বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, বিদ্যুৎ অফিস ঘেরাও
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১১:১৪
রাঙামাটি: জেলা শহরে বিদ্যুৎ বিভাগের একটি খুঁটি স্থানান্তরের কাজ করতে গিয়ে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে এক যুবককের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাত দশটার দিকে শহরের ভেদভেদী এলাকায় বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন।
মৃত যুবকের নাম মো. বাপ্পী (২৫)। তিনি শহরের মোল্লাপাড়া এলাকার আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে। বিদ্যুৎ বন্ধ রেখে কাজ করার কথা থাকলেও কর্তৃপক্ষ হঠাৎ করে বিদ্যুৎ চালু করার কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, গতকাল শুক্রবার সকালে শহরের দেবাশীষনগর এলাকায় বিদ্যুৎ বিভাগের খুঁটি স্থানান্তরের কাজে আরও অনেকের সঙ্গে বাপ্পীও অংশ নেয়। কিন্তু সঞ্চালন লাইনের সঙ্গে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে গুরুতর আহত হয় বাপ্পী। পরে তাৎক্ষনিকভাবে তাকে প্রথমে রাঙামাটি সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে চিকিৎসক তাকে চট্টগ্রামে হস্তান্তর করেন। সেখানে নেওয়ার পর শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে তার মৃত্যু হয়। মৃত বাপ্পী বিবাহিত এবং তার চারবছরের একটি পুত্র সন্তানও রয়েছে।
এদিকে রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাপ্পীর মরদেহ রাঙামাটি আনা হলে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী বিক্ষোভ মিছিল বের করে এবং বিদ্যুৎ অফিস ঘেরাও করেন। এ সময় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে নানান শ্লোগান দেন এবং পূর্বঘোষণা অনুসারে বিদ্যুৎ বিভাগ পুরো শহরে বিদ্যুৎ বন্ধ রাখার কথা থাকলেও সঞ্চালন লাইনে কেন বিদ্যুৎ ছিল তার কৈফিয়ত দাবি করেন। প্রায় দুই ঘণ্টা রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে অবস্থান নেন তারা। এর ফলে সড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রাত সাড়ে ১১টায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরপেক্ষ তদন্ত ও দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে ফিরে যান তারা। তবে এ ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকালে শহরে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করবেন বলে জানিয়েছেন ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
আন্দোলনকারীদের একজন মো. হানিফ জানান, বিদ্যুৎ বিভাগ লাইনের ওপর মানুষ থাকা অবস্থায় কেন বিদ্যুৎ চালু করল ? তারা ঘোষণা দিয়েছে, বিকাল চারটা পর্যন্ত বিদ্যুৎ বন্ধ থাকবে। কিন্তু দুপুর ১২টায় কেন লাইনে বিদ্যুৎ চালু করল? এই মৃত্যুর দায় পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলী এড়াতে পারেন না।
মো. আমজাদ মিয়া নামের আরেক আন্দোলনকারী জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের অবহেলার প্রতিবাদে শনিবার নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন ও দাবিনামা পেশ করা হবে।
রাঙামাটি বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ কান্তি মজুমদার জানান, দেবাশীষনগর এলাকায় আমাদের বিদ্যুৎ বিভাগের কাজ করার সময় ঠিকাদারের একজন শ্রমিক লাইফলাইন স্পর্শ করায় দুর্ঘটনায় পড়ে। খবর পেয়ে আমরা দ্রুত তাকে প্রথমে রাঙামাটি ও পরে চট্টগ্রামে পাঠাই, সেখানেই তার মৃত্যু হয়। এটি নিছক একটি দুর্ঘটনা, এর জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের কোনো দায় নেই। তবুও বিক্ষুব্ধদের পক্ষ থেকে আলোচনার জন্য প্রতিনিধিরা এসেছে। আমরাও তাদের যথাসাধ্য সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছি, কিন্তু তারা কথা শুনছে না। আমাদের অফিসের সামনে অবস্থান নিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও উর্ধ্বতনদের সঙ্গে কথা হয়েছে।
রাঙামাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) তাপস রঞ্জন ঘোষ বলেন, বিষয়টি আমরা জেনেছি, সেখানে পুলিশ গেছে। বিদ্যুৎ বিভাগের দায়িত্বশীল এবং প্রতিবাদকারীদের সঙ্গে আমরা কথা বলছি। প্রকৃত ঘটনা কি সেটা জানার চেষ্টা করছি। তারপর আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সারাবাংলা/এনএস