শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলার রায় আজ
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১০:৪৬
ঢাকা: গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় ২০০০ সালে বোমা পুঁতে রেখে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলার আপিলের রায় আজ (১৭ ফেব্রুয়ারি) ঘোষণা করা হবে।
এর আগে ১ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১০ আসামির ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শেষে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ রায়ের জন্য এই দিন ধার্য করেন।
আলোচিত এই মামলার রায় বাংলায় দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে আদালত। আপিল শুনানি শেষে আদালত বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ভাষার মাসের সম্মানে বাংলায় রায় দেব।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিত দেবনাথ ও মো. বশির উল্লাহ, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মিজানুর রহমান খান শাহীন ও মো. শাহীন আহমেদ মৃধা। আসামিপক্ষে ছিলেন এস এম শাহজাহান, মোহাম্মদ আহসান, মো. নাসির উদ্দিন ও অমূল্য কুমার সরকার (রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী)।
অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন আসামিদের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার আরজি জানিয়ে শেষ শুনানির দিন বলেছেন, আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। বিচারিক আদালতের আদেশ বহাল রাখার আবেদন করছি। একইসঙ্গে ডেথ রেফারেন্স গ্রহণ করা হোক এবং আসামিদের আবেদন ডিসমিস করে দেওয়া হোক।
তবে একজন আসামিরপক্ষের আইনজীবী এস এম শাহজাহান বলেন, অন্য মামলায় মুফতি আব্দুল হান্নানের দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ভিত্তিতে এই মামলায় সাজা দেওয়ার সুযোগ নেই। তাই আলোচিত আসামি শেখ ফরিদ ওরফে মাওলানা শওকত ওসমান খালাসযোগ্য।
শুনানি শেষে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০০ সালে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার কোটালিপাড়া জনসভায় অংশ নিতে গিয়েছিলেন। ওই জনসভাস্থলে এই আসামিরা তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে বোমা পুঁতে রেখেছিল। পরে মুফতি হান্নান সিলেটে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ওপর বোমা হামলার ঘটনায় আটক হলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ওই জবানবন্দিতে কোটালিপাড়ায় বোমা পুঁতে রাখার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন মুফতি হান্নান।
তিনি আরও বলেন, আমরা আদালতে আসামিদের অপরাধ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আসামিরা সবাই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল, আমরা রায় বহাল রাখার আবেদন করেছি। আমরা চেয়েছি- রায় বহাল রাখা হোক, ডেথ রেফারেন্স গ্রহণ করা হোক এবং আসামিদের আবেদন ডিসমিস করে দেওয়া হোক। এ মামলায় আমরা পরিপূর্ণভাবে আসামিদের অপরাধ প্রমাণ করতে সমর্থ হয়েছি বলে আমরা মনে করি।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মামলায় ২০১৭ সালের ২০ আগস্ট ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মমতাজ বেগম ১০ জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় দেন। এ ছাড়া চার আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়। এ মামলার রায়সহ সব নথি ওই বছরের ২৪ আগস্ট হাইকোর্টে পাঠানো হয়। এরপর প্রধান বিচারপতির কাছে নথি উপস্থাপন করা হলে তিনি জরুরিভিত্তিতে পেপারবুক তৈরির নির্দেশ দেন। মামলাটি শুনানির জন্য প্রস্তুত শেষে কার্যতালিকায় দেয়া হয়।
মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- ওয়াসিম আকতার, রাশেদ ড্রাইভার ওরফে আবুল কালাম, ইউসুফ ওরফে আবু মুসা হারুন, শেখ ফরিদ ওরফে মাওলানা শওকত ওসমান, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বক্কর, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই ও মাওলানা আবদুর রউফ ওরফে আবু ওমর। এ ছাড়া মেহেদি হাসান ওরফে আবদুল ওয়াদুদকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে। আনিসুল ওরফে আনিস, মো. মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান এবং সরোয়ার হোসেন মিয়াকে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের দণ্ড দেয়া হয়েছে।
আরও জানা গেছে, ২০০০ সালের ২০ জুলাই গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশস্থলের পাশে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখা হয়। শেখ লুৎফর রহমান মহাবিদ্যালয়ের উত্তর পাশের একটি চায়ের দোকানের পেছনে এ বোমা বিস্ফোরণের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল বলে তদন্তে উঠে আসে। এ ঘটনায় তৎকালীন কোটালীপাড়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নূর হোসেন মামলা করেন।
২০০১ সালের ৮ এপ্রিল ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়া হয়। পরে ২০০৯ সালের ২৯ জুন আরও নয়জনকে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয়া হয়।
এরপর ২০১০ সালে মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য ঢাকা-২ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। সেখানে এই মামলার বিচার সম্পন্ন হয়।
সারাবাংলা/কেআইএফ/এএম