৬৯ শতাংশ ব্যবসায়ী প্রণোদনা পাননি: সানেম
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২০:১৫
ঢাকা: বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এক জরিপের তথ্য জানিয়ে বলছে, দেশের ২২ শতাংশ ব্যবসায়ী প্রণোদনা প্যাকেজের সুবিধা পেয়েছেন। বিপরীতে ৬৯ শতাংশ ব্যবসায়ী কোনো প্রণোদনা প্যাকেজ পাননি। আর ৯ শতাংশ ব্যবসায়ীর প্রণোদনা প্যাকেজ সম্পর্কে কোনো তথ্য জানা নেই। এদিকে, দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের দিকে যাচ্ছে বলেও ওই জরিপে মত দিয়েছেন ৭১ শতাংশ ব্যবসায়ী।
মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) এক ওয়েবিনারে করোনা মহামারির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের আস্থা ও প্রত্যাশার ওপরে সানেম ও দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত তৃতীয় পর্যায়ের জরিপের ফলাফল তুলে ধরা হয়।
জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান। এতে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এ কে খান টেলিকম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম খান, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম, এসএমই ফাউন্ডেশনের জেনারেল ম্যানেজার ফারজানা খান, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি সাইফুল ইসলাম এবং বিজিএমইএ’র ভাইস প্রেসিডেন্ট আরশাদ জামাল দিপু।
জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করে ড. সেলিম রায়হান তৃতীয় পর্যায়ের জরিপ সম্পর্কে ধারণা দেন। তিনি জানান, বাংলাদেশের আটটি বিভাগের ৩৬টি জেলার মোট ৫০২টি ক্ষুদ্র, ছোট, মাঝারি ও বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের ওপর এই জরিপ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৫২টি উৎপাদন খাতের এবং ২৫০টি সেবা খাতের অন্তর্ভুক্ত প্রতিষ্ঠান। উৎপাদন খাতের তৈরি পোশাক, টেক্সটাইল, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ফার্মাসিউটিক্যালস, হালকা প্রকৌশল ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের প্রতিষ্ঠানগুলি জরিপের অন্তর্ভুক্ত ছিল। সেবা খাতের পাইকারি ও খুচরা ব্যবসা, রেস্টুরেন্ট, পরিবহন, আইসিটি ও টেলিকমিউনিকেশন, আর্থিক খাত ও রিয়েল এস্টেট খাত জরিপের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ২০২১ সালের জানুয়ারির ৫ থেকে ২১ তারিখের মধ্যে এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ পদাধিকারীদের সঙ্গে ফোনালাপের মাধ্যমে এই জরিপ পরিচালনা করা হয়।
জরিপের তথ্য বলছে— ২০২০ সালের এপ্রিল-জুনে পিবিএসআইয়ের (ত্রৈমাসিক) মান ছিল ২৯ দশমিক ৪৮, ২০২০ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসে এই মান ছিল ৪৭ দশমিক ৯৬ এবং ২০২০ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর মাসে এই মান ছিল ৪৮ দশমিক ৮৩। সানেম বলছে, এর অর্থ— ২০২০ সালের এপ্রিল-জুনের তুলনায় অক্টোবর-ডিসেম্বরে ব্যবসার পরিস্থিতির উন্নতি হলেও এপ্রিল-জুনের তুলনায় জুলাই-সেপ্টেম্বরে যে গতিতে ব্যবসার পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছিল, জুলাই-সেপ্টেম্বরের তুলনায় অক্টোবর-ডিসেম্বর মাসে ব্যবসার পরিস্থিতি সে গতিতে উন্নতি হয়নি।
জরিপে আরও উঠে এসেছে, ২০২০ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বরের তুলনায় ২০২০ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বরে মুনাফা, কর্মসংস্থান ও মজুরি সূচকের মান কিছু উন্নতি হয়েছে। তবে ব্যবসার খরচ সূচকের মানের অবনতি ঘটেছে। বিভিন্ন খাতের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের গতির মাঝে পার্থক্য দেখা যাচ্ছে। ফার্মাসিউটিক্যাল, আর্থিক খাত, টেক্সটাইলে দ্রুতগতির পুনরূদ্ধার দেখা যাচ্ছে।
জরিপে আরও দেখা যায়— ২০২০ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বরের তুলনায় ২০২১ সালের জানুয়ারি-মার্চের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা তুলনামূলক বেশি আস্থা পেয়েছেন। ব্যবসায় আস্থা সূচক ২০২০ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বরে ছিল ৫১, যা অক্টোবর-ডিসেম্বরে ছিল ৫৫ এবং ২০২১ সালের জানুয়ারি-মার্চের ক্ষেত্রে ৫৮।
২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে পরিচালিত এই জরিপের অংশ নেওয়া ২২ শতাংশ ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, তারা প্রণোদনা প্যাকেজের সুবিধা পেয়েছেন। ৬৯ শতাংশ ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, তারা প্রণোদনা প্যাকেজ পাননি। বাকি ৯ শতাংশ ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, তারা প্যাকেজ সম্পর্কে জানেন না।
জরিপে অংশ নেওয়া বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রণোদনা প্যাকেজ পেয়েছে ৪৬ শতাংশ। এছাড়া মাঝারি ২৮ শতাংশ এবং ১০ শতাংশ ক্ষুদ্র ও ছোট প্রতিষ্ঠান প্রণোদনা পেয়েছে। জরিপে অংশগ্রহণকারী ৭১ শতাংশ ব্যবসায়ী মনে করেন, দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের দিকে যাচ্ছে। এর মধ্যে ১৫ শতাংশ ব্যবসায়ী মনে করছেন, এই পুনরুদ্ধার হচ্ছে দুর্বল মানের, ৪০ শতাংশ ব্যবসায়ী মনে করছেন অর্থনীতির পুনরুদ্ধার হচ্ছে মাঝারি মানের, ১৬ শতাংশ মনে করছেন এই পুনরুদ্ধার হচ্ছে শক্তিশালী।
সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর