Thursday 22 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মুখোমুখি শিক্ষার্থী-শ্রমিক, বরিশালে পাল্টাপাল্টি সড়ক অবরোধ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৮:১৪ | আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৮:১৬

বরিশাল: দ্বিতীয় দফায় ১৩ ঘণ্টার আল্টিমেটাম শেষে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিচার দাবিতে আবারও বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়ক অবরোধ করেছে শিক্ষার্থীরা। শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তারা অবরোধ শুরু করেন।

এদিকে দুই শ্রমিককে গ্রেফতারের প্রতিবাদে বাস চলাচল বন্ধ রেখে নগরীর রূপাতলী বাস টার্মিনাল এলাকায় সড়কে অবস্থান নিয়েছে শ্রমিকরা। এতে ব‌রিশাল থেকে দক্ষিণাঞ্চলের ২১‌টি রুটে যাত্রী প‌রিবহন বন্ধ রয়েছে। সড়ক অবরোধ ও বাস চলাচল বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন এসব রুটের হাজার হাজার যাত্রী।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া শ্রমিকরা সড়কে অবস্থান করায় নগরীর বিভিন্ন স্থানে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। তবে যেকোনো ধরনের অরাজকতা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএমপির কর্মকর্তারা।

এর আগে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার প্রেক্ষিতে শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে এম. কে পরিবহনের সুপারভাইজার আবুল বাশার রনি (২৫) ও সাউথ বেঙ্গল পরিবহনের হেলপার মো. ফিরোজকে (২৪) গ্রেফতার করে কোতয়ালি থানা পুলিশ। তারা গত মঙ্গলবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত ছিলেন বলে জানিয়েছেন কোতয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নুরুল ইসলাম।

তবে আন্দোলনকারীরা বলছেন, তাদের তিন দফা দাবি আদায়ে আন্দোলন চলছে। দাবি পূরণ হলেই তারা আন্দোলন প্রত্যাহার করবেন।

এবার ২ শ্রমিকের মুক্তির দাবিতে পরিবহন শ্রমিকদের বিক্ষোভ

বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়ক অবরোধ করায় দুই দিকে কয়েকশ’ যানবাহন আটকে পড়েছে। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, পায়রা বন্দর ও কুয়াকাটাগামী যাত্রীরা।

বিজ্ঞাপন

পাশাপাশি দুই পরিবহন শ্রমিককে গ্রেফতারের প্রতিবাদে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বরিশালের সব রুটের বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে শ্রমিক ইউনিয়ন। এছাড়া বরিশাল বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা ও সাধারণ শ্রমিকরা সড়কে অবস্থান নিয়ে গ্রেফতারকৃত শ্রমিকদের মুক্তির দাবিতে নানা স্লোগান দিচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পরিবহন শ্রমিকরা রূপাতলী বাস টার্মিনালে এবং শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কে লাঠিসোটা নিয়ে অবস্থান করছেন। সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছেন তারা। এতে বরিশালসহ সারাদেশের সঙ্গে সড়কপথে ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা ও পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা এবং ঝালকাঠি, পিরোজপুর ও খুলনা জেলার সঙ্গে বরিশালের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বিভিন্ন গন্তব্যের মানুষ।

পাল্টাপাল্টি অবরোধকে ঘিরে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য পুলিশ রূপাতলী টার্মিনালে প্রবেশের এক কিলোমিটার আগ থেকে সব ধরনের যানবহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের অন্যতম নেতা অমিত হাসান রক্তিম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের গণহারে মারধরের নেতৃত্ব দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পদক ও বাস মালিক নেতা কাওছার হোমেন শিপন, পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রফিকুল ইসলাম মানিক ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী তেল ব্যবসায়ী মামুন মিয়া। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের আসামি না করে অজ্ঞাতনামা আসামি দেখিয়ে মামলা দায়ের করেছে। ওই তিনজনের নাম উল্লেখ করে পুনরায় মামলা দায়েরসহ ৩ দফা দাবিতে পূর্বঘোষণা অনুযায়ী শনিবার সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা আবারও সড়ক অবরোধ শুরু করেছেন।’

শিক্ষার্থীরা ববি কর্তৃপক্ষের ‘নতজানু নীতি’ প্রত্যাখ্যান করে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত মহাসড়ক অবরোধ রাখবেন বলেও জানিয়েছেন।

বরিশাল-পটুয়াখালী মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওছার হোসেন শিপন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় পুলিশ শুক্রবার রাতে নিরীহ দুই পরিবহন শ্রমিককে গ্রেফতার করেছে। তাদের মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত মালিক-শ্রমিকরা বাস চালাবেন না।’

বরিশাল বাস ও মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সুলতান মোল্লাও একই কথা জানিয়েছেন।

কোতয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নুরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের দাবি প্রসঙ্গে বলেন, ‘যেহেতু মামলার এজাহারে কারও নাম নেই তাই পুলিশ তদন্ত ছাড়া শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী কাউকে গ্রেফতার করতে পারে না। শ্রমিকরা বিক্ষোভ করছে। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও আন্দোলন করছে। আমরা উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়‌টি সমাধানের চেষ্টা কর‌ছি।’

বিএমপির সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. রাসেল জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। শিক্ষার্থী ও শ্রমিকদের আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যেকোনো ধরনের নাশকতা বা অরাজক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।’

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে মারধর ও লাঞ্ছিত করে রূপাতলী বিআরটিসি কাউন্টারের ম্যানেজার রফিক। এর প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিআরটিসি কাউন্টার ভাঙচুর ও সড়ক অবরোধ করেন। ওইদিন দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে পুলিশ রফিককে গ্রেফতার করলে অবরোধ তুলে নেয় শিক্ষার্থীরা।

এ ঘটনার পর মঙ্গলবার রাত দেড়টার দিকে নগরীর রূপাতলী হাউজিং এলাকার বিভিন্ন মেসে ঢুকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মারধর করে বাস শ্রমিকরা। হামলায় ১১ জন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়। আহতরা শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

হামলার পর বুধবার সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কে কাঠ পুড়িয়ে অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এসময় একটি বাস ভাঙচুর করে তাতে আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে বিকেল ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি শিক্ষার্থীদের ৩ দফা দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে অবরোধ প্রত্যাহার করে শিক্ষার্থীরা।

এরপর বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রফেসর ড. মুহসিন উদ্দিন বাদি হয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় এ মামলা দায়ের করেন। এতে শতাধিক অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়।

মামলা দায়েরের পর বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় সংবাদ সম্মেলন করে হামলার ঘটনায় জড়িত তিনজনের নাম প্রকাশ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এসময় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়ের করা মামলা প্রত্যাখ্যান করেন তারা। শনাক্তকৃত ব্যক্তিদের আসামি করে পুনরায় মামলা করার দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। অন্যথায় মহাসড়ক অবরোধসহ জোরালো কর্মসূচিতে যাবার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন তারা।

আরও পড়ুন:

সারাবাংলা/এমও

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শ্রমিক সড়ক অবরোধ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর