শহিদবেদীতে পৌঁছাতে দীর্ঘলাইনেও ক্লান্তিহীন অপেক্ষা
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১১:১০
ঢাকা: বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় বেড়েছে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে। পরম কাঙ্ক্ষিত শহিদবেদীতে পৌঁছাতে পাড়ি দিতে হচ্ছে দীর্ঘলাইন। এরপরও নেই সামান্যতম হট্টগোল। অন্যকে পিছে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতা। পূর্ব দিগন্তের সূর্যও ক্রমে মাথার উপর কিরণ ছড়াচ্ছে। তবুও নেই ক্লান্তির ছায়া। শ্রদ্ধায় অবনত প্রাণ শুধু একটাবার পৌঁছাতে চায় শহিদবেদীতে। ফুলেল শ্রদ্ধায় বাংলা ভাষা আর বাঙালির অস্তিত্বের জানান দিতে চায় স্মৃতির মিনারে। ভাই হারানো মানুষগুলো লাইনে দাঁড়িয়ে আছে বিনম্র শ্রদ্ধায়, ক্লান্তিহীন অপেক্ষায়।
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে আত্মোৎসর্গকারী বীরশহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে রাত ১২টা থেকেই ফুল হাতে ছুটে আসেন বিভিন্ন প্রান্তজনরা। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে শ্রদ্ধা অবনত প্রাণের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। শহিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ছুটে আসা বিভিন্ন এলাকার রাজনৈতিক সংগঠনে মিশে গেছে সাধারণ মানুষের পদচারণা। ঠিক যেন মানুষে মানুষে এক হয়ে বাঙালির অস্তিত্ব রূপ নিয়েছে জনস্রোতে। এ স্রোত বইছে শহিদবেদীর দিকে।
বুয়েটের পলাশি প্রাঙ্গণ থেকে শহিদ মিনারের মূল গেট পর্যন্ত শ্রদ্ধা জানাতে আসা মানুষদের পদচারণায় ঠাঁসা। নেই তিল ঠাঁয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতাকর্মী ও সদস্যরা ব্যানার-ফেস্টুনে শহিদের উদ্দেশে লেখা বাণী হাতে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে শহিদবেদীতে প্রবেশের আগে তল্লাশির কারণে এগিয়ে যাওয়ার গতি থেমে যাচ্ছে। এতে সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ অপেক্ষার জট।
ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মাহবুব আলম সারাবাংলাকে বলেন, নিরাপত্তা তল্লাশির কারণে ভিড় বাড়ছে এটা ঠিক। তবে এটা করা ছাড়া আমাদের অন্য কোনো উপায় নেই। যেকোনো মূল্যে নিরাপত্তার সর্বোচ্চটা নিশ্চিত করতে কাজ করছে আমাদের সকল সদস্যরা। বিশেষ করে অনেকে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে চলে এসেছে। তাদেরকে বেশি তল্লাশি করতে হচ্ছে। যদিও আগে থেকেই ঘোষণা দেওয়া ছিল কোনো ধরনের ব্যাগ বহন করে শহিদবেদীতে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। কিন্ত অনেকে তা মানেনি।
পুলিশ উপ-পরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, নির্দেশনা আছে ৫ জনের বেশি প্রবেশ করতে পারবে না। কিন্তু সকাল থেকে যত সময় গড়াচ্ছে ততই এ নিয়ম ভাঙছে শ্রদ্ধা জানাতে আসা ব্যক্তিরা। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি তা নিয়ন্ত্রণ করার।
পলাশির মোড় পার হয়ে একটু পুর্ব দিকে এগিয়েছে খিলগাঁয়ের ১ নং ওয়ার্ড যুবলীগের ব্যানার হাতে নিয়ে এগিয়ে একটি দল। তাদের দলে থাকা যুবলীগ কর্মী মো. আসাদুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, সকাল নয়টায় গেট দিয়ে তল্লাশি শেষে প্রবেশ করেছি। এখন পৌনে ১০টা। অর্ধেক পথও এগুতো পারিনি। হয়তো আরও ঘন্টাখানেক লাগবে শহিদ মিনারে পৌঁছাতে। তবে এটাতে কোনো কষ্ট হচ্ছে না আমাদের। আজ কোনো কষ্ট নেই। ভালোই লাগছে। মনে হচ্ছে একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছি কাঙ্খিত সেই জায়গায়। যেখানে পৌঁছাতে পারলে মনে স্বস্তি ফিরবে।
রিমন বলেন, আজকে আমরা নিজ থেকে আসছি। আমরা তো চাইলে করোনার ভয়ে নাও আসতে পারতাম। তাতে তো কোনো সমস্যা হতো না। কিন্তু বাংলা ভাষা বিশ্বের কাছে স্বীকৃত ভাষা। যাদের রক্তের বিনিময়ে ভাষা পেয়েছি তাদের শ্রদ্ধা জানাতে একটা দিন কি মন উজাড় করে দিতে পারি না?
তিনি বলেন, ভেবেছিলাম স্বাস্থ্যবিধি মানা হবে। তবে এখানে এসে দেখা গেল আমি সচেতন হয়েও মানতে পারিনি। কারণ সব মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। সবাই যাচ্ছি শহিদ মিনারের দিকে। এটাই ভাবতে ভালো লাগে।
আওয়ামী লীগ, বিএনপি, বাসদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা স্মৃতি সংসদ, বাংলাদেশ স্কাউটস, বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি, যুবদল, তথ্য মন্ত্রণালয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এরইমধ্যে শ্রদ্ধা জানিয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন সংগঠনের মধ্যে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বঙ্গবন্ধু পরিষদ, ফায়ার ফাইটিং ইকুইপমেন্ট ওনার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটি, মাইক্রোকেডিট রেগুলেটরি অথরিটি, জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম), বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশের ওয়াকার্স পার্টি, আনসার ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়েছে।
সারাবাংলা/ইএইচটি/এসএইচ/এএম