Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘বাচ্চা আর তুমি ঠিক আছো তো? ব্যাগ গেছে ব্যাগ হবে’

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৯:৫৯

ঢাকা: সোমবার সকাল ৭টা। ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী ধূমকেতু ট্রেন তখন বিমানবন্দরে স্টেশনে মাত্র থেমেছে। যাত্রীরা হুমড়ি খেয়ে উঠছেন। ঠিক তখনই এক নারী শব্দ করে কান্না করে উঠলেন। কে যেন তার ‘ব্যাগ’ নিয়ে গেছে। এদিক-ওদিকে খুঁজেও তার ব্যাগটি আর মিললো না। এরপর ট্রেনও ছেড়ে দিলো। ওই নারী আর তার দুই সন্তানের কান্নায় ট্রেনের ‘চ নম্বর’ কোচের পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে।

ওই নারী জানান, তিনি সকাল ৬টায় ধুমকেতু ট্রেন ধরতে ভোর সাড়ে ৫টার দিকে কমলাপুর স্টেশনে আসেন। ট্রেনটি আজ (সোমবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি) আধাঘণ্টা দেরিতে আসায় তারা স্টেশনের প্ল্যাটফর্মেই অবস্থান করেন। ট্রেন এলে ওই দুই বাচ্চাসহ তাকে ট্রেনে তুলে দিয়ে স্বামী চলে যান। তারা বড়াল ব্রিজ স্টেশনে নামবেন। দীর্ঘদিন ধরে বাড়িতে যাওয়া হয় না। তাই বাড়িতে যাচ্ছিলেন। ছোটভাইয়ের বিয়ের জন্য পরিবারের সবার কেনাকাটাও করেছিলেন।

ব্যাগের মধ্যে কাপড়চোপড় ছাড়াও নিজের স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ এক লাখ টাকাও ছিল। কমলাপুর স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়ার পর একটু ঘুমাচ্ছিলেন ওই নারী। বিমানবন্দর স্টেশনে ট্রেন থামার ঠিক ১০ সেকেন্ড আগে কেউ একজন তার ব্যাগটি নিয়ে দ্রুত অন্য কোচ হয়ে নেমে যান। শত চেষ্টা করেও তিনি ব্যাগটি উদ্ধার করতে পারেননি। এরপর তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। তার সঙ্গে থাকা দুই বাচ্চাও কান্নায় ভেঙে পড়ে।

কান্না ও হইচই শুনে ট্রেনের ওই কোচে থাকা পুলিশ সদস্য ও এটেনটেন্ড দৌড়ে আসেন। তারা ঘটনা শুনে জানান, এরকম ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। এরা যাত্রীকে আগে থেকেই টার্গেট করে। তাদের ব্যাগ নিয়ে চম্পট দেওয়াই মূল উদ্দেশ্য।

ওই নারী বাড়ির সবাইকে ফোন করে বলছিলেন, ‘সব হারিয়ে গেছে। ব্যাগ কে যেন নিয়ে গেছে।’

স্বামীকে ফোন করে বলেন, ‘তুমি যে টাকা এক লাখ ব্যাগে রেখেছিলা সেই ব্যাগ নিয়ে গেছে। আমার চোখদুটো একটু বুজে আসছিল এই ফাঁকেই ব্যাগ নিয়ে গেছে। অনেক চেষ্টা করেও ব্যাগ পাইনি।’ স্বামী ওপাশ থেকে জানালেন, বাচ্চা আর তুমি ঠিক আছো তো? ব্যাগ গেছে ব্যাগ হবে। টাকা গেছে আবার কামাই করা যাবে। তোমরা নিরাপদে বাড়িতে যাও। তবুও কান্না থামাতে পারছেন না ওই নারী।

কোচের সবাই স্বান্তনা দিয়ে বলছিলেন, ‘আর চিন্তা করে লাভ নাই। কেঁদেও লাভ নেই।’

ওই নারী বলেন, ‘প্ল্যাটফর্মে আমার স্বামী বেশ কয়েকবার বলেছিল, ব্যাগের মধ্যে টাকা আছে এক লাখ। ভালো করে নিয়ে যাবে।’ ঋণ করে জমি নিয়েছিলেন সেই টাকা পরিশোধ করতেই নিয়ে যাচ্ছিলেন ওই টাকা। এসময় হয়তো প্ল্যাটফর্মে কেউ শুনে থাকতে পারে। মূলত সেখান থেকেই টার্গেট করেছে কেউ। এরপর আমাদের সাথে ট্রেনে ওঠে এবং বিমানবন্দরে ট্রেন থামার আগেই ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যায়।

ব্যাগ নিয়ে পালানো ব্যক্তিটি ওই নারীকে ফলো করছিলেন বলে ধারণা করেন আশেপাশে থাকা সিটগুলোর যাত্রীরাও।

ওই কম্পারমেন্টে থাকা যাত্রী তৌহিদ হাসানও বড়াল ব্রিজ স্টেশনে নামবেন। তিনি বলেন, ‘যার ব্যাগে এতো টাকা আছে তাকে তো আরও বেশি সচেতন হওয়া উচিত ছিল। টাকা সবসময় কাছাকাছি রাখা উচিত এবং মনোযোগ সবসময় টাকার দিকেই রাখা উচিত ছিল। লাল গেঞ্জি পরিহিত একটা লম্বা করে ছেলে ওই ব্যাগ নিয়ে দ্রুত হেটে সামনের দিকে চলে যায়। কাউকে তো কিছু বলা যায় না।’

ট্রেনে দায়িত্বরত রেল পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘ট্রেনের ভেতর কে যাত্রী আর কে যাত্রী নয় তা বলা মুশকিল। তবে পুলিশ এটেনটেন্টসহ সবসময় আমরা সতর্ক অবস্থানে থাকি। সম্প্রতি এ ধরনের ঘটনার কথা শুনতে পাচ্ছি। বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অবহিত করেছি।’ তবে যাত্রীদের আরেকটু সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

এটেনটেন্ড জাহিদুল ইসলামও বলেন, ‘ঘটনার পরপরই রেলের ঊর্ধ্বতনদের ব্যাগ খোয়া যাওয়ার বিষয়টি জানিয়েছি।’

রেলের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ট্রেনে নিজের ব্যাগ যদি নিজেই ধরে রাখতে না পারেন সে দায় রেল কর্তৃপক্ষ কিভাবে নেবে? আর এসব ঘটনা থামাতে ভবিষ্যতে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানোর প্রস্তাব রয়েছে।’

পরে ওই নারী দুই সন্তানকে নিয়ে বড়াল ব্রিজ রেল স্টেশনে নামেন। এরপর সেখানে বসে কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে আত্মীয়-স্বজনরা এসে তাকে নিয়ে যান।

সারাবাংলা/ইউজে/এমও

এক লাখ ট্রেন ব্যাগ চুরি


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর