‘নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে যা যা প্রয়োজন করব’
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৬:৫৯
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মানুষের নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে আমাদের যা যা প্রয়োজন সেটা করব। কোনো কিছু করতে গেলেই টাকা লাগে; চিন্তা নেই, অর্থমন্ত্রী আমার পাশে আছেন। তাকে সঙ্গে রেখেই কথাগুলো বলছি।
বৃহস্পতিবার (১৮ফেব্রুয়ারি) সকালে জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস-২০২১ উপলক্ষে খাদ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল প্রান্তে যুক্ত ছিলেন। অনুষ্ঠানে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ‘নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণ’ শীর্ষক রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকসহ অন্যান্যরা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, ‘১০০টি খাদ্য শিল্পে যে ফুড সেফ প্ল্যান বাস্তবায়ন হচ্ছে। সেটা সারা বাংলাদেশেই করা উচিত। ধীরে ধীরে বাড়াতে হবে। একদম গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত এটা নিয়ে যেতে হবে। কেন্দ্রীয় ফুড টেস্টিং ল্যাবরেটরি হবে। কিন্তু তার সঙ্গে সঙ্গে বিভাগীয়ভাবে করা প্রয়োজন। কারণ আমরা ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করছি। সেখানে শিল্পায়ন হবে। এই শিল্পায়নে আমরা খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। আমাদের যে নদী-নালা, খাল-বিল রয়েছে সেখানে মৎস্য পালনের সাথে পশু পালন এবং তরি-তরকারি ও সবজি উৎপাদন করতে পারি। কিন্তু আমরা যদি সেগুলো বিদেশে রফতানি করতে চাই, তাহলে ল্যাবরেটরি টেস্টিং সনদ নেওয়া একান্তভাবে অপরিহার্য।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘শুধু খাদ্যের ব্যাপারে না, আমরা যেকোনো পণ্যই উৎপাদন করি না কেন সেগুলোর মান নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষাগার দরকার। পরীক্ষা করেই কিন্তু পণ্য বাইরে যাবে। এটি প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কিন্তু খাদ্যের জন্য এটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অনুরোধ থাকবে, ফুড টেস্টিং ল্যাবরেটরি কেন্দ্রেীয়ভাবে হলেও পাশাপাশি বিভাগীয় শহরে তা করা দরকার। আর গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত ফুড টেস্টিংয়ের সুযোগটাও দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘খাদ্য রফতানির ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিয়ে আমরা যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করছি। করোনাভাইরাসের কারণে কিন্তু অনলাইনে অনেক কেনাবেচা হচ্ছে। এমনকি খাবার-দাবারও কিন্তু ঘরে ঘরে সাপ্লাই দেওয়া হচ্ছে। আর যারা এই কাজটা করছেন তারা সঠিক খাদ্যটি দিচ্ছে কিনা সে ব্যাপারেও কিন্তু নজরদারি বাড়ানো দরকার।’
বাংলাদেশে অঞ্চলভিত্তিক ফসল উৎপাদনের কথা তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেসব এলাকার মাটি ও পানি পরীক্ষার ব্যবস্থা আমাদের আছে, সেদিকে আরেকটু নজর দেওয়া দরকার। কোন জায়গায় কি ধরনের ফসল হতে পারে সেটা প্রক্রিয়াজাত করে আমরা বিপণনের ব্যবস্থা করতে পারি। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা যত বাড়বে, মানুষ যত বেশি কাজে ব্যস্ত হবে, তত বেশি এটার প্রয়োজনও হবে। কাজেই সেই গুণাগুণ পরীক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। এছাড়া প্রক্রিয়াজাত খাদ্য নিরাপদে পরিবহনের জন্য আমাদের ডাক বিভাগ একটি ব্যবস্থা নিতে পারে।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আমাদের এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি থাকবে না। সবাইকে নিজ নিজ পতিত জমিতে চাষাবাদ করতে হবে। তাহলে আমাদের কখনো খাদ্যের অভাব হবে না। করোনাভাইরাস যখন শুরু হয় তখন আমি বলেছিলাম যে, আমাদের দেশে যেন ভালোভাবে খাদ্য উৎপাদনটা অব্যাহত রাখতে পারি। কোনো মতেই যেন আমাদের দেশে খাদ্যের অভাব দেখা না দেয়। কিন্তু গতবছর একদিকে করোনাভাইরাস, আরেকদিকে পর পর তিন-চার বার বন্যা হলো, তারপর ঘূর্ণিঝড়। প্রকৃতিও যেন আমাদের সঙ্গে একটা বৈরিতা করল। কিন্তু সেটা মোকাবিলা করেও আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা ঢাকা শহরের বিভিন্ন হোটেল ও রেঁস্তোরাগুলোকে গ্রেডিং করে স্টিকার দিয়ে দিচ্ছেন এবং মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা নিচ্ছেন। এটা অত্যন্ত ভালো কাজ। কিন্তু এই কাজটা শুধু রাজধানীতে করলে হবে না। এটা সারা বাংলাদেশে করা দরকার। সেদিকেও যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারেন। এ ব্যাপারে নজরদারি বাড়ানোর জন্য আপনারা যে পদক্ষেপই নেবেন, সে বিষয়ে যা সহযোগিতা প্রয়োজন করব। আর সহযোগিতার ক্ষেত্রে জানি, কোনো কিছু করতে গেলেই টাকা লাগবে। চিন্তা নেই, অর্থমন্ত্রী আমার পাশে আছে। অর্থমন্ত্রীকে সঙ্গে রেখেই কথাগুলো বলে যাচ্ছি।’
করোনা ভ্যাকসিন প্রদান শুরু করার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক উন্নত দেশ এখনো ভ্যাকসিন প্রদান শুরু করতে পারেনি। কিন্তু আমরা খুব দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছি। আগ্রিম অর্থ দিয়ে আমরা ভ্যাকসিন কেনার ব্যবস্থা করেছি।’
এ সময় করোনাভাইরাস মহামারি থেকে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বের মানুষ মুক্তি পাক সেই কামনাও করেন প্রধানমন্ত্রী।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম