চসিক মেয়রের হুঁশিয়ারি— সমন্বয়ে গাফিলতি হলে জবাবদিহি করতে হবে
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৬:৫৭
চট্টগ্রাম ব্যুরো: মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের প্রাক্কালে চট্টগ্রাম নগরীর সেবা সংস্থাগুলোকে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সমন্বয়ের জোরালো তাগিদ দিয়েছেন রেজাউল করিম চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘একটা কথা বারবার বলা হচ্ছে— সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব। পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আমি সব সেবা সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করব। সমন্বয় করতেই হবে। এই সমন্বয়ের ক্ষেত্রে যারা গাফিলতি করবে, তাদের জবাবদিহি করতে হবে। সব সংস্থাই কিন্তু দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের শুধু জনস্বার্থে এক হতে হবে।’
সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণের আগে নগরীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত এক সুধী সমাবেশে এ কথা বলেন তিনি।
আরও পড়ুন- দায়িত্ব নিলেন রেজাউল, ‘মহিউদ্দিনের পথে’ চলার তাগিদ
চসিক মেয়র বলেন, ‘সবার মধ্যে সমন্বয়ের পাশাপাশি দরকার জবাবদিহিতা। অনেকসময় অনেক সমন্বয় সভা হয়েছে। কিন্তু সেসব সভার সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি। সেগুলোর সুফল জনগণ পায়নি। একটা কথা এসেছে— মেয়রের নির্বাহী ক্ষমতা, সেটা থাকা উচিত। তাহলে সমন্বয়টা ফলপ্রসূ হবে।’
শহর শুধু মেয়রের একার নয়— এমন মন্তব্য করে নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রেজাউল বলেন, ‘অনেকে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর মনে করেন শহর শুধু মেয়রের। আমি এই পুরনো ধারা ভাঙতে চাই। শহর শুধু মেয়রের নয়, চট্টগ্রামবাসী সবার এই শহর। চট্টগ্রামকে সুন্দর করে গড়ে তোলার দায়িত্ব আমার যেমন আছে, প্রত্যেকের আছে। এই শহরে মেয়র যেমন থাকে, বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষও থাকে।’
নগরবাসীর উদ্দেশে মেয়র বলেন, ‘আপনারা আমাকে নির্বাচিত করেছেন, আমি আপনাদের প্রতিনিধি। আমি শুধু আপনাদের মুখপাত্র। পাঁচ বছর আপনাদের পরামর্শেই আমি আমার কার্যক্রম এগিয়ে নেব। যে কারও পরামর্শ নিতে আমার কোনো সংকীর্ণতা নেই। আমি যে কারও পরামর্শ গ্রহণ করতে রাজি। একজন মানুষ, তিনি যত নগণ্যই হোন না কেন, তাকে আমি নগণ্য ভাবব না। এই শহরের সমস্ত প্রগতিশীল চিন্তার মানুষকে এক করে একযোগে আমরা চট্টগ্রাম শহরকে গড়ব।’
‘আমার উদাত্ত আহ্বান— সব ভেদাভেদ ভুলে আমরা যদি এগিয়ে যেতে পারি, সফলতা আসবেই। আমরা কামিয়াব হবই। পাঁচ বছরের মধ্যে চট্টগ্রাম শহর হবে সারাদেশের মধ্যে একটি মডেল শহর। সেই সততা-সাহস আমার আছে। কারণ আমার কাছে অর্থবিত্তের কোনো মোহ নেই। অর্থবিত্ত কখনোই আমাকে আমার অর্ধশত বছরের রাজনৈতিক জীবনে নীতি-আদর্শ থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি,’— বলেন চসিক মেয়র রেজাউল।
সবকিছুতে মেয়রকে দায়ী না করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রাস্তায় যানজট হলেও মেয়রের দোষ, কোনোকিছু হলেই মেয়রের দোষ— এভাবে ভাবলে হবে না। রাস্তায় যানজটের জন্য মেয়র দায়ী নন। মেয়রের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। এ শহর আপনার-আমার সবার। আমি সবার বুদ্ধি-মেধা কাজে লাগিয়ে, সবার সঙ্গে পরামর্শ করে টেকসই ও পরিকল্পিত নগরী গড়তে চাই। আমার চিন্তা-চেতনার সঙ্গে এই শহরের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের চিন্তার সমন্বয় ঘটাতে চাই। কারণ ব্যক্তির একক চিন্তার মধ্যে ভুল থাকতে পারে। সমষ্টিগত চিন্তা বাস্তবায়ন করতে গেলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।’
জলাবদ্ধতা নিরসনের বিষয়ে রেজাউল বক্তব্যে বলেন, ‘পুরনো খাল ভরাট হয়ে গেছে। নতুন খাল খনন করতে হবে। পুরনো খাল, নালা-নর্দমা দখল হয়ে গেছে। যেকোনোকিছুর বিনিময়ে আমরা জনগণের সম্পদ খাল উদ্ধার করব। খাল-নালা-নর্দমা অবৈধ দখলমুক্ত করতে পারলে পাঁচ বছরের মধ্যে চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা অনেকাংশে কমে যাবে।’
সুধী সমাবেশে মন্ত্রী, হুইপ, সংসদ সদস্যসহ ৩০ জনেরও বেশি বক্তা বক্তব্য রাখেন। প্রায় সবাই বক্তব্যে সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর কর্মকাণ্ডের উদাহরণ দেন এবং রেজাউলকেও একইপথ অনুসরণের তাগিদ দেন। ঠিক একবছর আগে এই দিনেই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন রেজাউল। মনোনয়ন নিয়ে ঢাকা থেকে ফেরার পর সংবর্ধনায় রেজাউল জানিয়েছিলেন, নির্বাচিত হলে তিনি মহিউদ্দিনের পথে চলবেন। তবে সুধী সমাবেশে সবার কাছ থেকে ফের মহিউদ্দিনের পথ অনুসরণের পরামর্শ পেলেও নিজের বক্তব্যে তিনি এ বিষয়ে কিছুই বলেননি।
সুধী সমাবেশ ও দায়িত্ব গ্রহণের পর দেওয়া বক্তব্যে মেয়র হিসেবে মশা নিয়ন্ত্রণকে প্রথম অগ্রাধিকার হিসেবে ঘোষণা করেন রেজাউল করিম চৌধুরী। এছাড়া ১০০ দিনের মধ্যে নগরীর সড়কের খানাখন্দ সংস্কার করে যানবাহন চলাচলের উপযোগী করে তোলার প্রতিশ্রুতি দেন। নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকেও তিনি শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসার ঘোষণা দেন।
সমাবেশ শেষে সরাসরি চসিকের কার্যালয়ে যান নতুন মেয়র। সোয়া ২টার দিকে নগরীর টাইগারপাস সংলগ্ন বাটালি হিল এলাকায় চসিকের অস্থায়ী কার্যালয়ে গিয়ে মেয়র হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন রেজাউল করিম চৌধুরী।
সারাবাংলা/আরডি/টিআর