বিএনপি-ছাত্রদল হঠাৎ মারমুখী কেন?— প্রশ্ন পুলিশের
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৮:১১
ঢাকা: সম্প্রতি বিএনপি-ছাত্রদল মারমুখী আচরণ করছে বলে অভিযোগ করেছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা পুলিশ। তবে বিএনপি-ছাত্রদলের কর্মীদেরও দাবি, পুলিশ কোনো ইস্যু ছাড়াই নেতাকর্মীদের ওপর চড়াও হচ্ছে এবং টিয়ারশেল-রাবার বুলেট নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করছে।
রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে ছাত্রদলের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় ছাত্রদলের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হন। আহত হন পুলিশেরও বেশ কয়েকজন সদস্য।
ডিএমপির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার কাছে ছাত্রদল-পুলিশ সংঘর্ষের বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘পুলিশ তো আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় যেকোনো জায়গায় দায়িত্ব পালন করবে; এটাই স্বাভাবিক। তবে বিএনপি-ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা কেন পুলিশকে মারতে যাবে। এটা অন্যায়, এটা আইন পরিপন্থী।’
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা যেভাবে ইট-পাটকেল ও লাঠিসোটা নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা করেছে তাতে এটা উপলব্ধি করতে পারছি যে, ওরা পরিকল্পিতভাবেই এটি করেছে। জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভেতরে এত বাঁশের লাঠি কোথা থেকে এলো? এত ইটপাটকেল কোথা থেকে এলো?’
তিনি বলেন, ‘ভেবে পাচ্ছি না যে, বিএনপি-ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা হঠাৎ মারমুখী কেন? এত উগ্র আচরণ কেন তাদের? নাকি কেন্দ্রীয়ভাবে পুলিশকে মারার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঘটনা যাই ঘটুক, সব বিষয়ে তদন্ত চলছে। নিশ্চয়ই বের হবে আসলে কি পরিকল্পনা ছিল। এর আগেও বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।’
এর আগে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বিএনপি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের সড়ক বন্ধ করে জিয়ার খেতাব বাতিলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। ওই ঘটনায় শাহবাগ থানায় মামলা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই নতুন করে আবার ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ।’
এদিকে সংঘর্ষের পর ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ কমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের বার বার বলা হচ্ছিল যে, রাস্তা ছেড়ে দিয়ে অনুষ্ঠান করতে। কিন্তু তারা তা না শুনে পুলিশের ওপর চড়াও হয়। তারা ইটপাটকেল ছুঁড়তে শুরু করে। এত ইটপাটকেল কোথা থেকে এলো? তার মানে তারা আগে থেকেই এই ইটপাটকেল মজুত করে রেখেছিল। আবার দেখবেন বড় বড় বাঁশ নিয়ে পুলিশের ওপর চড়াও হয়েছে। বাঁশ দিয়ে তারা পুলিশের বেশ কয়েকজনকে আঘাতও করেছে। পুলিশ এর বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ পদক্ষেপ নেবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া আহত পুলিশ সদস্যদের কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।’
বিএনপি-ছাত্রদল হঠাৎ এত মারমুখী কেন? জানতে বিএনপির কয়েকজন নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে তারা এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। ছাত্রদলের একজন সিনিয়র নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বিএনপিকে তো কোনো প্রোগ্রামই করতে দেয় না পুলিশ। জিয়ার খেতাব বাতিলের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ছাত্রদল প্রতিবাদ সভা করতে গিয়েছিল। অনুমতিও নেওয়া ছিল। এরপরেও পুলিশ কোনো কথা বলার আগেই লাঠিচার্জ শুরু করেছে। নেতাকর্মীরা বহুদিন থেকে ধৈর্য্য ধরে আছে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশের হামলাকে প্রতিহত করতে চেয়েছে। মামলা-হামলা দিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের সবসময় দমিয়ে রাখতে চেয়েছে। কিন্তু বিএনপির নেতাকর্মীরা দমবার নয়। তারা সবকিছু মাড়িয়ে এগিয়ে যাবে।’
এদিকে সংঘর্ষের পর জাতীয় প্রেস ক্লাব এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রচুর পরিমাণে ইটপাটকেলের টুকরো পড়ে আছে। এছাড়া লাঠি ও কাঠের টুকরো পড়ে থাকতে দেখা গেছে। তবে সেখানে বিএনপি ছাত্রদলের কোনো নেতাকর্মীদের কাউকে দেখা না গেলেও পুলিশ সদস্যদের প্রস্তুত থাকতে দেখা যায়। সাথে রায়টকার ও এপিসি কার মোতায়েন করা ছিল।
সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম