নকশায় পরিবর্তন, সংশোধনী আসছে জয়িতা টাওয়ার প্রকল্পে
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৮:২৬
ঢাকা: সুবিধাবঞ্চিত নারী উদ্যোক্তাদের বিকাশের জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় তৈরি হচ্ছে জয়িতা টাওয়ার। প্রকল্পটির কাজ শুরু হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই টাওয়ারের নকশায় ব্যাপক পরিবর্তনের পরামর্শ দিয়েছেন। প্রকল্পটির বেশকিছু অঙ্গ সংযোজন-বিয়োজন নিয়েও পরামর্শ রয়েছে তার। ফলে দরপত্র আহ্বান হলেও নতুন নকশার জয়িতা টাওয়ার নির্মাণের জন্য সেই দরপত্র নতুন করে আহ্বান করতে হবে। এ পরিস্থিতিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন বাড়তি সময়, তাতে বাড়বে খরচও। এ কারণেই ‘জয়িতা টাওয়ার নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনীর প্রস্তাব করা হচ্ছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, জয়িতা টাওয়ারে একটি সিনে কমপ্লেক্স তৈরির অংশ অন্তর্ভুক্ত ছিল। সংশোধনী প্রস্তাবে এই অংশটি বাদ পড়ছে। তার বদলে যুক্ত হচ্ছে মাল্টিপারপাস হল। অন্যদিকে এই টাওয়ারে সুইমিং পুল নির্মাণের প্রস্তাব থাকলেও সেটি নিয়ে প্রশ্ন তুলছে পরিকল্পনা কমিশন। সম্প্রতি প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় এ বিষয়গুলো উঠে এসেছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত ২ বছরে এই প্রকল্পটির বিভিন্ন খাতে ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ২০ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। সেটি মোট বরাদ্দের ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। প্রকল্পটির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন, পরিকল্পনা ও পরিসংখ্যান বিভাগের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শে টাওয়ারের ডিজাইন পরিবর্তন করা হয়েছে। যে কারণে টাওয়ারটি নির্মাণের কাজ নতুন করে শুরু করতে হবে। এছাড়া কিছু নতুন কার্যক্রম যোগ করা হয়েছে। ভবন তৈরিতে দরপত্র আহ্বান করা হলেও এসব কারণে তা বাতিল করা হয়। তবে এখন সংশোধন হলে আর সমস্যা হবে না বলেই আশা করছি।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, ভৌত অবকাঠামোগত সুবিধাসহ জয়িতা ফাউন্ডেশনের সদর দফতর নির্মাণ এবং সুবিধাবঞ্চিত নারী উদ্যোক্তাদের জন্য নারীবান্ধব বিপণন কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য এই জয়িতা টাওয়ার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। মূল প্রকল্পটি ২০১৮ সালে এপ্রিল মাস থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য ছিল। পরে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ব্যয় না বাড়িয়েই ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। কিন্তু এই সময়েও প্রকল্প বাস্তবায়নে অগ্রগতি না থাকায় এখন ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
এছাড়া প্রকল্পের মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ১৫৪ কোটি ২৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। সেখান থেকে ১৯ কোটি ৪৪ লাখ ৪২ হাজার টাকা বাড়িয়ে মোট ১৭৩ কোটি ৬৯ লাখ ১৭ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে ব্যয় বাড়ছে ১১ দশমিক ১৯ শতাংশ।
প্রকল্পটি সংশোধনের কারণ হিসেবে পিইসি সভার কার্যপত্রে বলা হয়, ভবন নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ২০১৯ সালের ২৬ মে অনুষ্ঠিত জয়িতার বোর্ড অব গভর্নরসের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেটি বাতিল করা হয়। ভবনটির নকশা সংশোধনের সিদ্ধান্ত দেওয়া হয় ওই সভায়। পরে গত বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নির্মিতব্য ভবনের নকশা বিষয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার আলোকে ভবনের নকশায় ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়।
পিইসি সভার কার্যপত্রের তথ্য বলছে, এক্ষেত্রে ভবনে সিনে কমপ্লেক্স বাদ দিয়ে একটি মাল্টিপারপাস হল রাখা হয়েছে। ডরমেটরির পরিবর্তে বিশ্রাম কক্ষ, টাওয়ারের তিন দিকে বারান্দা এবং প্রবশপথে বাগান সমৃদ্ধ সবুজ বেস্টনীর মাধ্যমে সুশোভিত করা হবে। কেন্দ্রীয় শীতাতপ যন্ত্র থাকবে না। এছাড়া ভবনে একটি ল্যান্ডিং লেভেলসহ পাঁচটি বেজমেন্টের পরিবর্তে দু’টি বেইজমেন্ট থাকবে। এছাড়া আরও বিভিন্ন কারণে প্রকল্পটি সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
পিইসি সভার কার্যপত্রে আরও বলা হয়েছে, মূল প্রকল্পটি ২০১৮ সালে অনুমোদন হলেও পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ২০১৬ সালে। এছাড়া পরামর্শক ফি ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা করার যৌক্তিকতা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। বিভিন্ন সভার সম্মানি বাবদ ৩৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে, যা অনেক বেশি বলে মনে করছে কমিশন। এই খরচ যৌক্তিকভাবে কমাতে বলা হয়েছে। জয়িতা ফাউন্ডেশনের মূল কার্যালয়ের ভাড়া প্রস্তাবিত প্রকল্পে অন্তর্ভুক্তি নিয়েও আলোচনা করা যেতে পারে বলে জানানো হয়েছে।
সারাবাংলা/জেজে/টিআর
জয়িতা টাওয়ার প্রকল্প নকশা পরিবর্তন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়