Wednesday 20 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যশোরে চোর সন্দেহে মাদরাসাছাত্রকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ

লোকাল করেসপন্ডেন্ট
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৯:০৬

বেনাপোল: যশোরের মণিরামপুরে মোবাইলফোন চোর সন্দেহে মামুন হাসান (২২) নামে এক মাদরাসাছাত্রকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে মণিরামপুর হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

অভিযোগ উঠেছে, মঙ্গলবার রাত ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত প্রায় চার ঘণ্টা হাত-পা বেঁধে মারপিট করা হয় মামুনকে। এরপর স্থানীয় একটি মসজিদের পাশে তাকে ফেলে রাখা হয়। বুধবার সকালে থানা থেকে পুলিশ নিয়ে মা ছকিনা বেগম মামুনকে উদ্ধার করে মণিরামপুর হাসপাতালে ভর্তি করেন।

বিজ্ঞাপন

মামুন হাসান মণিরামপুর উপজেলার খোজালিপুর এলাকার মশিয়ার গাজীর ছেলে। তিনি মণিরামপুর আলিয়া মাদরাসার আলিম দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন।

মামুনের মা ছকিনা বেগম অভিযোগ করে বলেন, মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে ভাত খেয়ে বাড়ির পাশে খালার দোকানে যায় মামুন। তখন আরমান নামে এক বন্ধু মামুনকে ডেকে বাড়ির পাশে হরিহর নদীর পাড়ে নিয়ে যায়। তাদের দুইজনকে সেখানে দেখে স্থানীয় কিছু লোকজন এসে মামুনকে নদীর পানিতে ফেলে মারপিট করে। সেখান থেকে তুলে আয়নালদের বাড়িতে নিয়ে তাকে আবারও পেটায়। খবর পেয়ে গিয়ে  দেখি আমার ছেলের অবস্থা মরনাপন্ন। তখন ওরা বলে আমার ছেলে মোবাইল চুরি করেছে। আমি চোরাই ফোন দেখতে চাইলে আনিছুর মেম্বার আমাকে মারতে আসে। আমার ছেলেকে স্থানীয় সিরাজ, মামুন, আলমগীর, আয়নাল, আকের, ইউনুস, মুরাদ, ইসরাইল, আকতারুল, মিন্টুসহ আরো অনেকে মেরেছে।

ছকিনা বেগম আরও বলেন, রাত তিনটার দিকে যখন আমার ছেলে মুমূর্ষু অবস্থায় ছিল তখন ওরা চুরির অপবাদ দিয়ে ওর চুল কেটে দেয়। সকালে আমি থানায় এসে পুলিশ নিয়ে যাই। পরে পুলিশের সাহায্যে ওকে মণিরামপুর হাসপাতালে ভর্তি করি। হাসপাতালের বেডে বিকেল তিনটার দিকে আমার ছেলে মারা যায়।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় ইউপি মেম্বার আনিছুরের দাবি, মঙ্গলবার রাতে চুরির উদ্দেশে একই গ্রামের আয়নালদের ঘরে উঠতে যায় মামুন ও আরমান নামে দুই যুবক। তখন কয়েকজন মামুনকে ধরে মারপিট করে। রাত তিনটার দিকে তিনি খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন মামুনের হাত-পা বাঁধা। তখন তিনি বাঁধন খুলে দিয়ে মামুনের বাড়িতে খবর দেন। প্রথমে কেউ আসেনি। পরে আবারও তাদের খবর দেওয়া হয়। এভাবে সকাল হয়ে যায়। ততক্ষণে পুলিশ এসে পড়ে।

তিনি আরও দাবি করেন, মামুন নিজ গ্রামসহ আশপাশের গ্রামে একাধিকবার বৈদ্যুতিক সেচপাম্প (মোটর), মোবাইলফোন চুরি করেছে। আট মাস আগে আয়নালদের একটি ফোন চুরি করে মামুন। তখন সালিশের মাধ্যমে মোবাইলফোন ফেরত দেয় সে।

তবে মামুনের বিরুদ্ধে আর কোনো চুরির প্রমাণ দিতে পারেননি মেম্বার। গতরাতে নির্যাতনের সময় তার কাছে চোরাই কোনো মালামালও পাওয়া যায়নি বলে নিশ্চিত করেছেন তিনি।

স্থানীয়রা বলছেন, পূর্বের মোবাইলফোন চুরির একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে মামুনের উপর ক্ষিপ্ত ছিল আয়নালরা। সেই কারণে মঙ্গলবার রাতে মামুনকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করা হয়।

কাশিমনগর ইউপি চেয়ারম্যান জিএম আহাদ আলী বলেন, রাতে আনিছুর মেম্বার আমাকে বিষয়টি জানায়। মোবাইল চুরি করতে গেলে মামুনকে জনগণ মারপিট করেছে বলে শুনেছি। মামুন কিছুটা উচ্ছৃঙ্খল প্রকৃতির ছিল। তবে আমি কখনো ওর বিরুদ্ধে চুরির সালিশ করিনি।

মণিরামপুর হাসপাতালের চিকিৎসক উলফাত আরা বলেন, বুধবার সকাল আটটা ২৫ মিনিটে মামুনকে হাসপাতালে আনা হয়। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। আমরা রোগীকে সদর হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলি। কিন্তু স্বজনরা নেননি। পরে বিকেল তিনটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

মণিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বুধবার সন্ধ্যায় ঘটনাস্থল থেকে বলেন, আমি ঘটনাস্থলে আছি। শুনেছি মামুনকে মারপিট করা হয়েছে। ফলে তার মৃত্যু হয়েছে। যারা মেরেছে তারা চুরির বিষয়টি বলছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুইজনকে আটক করা হয়েছে। এ বিষয়ে অধিকতর তদন্ত চলছে।

সারাবাংলা/এসএসএ

চোর সন্দেহ টপ নিউজ পিটিয়ে হত্যা মণিরামপুর যশোর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর