‘ধর্মীয় আলোচনায় মুখরোচক কথাবার্তা কাম্য নয়’
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৯:১৮
চট্টগ্রাম ব্যুরো: মুখরোচক আলোচনার অপসংস্কৃতির কারণে বাংলাদেশে দ্বীনি শিক্ষা এগিয়ে যেতে পারছে না বলে মনে করছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর নাসিরাবাদে একটি কমিউনিটি সেন্টারে মাদরাসা শিক্ষকদের সংগঠন ‘জমিয়াতুল মোদারেছীন’-এর জেলা ও মহানগর শাখার উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় উপমন্ত্রী একথা বলেন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ এবং মহান একুশ স্মরণে এ সভার আয়োজন করে সংগঠনটি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে দ্বীনি শিক্ষায় গবেষণার ওপর জোর দিয়ে উপমন্ত্রী নওফেল বলেন, ‘ইসলামি দর্শনের গবেষণায় বিশ্বের অনেক মুসলিম রাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে অনেক এগিয়ে গেছে। কিন্তু আমাদের দেশে শুধু মাদরাসা বলব না, সকল পর্যায়ে উচ্চশিক্ষায় উচ্চতর গবেষণার অনেক কমতি আছে। আমি মনে করি, এক্ষেত্রে আলেম-ওলামাদের দায়িত্ব নিতে হবে, ইসলামি দর্শনের ওপর উচ্চতর গবেষণা করতে হবে।’
‘যদি আমরা সত্যিকার অর্থে দ্বীনি শিক্ষাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই, তাহলে আমাকে উচ্চতর গবেষণা করতেই হবে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, মানসিকতা উন্নত করতে হবে। আমার চিন্তাকে সেই জায়গায় আমাকে নিয়ে যেতে হবে যে, আমি যেন এগিয়ে যাবার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক না হয়। সেক্ষেত্রে আমাকে সমসাময়িক বিশ্ব পরিস্থিতি এবং এগিয়ে যাবার সঙ্গে তাল মেলাতে হবে। আমার পাশে নিতে হবে বিজ্ঞানীদের, সমাজবিজ্ঞানীদের, অথনীতিবিদকে, প্রযুক্তিবিদকে, রাষ্ট্রবিজ্ঞানীকে।’
‘মনে রাখতে হবে, একজন আলেমের দায়িত্ব সমাজের জন্য একজন রাজনীতিবিদ, একজন বিচারক, একজন চিকিৎসকের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তারা মানুষের মন নিয়ে, হৃদয় নিয়ে কাজ করেন’-বলেন নওফেল।
অহেতুক ভীতি তৈরি না করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে দ্বীন দ্বীনের জায়গায় আছে, এটাকে এই বাংলাদেশ থেকে কেউ নিয়ে যেতে পারবে না। দ্বীনকে সঠিক জায়গায় রেখে, সংঘর্ষ এড়িয়ে চলে কিভাবে সহনশীল সমাজ গড়ে তোলা যাবে, সেই চিন্তা করা দরকার এবং সেই চিন্তার বাস্তবায়ন শুরু করা প্রয়োজন। সহনশীল সমাজ ছাড়া কিন্তু বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে পারবে না।’
দ্বীনি শিক্ষা এগিয়ে না যাবার প্রেক্ষাপট ব্যাখা করে শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সতর্ক থাকতে হবে যে, অশিক্ষিত এবং অনভিজ্ঞ কারও কাছে যাতে দ্বীনি শিক্ষার দায়িত্বটা না যায়। প্রকৃত আলেম-ওলামা যারা এটাকে ধারণ করেন তাদের কাছেই যেন থাকে। আমরা যদি অগ্রসর হতে না পারি, এই না হওয়ার কারণে আমাদের দেশে একটা অপসংস্কৃতি চালু হয়ে গেছে। একজন বসে একটা ব্যাখা দিয়ে দিলেন বাহবা নেওয়ার জন্য। এই ধরনের মনোবৃত্তি রাজনীতির মাঠে হয়ত খাটে, বিনোদনের জন্য খাটে। কিন্তু মুখরোচক আলোচনায় দ্বীনের কোনো উপকার হবে না।’
‘মুখরোচক আলোচনার একটা সংস্কৃতি কিন্তু বাংলাদেশে তৈরি হয়ে গেছে। প্রকৃত আলেম-ওলামারা যদিও এর সাথে সম্পৃক্ত নন। কিন্তু এই মুখরোচক-বিনোদনমূলক কথাবার্তা আমাদের কাম্য নয়। দ্বীন একটা পবিত্র বিষয়, যেটা সবকিছুর ঊর্দ্ধে থাকবে। এটা নিয়ে গবেষণা হবে। গবেষণা, ব্যাখা-বিশ্লেষণের মাধ্যমে সমসাময়িক প্রেক্ষাপটকে ধারণ করে, প্রযুক্তি-অর্থনীতির পলিসি ধারণ করে আলোচনা করতে হবে। শুধুমাত্র বলার জন্য বলা, চিত্তবিনোদনের জন্য কিছু একটা বলে দেওয়া, এটাই আমরা কিন্তু দেখছি। এগুলোর সাথে দ্বীনি শিক্ষার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’
মাদরাসা শিক্ষাকে আরও আধুনিক করার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘মাদরাসার শিক্ষার্থীরা যদি আরবি, ইংরেজি, বাংলায় শিক্ষাটা পেতেন, তাহলে তারা তো রাষ্ট্রে-সমাজে আরও অনেক বেশি ভূমিকা রাখতে পারতেন। সেই জায়গায় আমরা বলছি যে, বিশ্ব পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।’
জমিয়াতুল মোদারেছীন চট্টগ্রাম জেলা শাখার সভাপতি মুহাম্মদ মুখতার আহমেদের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মুহাম্মদ আহসান উল্ল্যাহ এবং সংগঠনের কেন্দ্রীয় মহাসচিব শাব্বির আহমেদ মোমতাজী।
সারাবাংলা/আরডি/এমআই