাসের চাহিদা মেটাতে এলএনজির ওপরে নির্ভর করা ঠিক হবে না। বরং যে পরিমাণ খরচ এলএনজি আমদানিতে হচ্ছে তা দেশের অভ্যন্তরে তেল, গ্যাস অনুসন্ধানে ব্যয় করলে বেশি লাভবান হওয়া যাবে। এতে নতুন গ্যাস পাওয়ার সুযোগ তৈরি হতো।’
উল্লেখ্য, প্রাকৃতিক গ্যাস সংকট বিবেচনায় চড়া মূল্যে এলএনজি আমদানিতে গুরুত্ব দেয় সরকার। কাতার ও ওমান থেকে এলএনজি আমদানি করতে দীর্ঘ মেয়াদে চুক্তি বদ্ধ হয় ২০১৭ সালে। ২০১৮ সাল থেকে আমদানি শুরু করে। সেমিটিক এলএনজি ও যুক্তরাষ্ট্রে এক্সেলারেট এনার্জির স্থাপন করা ভাসমান টার্মিনালের মাধ্যমে আমদানি করা এলএনজি সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রতিটি এফএসআরইউর স্ক্ষমতা দৈনিক ৫০ কোটি ঘনফুট। তিন চার বছরের মধ্যে প্রতিদিন ৪০০ কোটি ঘনফুট এলএনজি আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। বর্তমানে জাতীয় গ্যাস সঞ্চালন লাইনে প্রতিদিন ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সসরবরাহে করা হচ্ছে।
চুক্তি অনুযায়ী কাতার থেকে ১৫ বছর এবং ওমান থেকে ১০ বছর এলএনজি আমদানি করে যাচ্ছে সরকার।
সারাবাংলা/জেআর/এমআই
খনিজসম্পদ করপোরেশন পেট্রোবাংলা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট (এমএমবিটিইউ) রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (আরপিজিসিএল)