Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘ভ্যাকসিন পামু ক্যামনে? এইড্যা তো এমপি-মন্ত্রীগো জন্য’

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৯:১৯

ফাইল ছবি: কড়াইল বস্তি

ঢাকা: করোনার ভ্যাকসিন দেশে আসার পর এরই মধ্যে তা প্রয়োগ শুরু হয়েছে। কিন্তু এই ভ্যাকসিন যে দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য তা বস্তিবাসী জানে না। তাদের দাবি, করোনার ভ্যাকসিন যদি বাধ্যতামূলক নিতেই হয় তাহলে তারা সেটি কীভাবে পাবে তা জানে না। এর জন্য সরকারকে উপায় খুঁজে বের করতে বলছেন তারা।

মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মহাখালী কড়াইল বস্তির বেশকয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় সারাবাংলার এই প্রতিবেদকের। তাদেরই একজন বস্তির এরশাদ নগর অংশের সারিনা বেগম। রাস্তায় তার একটি মুদি দোকান রয়েছে। সেই দোকানে বসেই তার সঙ্গে কথা হয়। ভ্যাকসিনর বিষয়ে জানতে চাইলে সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ভ্যাকসিন পামু ক্যামনে? এইড্যা তো এমপি-মন্ত্রীগো জন্য। ভ্যাকসিন বাইর হইছে হুনছি। তয় দ্যাশে ভ্যাকসিন আইছে এইড্যা হুনি নাই।’

বিজ্ঞাপন

সারিনা বলতে থাকেন, ‘করোনার ভ্যাকসিন হগ্গলের জন্য যে আসছে হেইড্যা আপনার কাছ থে জানলাম। ভ্যাকসিন কিনতে কি ট্যাকা লাগব? নাকি এমনিতে পাওন যাইব? এইড্যা ক্যামনে পাওন যাইব তা তো জানি না।’

বস্তির কেউ ভ্যাকসিন নিয়েছে কিনা?- জানতে চাইলে সারিনা বলেন, ‘তা জানা নাই। তয় গত এক বছরে বস্তিতে করোনা রোগী দেহি নাই। আর কেউ ভ্যাকসিন নিছে কিনা হেইড্যাও জানি না। বস্তির কেউ ভ্যাকসিন পাইলে তো হগ্গলেই জানতো। ভ্যাকসিন নিয়ে বস্তিবাসীর মাথা ব্যথা নাই।’

কড়াইল বস্তির আমতলা অংশে বাস করেন মিলন হোসেন। ভ্যাকসিন নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘করোনার ভ্যাকসিন যে পামু হেইড্যাই তো জানি না। আমরা বস্তির মানুষ, আমগো জন্য ভ্যাকসিন আসছে হেইড্যাও কেউ কয় নাই। তয় ভ্যাকসিন যে আসছে হেই খবর জানি। হুনছি এসব ভ্যাকসিন, সাংবাদিক, ডাক্তার, এমপি-মন্ত্রী, বড়লোকগো জন্য।’

বিজ্ঞাপন

মিলন আরও বলেন, ‘আমাগো ভ্যাকসিন দিলে তো কেউ না কেউ মাইকিং করতো। বাচ্চাগো ভ্যাকসিন দেওয়ার সময় তো মাইকিং করে। করোনায় এরকম কিছু দেহি নাই, হুনিউ নাই। ভ্যাকসিন দেওন লাগলে দিমু। তয় এইড্যা নিয়া কেউ মাথা ঘামায় না। কাউন্সিলরও ভ্যাকসিন নিয়া কিছু জানায়নি।’

কড়াইল বস্তির বনানী অংশে পরিবার নিয়ে বাস করেন আকবর আলী। তার সঙ্গে কথা হয় একটি চায়ের দোকানে। সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘মেলা মানুষ যে ভ্যাকসিন নিচ্ছে তা টিভিতে দেখছি। কিন্তু ক্যামনে নিচ্ছে তা জানি না। এইড্যা নিয়া আমাগো কেউ কিছু জানায়নি। আমার জানা মতে, বস্তির কেউ ভ্যাকসিন নেয় নাই।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ভ্যাকসিন হগলেই নিতে চায়। ভ্যাকসিন নেবেন না এমন মানুষ নাই। তয় কেউ বলে, ভ্যাকসিন নিতে অনেক টাকা লাগবে; আবার কেউ বলে এমনিতেই পাওয়া যাবে। বস্তিবাসীর লোকগুলার তালিকা একটা সেন্টারে ভ্যাকসিন দিলে ভালা অয়।’

বস্তির অন্যান্য বাসিন্দারাও ভ্যাকসিনর বিষয়ে প্রায় একই কথা বলেন। তাদের একটাই চাওয়া, ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য নাম নিবন্ধন করতে সহজ পন্থা অবলম্বন করতে হবে। মাইকিং করে কোনো সেন্টারে নিয়ে যেতে হবে।

এসব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার লাইন ডিরেক্টর ও মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও সিটি করপোরেশনের মেয়রদের সঙ্গে বৈঠকের চেষ্টা করছি। সেইসঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গেও এ বিষয়ে একটি বৈঠকের পরিকল্পনা রয়েছে। সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার পক্ষ থেকে যদি সহযোগিতা করা হয় তাহলে প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ ও বস্তিবাসীদের জন্য ভ্যাকসিন নিবন্ধনের কাজটি এগিয়ে নেওয়া সহজ হবে।’

তিনি বলেন, ‘এছাড়াও আমরা কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। তারা যদি এগিয়ে আসে তাহলে এই নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ হবে। এর বাইরে পোস্টার ও মাইকিংসহ লিফলেট বিতরণ করে সকলকে ভ্যাকসিন গ্রহণের বিষয়টি জানানোর কাজ অব্যাহত রেখেছি।’

সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম

এমপি-মন্ত্রী কড়াইল বস্তি ভ্যাকসিন মহাখালী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর