বগুড়া: জেলার আদমদীঘির সান্তাহার মহিলা কলেজসংলগ্ন মোড়ে নির্মিত শহিদ মিনারটি সংস্কারে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। প্রায় ৪০ বছর আগে পৌর শহরের গুরুত্বপূর্ণ এ মোড়ে নির্মিত হয় মিনারটি। অযত্ন আর অবহেলার শিকার হয়ে এবং সংস্কারের অভাবে সময়ের ব্যবধানে এটি চরম ভগ্নদশায় পৌঁছেছে। বর্তমানে শহিদ মিনারটি রক্ষায় জরুরি সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
জানা গেছে, উপজেলার সান্তাহার পৌর শহরের হাউজিং কলোনি মহল্লার বাসিন্দাদের নিজ অর্থায়নে মহিলা কলেজসংলগ্ন তিন মাথার মোড়ে ১৯৮০ সালের দিকে শহিদ মিনারটি নির্মিত হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি এলে মহিলা কলেজ, পৌর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, উপশহর প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইউনাইটেড কিন্ডার গার্টেন ও স্থানিয় মহল্লাবাসীসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন এ শহিদ মিনারে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতেন। তবে গত ৫-৭ বছর ধরে সংস্কার আর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এটি চরম ভগ্নদশায় পৌঁছেছে।
বুধবার দুপুরে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, শহিদ মিনারটির ৩টি স্তম্ভের মধ্যে ২টি ভেঙে মাটিতে পড়ে রয়েছে। একটি দাঁড়িয়ে থাকলেও সেটিতে নোংরা কাপড়-চোপড় ও ময়লা বস্তা দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। বেদি জঙ্গল আর আবর্জনায় ভরা।
শহিদ মিনারটির সামনে রয়েছে পৌরসভার ঢাকনাবিহীন (খোলা ড্রেন)। সেখান থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। এমন অবহেলিত শহিদ মিনার উপজেলার আর কোথাও দেখা মেলেনি। পৌর শহরের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ভগ্নদশার শহিদ মিনারটি দাঁড়িয়ে আছে বছরের পর বছর। শহিদ দিবস উপলক্ষেও এটির কোনো সংস্কার করা হয় না।
স্থানীয়দের অভিযোগ, শহিদ মিনারসংলগ্ন বাড়ির বাসিন্দা মেহের আলী জায়গাটি অভিনব কায়দায় নিজ দখলে রাখতে চেষ্টা করছেন। এ কারণে তিনি শহিদ মিনারের জায়গায় টিনের ছাউনি ও বস্তা দিয়ে ঘিরছেন, আবার কখনো মূল বেদিতে ময়লা-অবর্জনাও ফেলছেন।’
তবে মেহের আলী জানান, শহিদ মিনারের জায়গাটির মালিক তিনিই। এজন্য শহিদ মিনারটি অন্যত্র সড়িয়ে নেওয়া হলে তার জন্য ভালো হতো।
মুক্তিযোদ্ধা আনছার আলী জানান, মূলত ভাষা শহিদদের ত্যাগের বিনিময়ে আমরা মাতৃভাষা বাংলা পেয়েছি। ভাষা শহিদদের যথাযথ মর্যাদা দিতে শহিদ মিনার নির্মাণ করা হয়। এ কারণে এটি একটি পবিত্র স্থান। আর সেখানে ময়লার ভাগাড় তৈরি বা জায়গা দখল করা অমানবিক চিন্তার বিকাশ।’
ইউএনও সীমা শারমিন বলেন, ‘এ শহিদ মিনার সম্পর্কে তিনি অবগত নন। শহিদ মিনারটি যেহেতু উপজেলার সান্তাহার পৌর শহরে অবস্থিত সেহেতু এটি দেখাশোনার দায়িত্ব পৌরসভার।’
সান্তাহার পৌরসভার মেয়র তোফাজ্জল হোসেন ভুট্টু জানান, পৌর শহরে সরকারিভাবে যেসব শহিদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে সেগুলোর দেখভালের দায়িত্ব পৌরসভার। ব্যক্তিগত উদ্যোগে হাউজিং কলোনিতে এই শহিদ মিনারটি নির্মাণ করা হয়েছিলো। তবে এটির রক্ষণাবেক্ষণ বা সংস্কার নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।