সূর্যমুখী ফুলে ভরেছে জমি, নেমেছে উৎসুক জনতার ঢল
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৬:৫৩
মেহেরপুর: চারিদিকে হলুদে একাকার। মাঝ দিয়ে মেঠো পথ যেন চোখ ধাঁধানো মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য। এই দৃশ্যের সৌন্দর্য আরেকটু বাড়িয়েছে রাস্তার দুই পাশের নারিকেল গাছের সারি। এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেখা মিলবে মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি বিএডিসি ফার্মে। এই সৌন্দর্য অবলোকন করতে প্রতিদিনই আসছে হাজারও দর্শনার্থী। বীজের চাহিদা মেটানোর জন্য সূর্যমুখীর চাষ করেছে মেহেরপুরের আমঝুপি তৈল ও বীজ উৎপাদন খামারসহ স্থানীয় চাষীরা। সেখানে বীজ উৎপাদনে ২১ বিঘা জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে। তাই সূর্যমুখী ফুলে ভরে গেছে জমি।
মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের পাশে আমঝুপি বীজ উৎপাদন খামারে সূর্যমুখী ফুলের হাসি সব বয়সী মানুষের নজর কেড়েছে। আর সেই নজরকাড়া ফুলের মধ্যে কেউ সেলফি, কেউ স্বজন নিয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ছবি তুলতে ভিড় করছেন। কেউ যেন ফুল না ছেড়ে সেজন্য লোকবল নিয়োগ করতে হয়েছে খামার কর্তৃপক্ষকে।
সূর্যমুখী ফুলের ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হলে গত একমাস ধরে থেকে সেখানে উপচে পড়ছে মানুষের ভিড়। ২০ থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরের মানুষ মাইক্রোবাস-কার, মোটরসাইকেলে করে ছুটে আসছেন। যুবক-যুবতীদের সামলাতে কাহিল হতে হচ্ছে খামারের লোকজনকে। অনেকেই গাছ ভেঙে জমির মাঝে চলে যাচ্ছে ছবি তুলতে। তাতে গাছের ক্ষতি হলো কিনা তা দেখছে না এসব দর্শনার্থীরা।
শহর ও গ্রাম থেকে স্বামী সন্তান নিয়ে ঘুরতে আসা গৃহবধূসহ অনেকে সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফেসবুকে ফুলের দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয়ে ছবি তুলতে এসেছেন তারা। এখানে এসে সংসারের ভারে ক্লান্ত মনটা ভরে গেছে বলেও জানান তারা। ফুলে-ফুলে ভরপুর আমঝুপি বীজ উৎপাদনের খামারটি বিনোদনের জায়গায় পরিণত হয়েছে।
ছবি তুলতে আসা সাগরিকা সরকার জানান, জন্মের পর থেকে এ পর্যন্ত এমন মাঠজুড়ে সূর্যমুখী ফুল দেখিনি। স্মৃতিতে ধরে রাখতে এখানে ছবি তুলতে এসেছি সবান্ধবে।
আমঝুপির মেয়ে তৌহিদা আব্দুল্লাহ ২৭ বছর আগে গিয়েছিলেন পাকিস্তানে। দীর্ঘ সময় পর দেশে এসে আমঝুপি ফার্মে বেড়াতে এসেছেন। ছেলে আব্দুল্লাহ এবং মেয়ে আয়েশাও তার সঙ্গে ছিল। অস্পষ্ট বাংলা আর উর্দু মিশিয়ে মেয়ে আয়েশা জানান, পাকিস্তানে এই ধরনের সূর্যমুখীর বাগান নেই। এটা খুবই সুন্দর দৃশ্য। আমার বেশ ভালো লাগছে।
চুয়াডাঙ্গার ভালাইপুরের আব্দুর রাজ্জাক। পেশায় স্কুল শিক্ষক। দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে বেড়াতে এসেছেন আমঝুপি ফার্মে। অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন, সত্যিই অসাধারণ। ফেসবুকে আমঝুপি ফার্মের এই হলুদাবরণ দেখে নিজেরও ইচ্ছে হলো দেখার। তাই পরিবার নিয়ে চলে এলাম।
মেহেরপুর শহরের লিটন সরকার ও সুমনা সরকার এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, আমি এর আগে এতো বড় সূর্যমুখীর বাগান দেখিনি। সেই সঙ্গে পাশের সরিষার ক্ষেত সৌন্দর্যকে দ্বিগুণ করেছে। নিজের এলাকায় এতো সুন্দর দৃশ্য না দেখে কি আর থাকা যায়। তাই পরিবারসহ এসেছি।
আমঝুপি বীজ উৎপাদন খামারের কেয়ারটেকার আমিরুল ইসলাম জানান, ফুল ফোটার পর ফেসবুকে ভাইরাল হলে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। কাউকে আটকানো যাচ্ছে না। খামারের মুল গেটে তালা লাগানোর পরও বিভিন্ন দিক দিয়ে মানুষ ভেতরে প্রবেশ করছে। বাধ্য হয়ে গেট খুলে দিয়ে লাঠি হাতে জমির মধ্যে আসা প্রতিরোধ করতে হচ্ছে।
খামারের উপ-পরিচালক মামুনুর রসিদ জানান, দেশে ভোজ্য তেলের চাহিদা মেটানো জন্য সূর্যমূখী বীজের জন্য খামারে প্রতিবছরই কমবেশি সুর্যমুখীর চাষ করা হয়। এবার ২১ বিঘা জমিতে চাষ করা হয়েছে। মাঠজুড়ে ফুলে ভরে যাওয়াতে দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এখন সব শ্রেণির মানুষ ছবি তোলার জন্য ভিড় করছে। মানুষের উপস্থিতি ভালো লাগছে। কিন্তু কিছু নারী-পুরুষ গাছ দুমড়ে-মুচড়ে ভেতরে গিয়ে ছবি তুলছে। যা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। লোকবল দিয়েও জমির মাঝে যাওয়া ঠেকানো যাচ্ছে না।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যানুযায়ী, মেহেরপুরের মাটি অত্যন্ত উর্বর হওয়ায় এ বছরে বেশির ভাগ জমিতে সূর্যমুখী চাষের অপার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। চাষীরা এই ফসল চাষ করলে তেল উৎপাদনে দেশের ভোজ্য তেলের চাহিদা অনেকাংশে মেটানো সম্ভব।
সারাবাংলা/এনএস