ঢাকা: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরকে গ্রেফতারের পর তাকে অমানুষিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন তার আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। এ জন্য আদালতের কাছে মামলা করার অনুমতি চান তিনি।
আমলি আদালতে কার্টুনিস্ট কিশোরের রিমান্ড শুনানিতে তিনি ওই বিষয়ে পিটিশন দেন।
শুনানি শেষে আদালত কিশোরের রিমান্ড নামঞ্জুর করেন। পাশাপাশি মামলার বিষয়টির শুনানি তার এখতিয়ারের বাইরে উল্লেখ করে বিচারক শুধু রিমান্ড শুনানি শুনতে চান ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম।
এ সময় আইনজীবী পিটিশনের শুনানি চেয়ে মামলাটি অন্য বিচারকের কাছে বদলির আদেশ প্রার্থনা করেন। এ বিষয়ে দুপুরের পর শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
পিটিশনে আইনজীবী উল্লেখ করেন, কার্টুনিস্ট কিশোরকে র্যাব-৩ এর সদস্যরা গ্রেফতার করেন। আসামিকে লালমাটিয়ার বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর কতিপয় র্যাব সদস্য তাকে অমানুষিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন। যার ফলে তার দুই কানের অভ্যন্তরে এবং বাম পায়ে আঘাত পান। এই নির্যাতনের ঘটনা ২০১৩ সালের নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন মোতাবেক সুনির্দিষ্ট ফৌজদারি অপরাধ।
পরে আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘আসামিকে নির্যাতন করা হয়েছে। র্যাব সদস্যরা নির্যাতন তিনি ঠিকমতো চলা ফেরা করতে পারেন। তার শ্রবণশক্তিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা এই নির্যাতনের আইনি প্রতিকার চাই।’
এর আগে, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পুলিশ পরিদর্শক মো. আফসার আহমেদ গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ৩ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। অপরদিকে কিশোরের পক্ষের আইনজীবী জ্যোর্তিময় বড়ুয়া রিমান্ড বাতিল চেয়ে শুনানি করেন।
জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘কাউকে রিমান্ডে নিতে হলে রিমান্ড শুনানিতে তাকে উপস্থিত হতে হবে। আজকে যে রিমান্ড শুনানি সেখানে আসামিকে পুলিশ হাজির করেনি। এ জন্য তাদের পানিশমেন্ট করা উচিত।’
এই রিমান্ড শুনানি এখতিয়ার বহির্ভূত বলেও মন্তব্য করেন জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।
শুনানি শেষে রিমান্ডের আবেদন নামঞ্জুর করেন আদালত।
সম্প্রতি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মহসীন সর্দার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের হওয়া মামলায় তিনজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। আহমেদ কবির কিশোর ছাড়া চার্জশিটভুক্ত দুই আসামি হলেন রাষ্ট্রচিন্তার ঢাকার সমন্বয়ক দিদারুল ভূঁইয়া ও লেখক মুশতাক আহমেদ। এর মধ্যে কারাবন্দি মুশতাক আহমেদের মৃত্যু হয়েছে গত বৃহস্পতিবার।
এরপর গত ১০ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষ তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর আপত্তি করে পুনরায় তদন্তের আবেদন করেন। এরপর ঢাকার সাইবার ট্রাইবু্নালে আসসামছ জগলুল হোসেন আবেদন মঞ্জুর করে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটকে (সিটিটিসি) তদন্তের নির্দেশ দেন।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি মামলাটি অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা প্রতিবেদন দাখিল না করায় ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন আগামী ১০ মার্চ ধার্য করেন।
জানা গেছে, কার্টুনিস্ট কিশোর তার ‘আমি কিশোর’ ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেশের করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সরকারের ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন সমালোচনামূলক কার্টুন-পোস্টার পোস্ট করেন। মুশতাক তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে কিশোরের সেসব পোস্টের কয়েকটি শেয়ার করতেন। এ সব অভিযোগে মোট ১১ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা করা হয়েছে।