শতভাগ বিশুদ্ধ পানি পাবে গ্রামের মানুষ, খরচ ৯ হাজার কোটি টাকা
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৭:০৯
ঢাকা: গ্রামের মানুষের জন্যও শতভাগ নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে চায় সরকার। সে জন্য প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিরাপদ পানি সরবরাহ নামে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দেশের গ্রামগুলো শতভাগ নিরাপদ পানি ব্যবহারের আওতায় আসবে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ প্রকল্প সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন ও মনিটরিংয়ে একটা অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে। এই অ্যাপের মাধ্যমে প্রকল্পের অগ্রগতি তদারকি করা যাবে।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সুত্রে জানা গেছে, সারাদেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ বৃদ্ধির মাধ্যমে জনগণের স্বাস্থ্য ও জীবন মান উন্নয়নের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
পাঁচবছর মেয়াদী এ প্রকল্প ২০২০ সালের ৭ জানুয়ারি একনেক বৈঠকে অনুমোদন পায়। এরপর ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রশাসনিক অনুমোদনের পর কাজ শুরু হলেও করোনার কারণে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই। তবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন যেভাবে এখন কাজ এগিয়ে চলছে তাতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করা যাবে।
সূত্রে জানা গেছে, এই প্রকল্পে অগভীর নলকূপ ( ব্যাস ১ দশমিক ৫ ইঞ্চি) ৯০ হাজার ৬৩৬টি, গভীর নলকূপ এক লাখ ২৩ হাজার ৮৭৭টি, সাবমার্সিবল পাম্প ও জলাধারসহ অগভীর নলকূপ ( ৩ ইঞ্চি ব্যাস) ২ লাখ ৬ হাজার ৬৬৪টি, সাব মার্সিবল পাম্প ও জলাধারসহ গভীর নলকূপ (সাড়ে ৪ ইঞ্চি ব্যাস) এক লাখ ৭০ হাজার ২২২ টি, রিংওয়েল ৩ হাজার ৩৭৯ টি, রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং ইউনিট ৩ হাজার ২১০ টি, রুরাল পাইপড ওয়াটার সাপ্লাই স্কিম ৪৯১ টি, আর্সেনিক আয়রন রিমোভ্যাল প্ল্যান্ট (ভ্যাসেল টাইপ) ২ লাখ ৯ হাজার ৫৭০ টি, সোলার পিএসএফ ৩২০ টি এবং কমিউনিটিভিত্তিক পানি সরবরাহ ইউনিট ৮ হাজার ৮৩৮ টি স্থাপন করা হবে। আর এ কাজে ব্যয় হবে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প এটি। কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। কাজের অগ্রগতি মনিটর করা হচ্ছে ডিজিটাল পদ্ধতিতে। সেখানে ব্যবহার করা হচ্ছে অ্যাপ।
প্রকল্প পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী তুষার মোহন সাধু খান বলেন, ‘এ প্রকল্প বাস্তবায়নে দেশের ১২ উপজেলায় অফিস ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। যার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। অন্যান্য কাজও এগিয়ে চলছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে গ্রামের মানুষ নিরাপদ পানি যেমন পাবে। পানিবাহিত রোগ কমে আসবে। মানুষকে নিরাপদ পানি ব্যবহারে সচেতনও করা যাবে।’
জাতীয় নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন নীতিমালা ১৯৯৮ অনুযায়ী গ্রামাঞ্চলে নলকূপের সংখ্যা বাড়ানোর মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে প্রতিটি নলকূপের জন্য ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০৫ থেকে ৫০ জনে নামিয়ে আনা। বর্তমানে ৮৭ জন মানুষ ১টি নলকূপ ব্যবহার করে। সেখান থেকে ৫০ জনে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, নিরাপদ পানি সরবরাহ সহজ কাজ নয়। এতে বহুমুখী চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কারণ ভূগর্ভস্থ ও ভূ- উপরিভাগের দুস্তরেই পানি কমে যাচ্ছে। পাশাপাশি আর্সেনিক ও অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ ভূগর্ভস্ত পানি দূষিত করছে। আর স্থলভাগের পানি নানাভাবে পানি দূষিত হচ্ছে। উপকূলীয় অঞ্চলে অগভীর একুইফার (ভূগর্ভস্থ সিক্ত শিলাস্তর) এলাকায় লবণাক্ততা, দুর্গম অঞ্চলে শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় নিরাপদ পানি সহজে সরবরাহ কঠিন।
এর বাইরে বিশুদ্ধ ও নিরাপদ পানি সরবরাহে সরকার দেশের ৫২ জেলায় পানি পরীক্ষাগার স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জানা গেছে, দেশের অধিকাংশ এলাকায় বিশুদ্ধ পানির স্বল্পতা রয়েছে। পরীক্ষা করে নিরাপদ পানি সরবরাহ করা এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর এসব পানি পরীক্ষাগার নির্মাণ করবে। পানি পরীক্ষাগার নেই এমন ৫২ জেলায় একটি করে নতুন পরীক্ষাগার নির্মাণ করা হবে। এরমধ্যে ঢাকা বিভাগের ১১ টি জেলা নরসিংদী, শরীয়তপুর, নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, ফরিদপুর এবং গোপালগঞ্জ। চট্টগ্রামের নয় জেলায় পানি পরীক্ষাগার নির্মাণ করা হবে। এগুলো ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং খাগড়াছড়ি।
আরও আছে রাজশাহী বিভাগের ছয় জেলা। এগুলো হলো সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নাটোর, জয়পুরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং নওগাঁ। খুলনা বিভাগের আট জেলায় পানি পরীক্ষাগার নির্মাণ হবে। সেগুলো হলো, যশোর, সাতক্ষীরা, মেহেরপুর, নড়াইল, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, মাগুরা, বাগেরহাট। ময়মনসিংহ বিভাগের তিন জেলা শেরপুর, জামালপুর এবং নেত্রকোনা। বরিশাল বিভাগের ৫ জেলা ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা এবং ভোলা। সিলেট বিভাগের তিন জেলা মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ এবং হবিগঞ্জ। রংপুর বিভাগের সাত জেলা দিনাজপুর, পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, নীলফামারী, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও এবং কুড়িগ্রাম। নিরাপদ পানি সরবরাহের সুযোগ তৈরি হলে এ বিষয়ে জনগণকে সচেতন করা সহজ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে করে পানিবাহিতসহ নানা রোগ থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন।
সারাবাংলা/জেআর/একে