জানেন কি, পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন ভাষার নাম?
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২০:২৭
পৃথিবীতে এমন এক সময় ছিল, যখন মানুষের মুখের ভাষা ছিল না। ইশারায় ভাবের আদান-প্রদান করতেন মানুষ। বর্তমানে আমরা যে ভাষায় কথা বলি তার উৎপত্তি কয়েক হাজার বছর আগে। ভাষাবিদদের অনেক গবেষণায় পুরনো অনেক ভাষার খোঁজ মিলেছে। আবার এখনো সারাবিশ্বে এমন ভাষা ব্যবহার হয়েছে যার অস্তিত্ব ছিল ৫ হাজার বছর আগেও। চলুন জেনে নেওয়া যাক পৃথিবীর দশটি প্রাচীন ভাষা সম্পর্কে।
আর্মেনিয়ান ভাষা
ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর অংশ এই ভাষায় কথা বলেন আর্মেনিয়ার মানুষ। এই ভাষা যে কতটা প্রাচীন, তা পঞ্চম শতাব্দীতে লেখা বাইবেলগুলোতে প্রমাণ পাওয়া যায়। খ্রিষ্টপূর্ব ৪৫০ সালে এই ভাষার উৎপত্তি। বর্তমানে পাঁচ শতাংশ মানুষ এই ভাষায় কথা বলে।
মেসোপটেমিয়া ও ককাসের মধ্যবর্তী উপত্যকা এবং কৃষ্ণসাগরের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকার মানুষ এই ভাষায় কথা বলেন। এ অঞ্চলের দেশগুলো হলো- আর্মেনিয়া, জর্জিয়া ও আজারবাইজান। আর্মেনিয়া প্রজাতন্ত্রের দাফতরিক ভাষা এটি।
কোরিয়ান ভাষা
মানুষের মনের ভাব প্রকাশে কোরিয়ান ভাষা ব্যবহার হয়ে আসছে খ্রিষ্টপূর্ব ৬০০ সাল থেকে। বর্তমানে পৃথিবীর ৮ কোটি মানুষ এই ভাষায় কথা বলেন। একসময় চীনারা কোরিয়ায় বসতি স্থাপন করেছিল। তাই কোরিয়ান ভাষায় চাইনিজ ভাষার অনেক প্রভাব রয়েছে।
আরবি ভাষা
আরবি ভাষা অন্যতম প্রাচীন একটি ভাষা। বর্তমানে প্রচলিত আরবি ও হিব্রু ভাষায় প্রাচীন আরবি ভাষার অনেক প্রভাব রয়েছে। এটি একসময় আর্মেনিয়া প্রজাতন্ত্রের দাফতরিক ভাষা ছিল। খ্রিস্টের জন্মের ১ হাজার বছর আগে এই ভাষার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। বর্তমানে ইরাক, ইরান, সিরিয়া, ইসরাইল, লেবানন ও আধুনিক রোমে এই ভাষায় কথা বলেন স্থানীয়রা।
চাইনিজ ভাষা
পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি মানুষ এই ভাষায় কথা বলেন। পূর্ব এশিয়ার কিছু দেশ ও চীনের মানুষ এই ভাষায় কথা বলেন। চীনা-তিব্বতি ভাষা পরিবারের অন্তর্ভুক্ত এটি। চাইনিজ ভাষাকে ‘ম্যান্ডেরিন’ ভাষা বলা হয় যা খ্রিস্টের জন্মের ১২ শ বছর আগের ভাষা এটি। বর্তমানে চীনের ১২০ কোটি মানুষ এই ভাষায় কথা বলেন।
গ্রিক ভাষা
ইউরোপের সবচেয়ে প্রাচীন ভাষা গ্রিক। খ্রিস্টের জন্মের ১৪৫০ বছর আগে থেকেই এই ভাষায় কথা বলেন মানুষ। বর্তমানে এই ভাষাটি গ্রিস, আলবেনিয়া ও সাইপ্রাসে এই ভাষায় কথা বলেন স্থানীয়রা। এখনো ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ এই ভাষায় কথা বলেন।
মিশরীয় ভাষা
মিশরের সবচেয়ে পরনো ভাষা এটি। আফ্রো-এশিয়ান ভাষাগোষ্ঠীর মিশরীয় ভাষাটি এখনো নিজস্ব সত্তা বজায় রেখেছে।
হিব্রু ভাষা
প্রায় তিন হাজার বছর পুরনো হিব্রু ভাষা। বর্তমানে এটি ইসরাইলের দাফ্তরিক ভাষা। এই ভাষাটি একসময় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। ইসরাইলের জনগণ এটিকে পুণরুদ্ধার করে।
লাতিন ভাষা
প্রাচীন রোম সাম্রাজ্য ও প্রাচীন রোমান ধর্মের সরকারি ভাষা ছিল লাতিন। বর্তমানে এটি ভ্যাটিকান সিটি ও রোমান ক্যাথলিক চার্চের দাফতরিক ভাষা এটি। সংস্কৃতের মতো এটিও একটি শাস্ত্রীয় ভাষা। খ্রিস্টধর্মের আধিপত্যের কারণে মধ্যযুগীয় ও প্রাক-আধুনিক যুগে লাতিন ভাষা ছিল পুরো ইউরোপের আন্তর্জাতিক ভাষা। তাই ধর্ম, বিজ্ঞান, উচ্চতর সাহিত্য, দর্শন এবং গণিতের সব ধরনের বই এই ভাষাতেই লেখা হয়েছিল।
তামিল ভাষা
পৃথিবীর পুরনো ভাষাগুলোর একটি তামিল ভাষা। পাঁচ হাজার বছর আগেও এই ভাষার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। বর্তমানে ৭.৭ কোটি মানুষ তামিল ভাষায় কথা বলেন। ভারত, শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়াতে স্থানীয়রা এই ভাষায় কথা বলেন।
সংস্কৃত ভাষা
সংস্কৃতকে বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন ভাষা। এই ভাষাকে দেবভাষাও বলা হয়। ইউরোপের সব ভাষায় সংস্কৃতের প্রভাব পাওয়া যায়। বিশ্বের সব বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংস্কৃতকে সবচেয়ে প্রাচীন ভাষা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ধরে নেওয়া হয় পৃথিবীর প্রায় সব ভাষাই কোন না কোনভাবে সংস্কৃত থেকে উৎপত্তি হয়েছে। খ্রিস্টের জন্মের প্রায় ৫ হাজার বছর আগে থেকে মানুষ সংস্কৃত ভাষা ব্যবহার করছে এবং এখনো এটি ভারতের দাফতরিক ভাষা হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
সারাবাংলা/এসএসএস