উৎপাদন বাড়াতে বোরো চাষে হাইব্রিডের প্রাধান্য
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৫:৩৮
ঢাকা: ফসলের মাঠজুড়ে এখন চলছে বোরো ধানের আবাদ। এরইমধ্যে লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৯১ ভাগ জমিতে রোপন কাজ শেষ হয়েছে। চলতি বোরো মৌসুমে হাইব্রিড জাতের ধানের চাষ বাড়াতে একাধিক বিশেষ প্রকল্প হাতে নিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। এর আওতায় গত মৌসুমের চেয়ে ৫০ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর হাইব্রিডের আবাদ বাড়াতে কৃষকদের বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে সার ও ধানের বীজ। এছাড়া দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ৬১ জেলার ৬১ উজেলায় ৫০ একর করে হাইব্রিড জাতের ধান উৎপাদনের প্রদর্শনী করা হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, দেশে এবার বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৪৮ লাখ ৫ হাজার ২০০ হেক্টর। এখন পর্যন্ত বোরো ধান রোপন করা হয়েছে ৪৩ লাখ ৭৩ হাজার ৩৪১ হেক্টর জমিতে। আবাদে অগ্রগতির হার ৯১ শতাংশ। এবার বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২ কোটি ৫ লাখ ৮১ হাজার ৩০০ টন। আর বোরো ধানের বীজতলা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ২৫ হাজার ৪০০ হেক্টর। বীজতলা তৈরি হয়েছে ২ লাখ ৭৩ হাজার ৪৬২ হেক্টর জমিতে। বীজতলা তৈরিতে আগ্রগতির হার ১২১ শতাংশের বেশি। আর গত বছরের চেয়ে এবার ৫ শতাংশ বেশি জমিতে বীজতলা তৈরি হয়েছে। এদিকে, গত বছর বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৮ লাখ ৬৬ হাজার হেক্টর। আবাদ হয়েছিল ৪৭ লাখ ৫৪ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে। আর গেল বছর বোরো ধানের উৎপাদন হয়েছিল ২ কোটি ১ লাখ ৮১ হাজার টন।
তথ্য বলছে, এবার হাইব্রিড জাতের বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ১১ লাখ ৪ হাজার ৬৩৩ হেক্টর। এখন পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ১১ লাখ ৪৮ হাজার ৫০৮ হেক্টর জমিতে। আবাদে অগ্রগতির হার ১০৩ শতাংশ। উফশী জাতের বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৩৬ লাখ ৭৩ হাজার ৮৩০ হেক্টর হলেও এখন পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ৩২ লাখ ১ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে। আবাদে অগ্রগতির হার ৮৭ শতাংশ। স্থানীয় জাতের বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ২৬ হাজার ৭৩৭ হেক্টর হলেও আবাদ হয়েছে ২৩ হাজার ৪৮৩ হেক্টর জমিতে। এ জাতের বোরো আবাদের অগ্রগতির হারও ৮৭ শতাংশ। এখন পর্যন্ত বোরো আবাদে হাইব্রিড জাতে অগ্রগতির হারই সবচেয়ে বেশি।
জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আসাদুল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবার আমরা ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি। ধানের উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্য রয়েছে অন্তত ৫ লাখ টন। এজন্য আমরা বোরোতে বিশেষ কিছু প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছি। আমরা হাইব্রিড ধানের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য ২ লাখ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড বীজ ফ্রি দিয়েছি। এতে প্রায় ৭৬ কোটি টাকার মতো ব্যয় হয়েছে। ২ লাখ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ধানের উৎপাদন হলে অন্তত ২ লাখ টন ধানের উৎপাদন বেশি হবে।’
চলতি মৌসুমে ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘পূনর্বাসন কর্মসূচিতে ১ লাখ ৬০ হাজার বিঘা জমিতে উফসী জাতের বীজ ও সার ফ্রি দিয়েছি। ৬১ জেলার ৬১ উপজেলায় ৫০ একরের হাইব্রিড করার প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছে, সেখানে যন্ত্র ব্যবহার করে ধান রোপন ও কাটা হবে। দেশে এমন বিশেষ পোগ্রাম এবারই প্রথম। বোরোর আবাদ বাড়াতে আমরা মাঠে ঘাটে তৎপরতা বৃদ্ধি করছি। আশা করা যাচ্ছে এবার বোরোর উৎপাদন ৫ লাখ টন বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।’
জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সরেজমিন উইংয়ের উপপরিচালক (মনিটরিং ও বাস্তাবায়ন) মিজানুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবার আমরা হাইব্রিডের আবাদ বাড়ানোর চেষ্টা করছি। লক্ষ্যমাত্রা ৪৮ লাখ হেক্টর ধরা হলেও হাইব্রিডে জোর দিচ্ছি। ২ লাখ হেক্টরের হাইব্রিডে আমরা প্রণোদনা দিচ্ছি। আর বোরো আবাদে সেচ ও সারে কোনো সমস্যা নেই। মার্চের ১৫ তারিখ পর্যন্ত রোপন করা যাবে। আশা করা যায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে।’
এর আগে, বোরো মৌসুমে ধানের আবাদ ৫০ হাজার হেক্টর বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। গেল বছরের শেষ দিকে তিনি জানান, বন্যাসহ নানা কারণে এ বছর আমনের উৎপাদন ভালো না হওয়ায় ধানের দাম খুব বেশি। যেটি নিয়ে খুব চিন্তার মধ্যে রয়েছি। সেজন্য, যেকোনো মূল্যে আমাদের আগামী মৌসুমে বোরো ধানের উৎপাদন বাড়াতে হবে।
কৃষিমন্ত্রী আরও জানিয়েছিলেন, বোরোর চাষযোগ্য কোনো জমি যাতে খালি না থাকে সে ব্যাপারে কৃষকদের উৎসাহ দিতে হবে। বোরোর উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে মাঠ থেকে মন্ত্রণালয় পর্যন্ত সকল কর্মকর্তাকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে, সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে এবং কৃষকের পাশে থাকতে হবে। এবছর ধানের ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা খুশি ও উৎসাহ-উদ্দীপনায় আছে। অন্যদিকে, আমরা কৃষকদের যে বোরো ধানের উন্নত বীজ সরবরাহ করছি, সার, সেচসহ বিভিন্ন কৃষি উপকরণ এবং বন্যার ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় যে প্রণোদনা দিচ্ছি তা সুষ্ঠুভাবে বিতরণ নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই এ লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হবে।
এদিকে, বোরোর মাঠ কিছুটা সবুজ হয়ে উঠতে শুরু করেছে। ফসলের মাঠ পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক। আবার কোথাও চলছে শেষ মুহূর্তের রোপন কাজ।
ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার কৃষক মোস্তাফা সারাবাংলাকে বলেন, ‘বোরো ধানের রোপন শেষ হয়েছে। গাছের চারা সবুজ হতে শুরু করেছে। বিদ্যুৎ, পানি ও সার নিয়ে সমস্যা নেই। আমনের দাম বেশি হওয়ায় এবার বোরো উৎপাদনে বেশি মনযোগ দিচ্ছি।’
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার কৃষক হিমেল সারাবাংলাকে বলেন, ‘বোরো রোপন শেষ হয়েছে। বিদ্যুৎ থাকায় পানি নিয়ে সমস্যা নেই। বোরো উৎপাদনে এবার বেশি মনযোগ দিচ্ছি।’
সারাবাংলা/ইএইচটি/এমআই